২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩: অ্যামনেস্টির অবস্থান
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল আইনের সংশোধন করেসরকার বিচারাধীন ব্যক্তিদের মৃতু্যদণ্ডের দিকে ঠেলে দিতে পারে∏অ্যামনেস্টিইন্টারন্যাশনালের এই বিবৃতির আইনি ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনেকরি। যেকোনো আইনের সংশোধন বিচার-প্রক্রিয়ারই অংশ। আদালতের মাধ্যমে ওইআইনের প্রয়োগ হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কিছু করণীয় থাকে না। সরকার আইনপ্রণয়ন করতে পারে মাত্র। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব দেশেই আইনের সংশোধনবিচারব্যবস্থার চলমান প্রক্রিয়া। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিতনুরেমবার্গ ট্রাইবু্যনাল আইন পঁাচবার এবং যুগোস্লাভিয়ার মানবতাবিরোধীট্রাইবু্যনাল আইন ৪৬ বার সংশোধন করা হয়েছিল।
আসামি ও বাদীপক্ষেরযেকোনো রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অধিকার আন্তর্জাতিক মান এবং স্বচ্ছবিচার-প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি। এর আগে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিকঅপরাধ ট্রাইবু্যনাল আইনে রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করতে পারত। সরকারশুধু আসামির খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারত। শাসি্ত বৃদ্ধির জন্য আপিলেরসুযোগ ছিল না। এই আইন সংশোধনের মাধ্যমে সরকার এবং এজাহারকারীও আপিলবিভাগে আপিল করতে পারবে। অর্থাৎ এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাদী ও আসামিপক্ষট্রাইবু্যনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ লাভের অধিকারী হয়েছে।অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার স্বচ্ছএবং এর আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার জন্য প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিয়ে আসছে।অথচ এই সংশোধনীর সমালোচনা করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালদুর্ভাগ্যজনকভাবে নিজেদের স্ববিরোধী বক্তব্যের পরিচয় দিয়েছে।
আমরা মনেকরি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার প্রতিঅনাস্থা সৃষ্টি করতে পারে। সেই সঙ্গে তাদের বক্তব্য বিচার বিভাগের প্রতিসরকারের প্রভাব থাকারও ইঙ্গিত বহন করে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি হলো, ট্রাইবু্যনাল আইনে সর্বোচ্চ শাসি্ত মৃতু্যদণ্ডের বিধান আগে থেকেই আছে।বর্তমান সংশোধনীর মাধ্যমে শুধু অপর্যাপ্ত শাসি্তর বিরুদ্ধে সরকারের আপিলকরার অধিকার দেওয়া হয়েছে। আসামির শাসি্তর পরিমাণে কোনো প্রকার পরিবর্তনআনা হয়নি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের সর্বোচ্চ শাসি্তর দাবিতে শাহবাগেআন্দোলন শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালআইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়∏ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এই বক্তব্য ঠিক।পাশাপাশি তাদের এ-ও জানা আছে যে পৃথিবীর সব দেশেই জনগণের দাবি এবংপ্রয়োজনেই আইন প্রণয়ন হয়ে আসছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধট্রাইবু্যনাল আইনের সংশোধন এর ব্যতিক্রম কোনো কিছু নয়।
এ ক্ষেত্রেআমাদের মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভূমিকারউলে্লখ আশা করি অপ্রাসঙ্গিক হবে না। তাদের ১৯৭১-৭২ সালের বার্ষিকপ্রতিবেদনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদেরএদেশীয় দোসরদের গণহত্যা, নারী নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের বিষয়ে কোনোবক্তব্য নেই। অথচ দালাল আইনে গ্রপ্তোরকৃত ব্যক্তিদের বিচার যেনআন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে করা হয়, তার জন্য বাংলাদেশ সরকারকেঅনুরোধ করেছিল অ্যামনেস্টি।
লুবনা খোন্দকার ও সামিউল কবির
মানবাধিকার আইনজীবী, ঢাকা।
আমাদের দায়িত্ব
গত২৪ জানুয়ারি মানিকগঞ্জে চলন্ত বাসে তরুণীকে ধর্ষণের মতো বীভৎস ঘটনারপাশাপাশি ফেরিওয়ালা হান্নান মিয়া তঁাকে উদ্ধার করে একটি মহৎ মানবিক ঘটনারজন্ম দিয়েছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তঁাকে নিয়ে একাধিকবারলেখালেখিসহ টিভি চ্যানেলগুলোতে তঁার সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে। কিন্তুতঁাকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ করে রাখতে এবংদেশবাসীকে বেশি বেশি এ ধরনের মহৎ কাজে উদ্বুদ্ধ করতে আমাদের আরও কিছুপদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পদক্ষেপগুলো হতে পারে: রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, বিশেষ পুরস্কার। বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ারজন্য যথাযথ কতর্ৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
সামিনা আখতার, বেতারপাড়া, রংপুর।