ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক(১৯ ফেব্রুয়ারী): জানুয়ারিতে ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকটে দাম বাড়লেও এখন তা মিলগেটে ও পাইকারি বাজারে কিছুটা কমেছে। বর্তমানে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় দাম কমেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। মিলগেটে দাম কমলেও খুচরা বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। খুচরা বাজারে আগের চড়া দামেই সয়াবিন, পাম ও সুপার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমে যাওয়ায় পরিশোধন কোম্পানিগুলো দাম কিছুটা কমিয়েছে। তবে আগের চড়া দামই এখনও খুচরা ব্যবসায়ীরা ধরে রেখেছেন।
ভোজ্যতেলের নিয়মিত বাজার মনিটরিং কমিটির তদারকির অভাব রয়েছে বলে মনে করেন ভোক্তারা। কয়েক মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম থাকলেও মিলমালিক, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কারণে চড়া দামে বিক্রি করছেন। তাদের নানা কৌশলে বাড়তি মুনাফা করায় বিপাকে পড়ছেন ভোক্তারা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা যায়, খুচরা বাজারে বর্তমানে প্রতি লিটার পরিশোধিত খোলা সয়াবিন তেল ১২০ থেকে ১২৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যার মূল্য পাইকারিতে ১০৯-১১০ টাকা এবং মিলগেটে ১০১ থেকে ১০৩ টাকা। এ হিসেবে মিলগেট থেকে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটারে দামের ব্যবধান প্রায় ২০ টাকা। এদিকে কয়েক মাস ধরে মিলগেটে পরিশোধিত খোলা সয়াবিনের চেয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল চড়া দমে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে।
বোতলজাত ভোজ্যতেলে লিটারে ১২ থেকে ১৫ টাকা বাড়তি খরচের কথা দাবি করছে এসব প্রতিষ্ঠান। এ হিসাবেও প্রতি লিটারে ১৬ থেকে ১৯ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) হিসাবে, এক লিটারের একটি প্লাস্টিক বা পেট বোতলে খরচ হচ্ছে সর্বোচ্চ ৭ টাকা। এ হিসাবে মিলগেটের পরিশোধিত সয়াবিন তেলের চেয়ে প্রতি লিটারে ২৪ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হয় বোতলজাত তেল। তাছাড়া, পাম অয়েল ও সুপার পাম অয়েলের দাম কমলেও তা খুচরায় আগের চড়া দামে বিক্রি হয়। গতকাল প্রতি লিটার সুপার পাম অয়েল ৮৫-৮৬ টাকা ও পাম অয়েল ৭৬-৭৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ভোজ্যতেলের চড়া দামের বিষয়ে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা সমকালকে বলেন, বর্তমানে বাজারে থাকা সয়াবিন তেল প্রতি কুইন্টাল এক হাজার ১৯০ ডলারে আমদানি করা হয়েছে। তাছাড়া, প্রতি লিটার বোতলজাত করতে ১৫ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এ হিসেবে বোতলজাত সয়াবিনের দাম ঠিক আছে। বর্তমান সময়ে বোতলজাত তেলের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
এস এ গ্রুপের ব্যবস্থাপক (ব্র্যান্ড) জাহাঙ্গীর হাবিব সমকালকে বলেন, এখনও ভোজ্যতেলের দাম কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম পরিবর্তন হলে তখন কমতে পারে।
গতকাল রাজধানীর মৌলভীবাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ আদেশ (এসও) ট্রেডিংয়ের দাম কমেছে। প্রতি কুইন্টাল সয়াবিন তেলের এসও আগে ৪৫০০-৪৬০০ টাকায় লেনদেন হলেও গতকাল তা ৪১২২-৪২৪০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। সুপার পাম ২৯১২-৩০৮৮ টাকায় লেনদেন হয়, যা এ মাসের শুরুতে ৩২৪০-৩৩৫০ টাকায় লেনদেন হয়। এ ছাড়া, পাম অয়েল ২৮২০ থেকে ২৮৮৫ টাকায় লেনদেন হয়েছে। এতে প্রতি কুইন্টাল তেলের দাম ৩০০-৪০০ টাকা কমলেও খুচরা বাজারে দাম কমেনি।
রাজধানীর মৌলভীবাজারের লাকী ট্রেডিং এজেন্সির পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী সমকালকে বলেন, বর্তমানে পরিশোধিত খোলা ভোজ্যতেলের দাম মিলগেটে ও পাইকারিতে অনেক কমেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা চড়া দামে বিক্রি করলে সংশ্লিষ্টদের বাজার তদারকি করা উচিত। তিনি বলেন, একই কোম্পানির পরিশোধিত খোলা সয়াবিন তেল মিলগেটে ১০৩ টাকায় বিক্রি হয়, যা বোতলজাত করে খুচরায় ১৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা ও বোতলজাত সয়াবিনের গুণগত মানে কোনো পার্থক্য নেই।কোম্পানিগুলোর ব্র্যান্ড ইমেজের কারণে বোতলজাত করে চড়া দামে বিক্রি হয়।
নিউজরুম্