১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩: পপ গায়িকা শাকিরা। সঙ্গীতের পাশাপাশি করেন নাচের উপস্থাপনাও। করেন সমাজসেবামূলক কাজও। বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন সুশিক্ষাকে। নানামুখী গুণের কারণে তার খ্যাতি এখন সার বিশ্বে। বিশ্বখ্যাত এ গায়িকার জন্ম ১৯৭৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কলম্বিয়ায়। শাকিরা বলেন, আমার যখন প্রায় ১৫ বছর বয়স, তখন স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে একটি কোর্স করি ইতিহাসের ওপর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে আর কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা (অ্যাকাডেমিক) গ্রহণের সুযোগ হয়নি। তবে প্রায় ৩৬ বছরবয়সী এ নারী চান, সারা বিশ্ব থেকে দূর হোক ুধা, দারিদ্র্য, শোষণ, বঞ্চনা ইত্যাদি। আর এ জন্য প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
শাকিরা আরো বলেন, আমার বয়স যখন প্রায় ১৮ বছর, তখন আমি একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তুলি কলাম্বিয়ায়। নাম ‘বেয়ারফুট’ বা খালিপায়ে। এখানে কাজ করেন আরো অনেকে। আমরা সেখানে কাজ করে যাচ্ছি প্রায় ১৫ বছর ধরে। আমরা বেশি গুরুত্ব দিই স্কুল প্রতিষ্ঠার দিকেই। স্কুল শুধু গড়লেই হয় না, তা এমন স্থানে প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যাতে সফলতা বেশি আসে।আমরা স্কুল চালু করেছি চরম দারিদ্র্য ও সহিংসতাপূর্ণ কিছু জায়গায়।আমরা পরিবারগুলোর উন্নতির লক্ষ্যেও কাজ করছি। বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় ভেঙে যাওয়া পরিবারগুলোকে। আমরা সহায়তা দিচ্ছি প্রায় ৩০ হাজার পরিবারকে। আর তা করা হচ্ছে আমাদেরই গড়ে তোলা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা আছে এমন ছয়টি বিদ্যালয়ের মাধ্যমে। সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে এসব পরিবারের শিশুদের লেখাপড়া করার। এতে অভিভাবকেরা খুবই খুশি।
আরো বলা হয়েছে, এসবের পাশাপাশি পুষ্টির ওপরও বেশ জোর দেয়া হয়েছে। কারণ শিক্ষার মতো পুষ্টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে আমাদের বিদ্যালয়গুলোর প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থীকে। এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে রীতিমতো মডেলস্বরূপ। এলাকাগুলোর বিদ্যালয়গুলোকে বলা হচ্ছে নিজ নিজ এলাকার প্রাণকেন্দ্র। এসব থেকে এসংক্রান্ত নানা ধরনের শিক্ষা লাভ করেছি বলেও মন্তব্য করেন শাকিরা। তিনি চিন্তা করেন, দিনে মাত্র দুই ডলার ব্যয় একটি শিশুর জীবনকে কিভাবে বদলে দিতে পারে। কিভাবে ঝরে পড়া থেকে রোধ করা যায়।স্কুল শেষ করে কলেজে যাওয়া শুরু হয়েছে, এমন অনেক শিক্ষার্থী এসব সুযোগ-সুবিধা না পেলে হয়তো যোগ দিত জঙ্গিদলে। এখন আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দেশের মধ্যে পরীক্ষায় পায় সর্বোচ্চ নম্বর। এসবই গর্বের বিষয়।
সমাজের উন্নতির জন্য আমরা কাজ করি সরকারের সাথেও। এসব থেকে এখন সহজে বোঝা যাচ্ছে ‘বেসরকারি উদ্যোগ কতই না গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বেসরকারি উদ্যোগে যখন বিদ্যালয়ের উন্নয়নের কাজ চলে, তখন এগিয়ে আসতে হয় সরকারকেও। এসব কথা বলেছেন শাকিরা ও তার সহকর্মীরা। তারা বলেন, নতুন প্রজন্মকে উদ্যোগী হওয়ার জন্য তাদের ভালো কাজ করতে এবং তার সফলতার জন্য অন্যদের উৎসাহিত করতে হবে।কোনো শিশু যদি না খেয়ে থাকে কিংবা বিদ্যালয়ে যেতে না পারে, তবে এসবের দায়ভার কিন্তু আমাদের ওপরই বর্তায়। সারা বিশ্বে পরিবর্তন বা উন্নতির প্রথম ধাপ মানেই সব শিশুর জন্য শিক্ষার সুযোগ সুনিশ্চিত করা।
উন্নয়নশীল একটি দেশে আমার জন্ম বলেই হয়তো দারিদ্র্য, ুধা ইত্যাদি সমস্যা বেশি দেখতে হচ্ছে আমাকে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অগণিত শিশু তাদের শৈশবেই আটকে যায় ুধা ও দারিদ্র্যের কঠিন দুষ্টচক্রে। বেশির ভাগকেই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে হয় এভাবেই।
আমি বেড়ে উঠেছি দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়ায়। তাই আমি স্বচক্ষে দেখেছি এসবÑ বলেছেন সঙ্গীতশিল্পী ও সমাজসেবী শাকিরা। তিনি আরো বলেন, কলম্বিয়ার বারানকিইলায় বড় হওয়া বা বেড়ে ওঠার দিনগুলোর স্মৃতি মাঝে মধ্যেই ভেসে ওঠে আমার চোখে। উন্নয়নশীল বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, গরিব হয়ে যাদের জন্ম, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের গরিব হয়েই থাকতে হয়। আমি এ ধারণার সাথে একমত নই। কেননা ইচ্ছা, চেষ্টা, সাহস ইত্যাদি সামনের দিকে বা সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যায় মানুষকে। মেধাবী ও প্রতিভাবান অনেক শিশু-কিশোরকে রাস্তায় থাকতে দেখেছি আমি। যাদের দিনরাত কাটে এভাবে, তাদের আবার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভলো কোনো আশা! সোজা কথা, ভবিষ্যৎ বলতে আদৌ কিছু ছিল না তাদের জীবনে। ছোটকালে এসব দেখে মনটা আমার খুবই খারাপ হয়ে যেত। বড় হয়ে বুঝতে পারি, শুধু এসব কেন, সব সমস্যারই সমাধান আছে। ভাগ্য বদলের জন্যই চাই দৃঢ়বিশ্বাস। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ পর্যন্ত শিক্ষার আলো পায়নি ২০ কোটিরও বেশি শিশু। ২০ কোটি শিশু মানেই ২০ কোটি মানুষ। শিশুরাই হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ। এ সম্পদকে কাজে লাগাতেই হবে উন্নতির ক্ষেত্রে। তা ছাড়া সঙ্গীতের মাধ্যমেও শাকিরা সবাইকে সমাজের উন্নয়নে আহ্বান জানান।