প্রকল্প ব্যয় ৪৬.৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি

0
199
Print Friendly, PDF & Email

ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক(১৯ ফেব্রুয়ারী): বাংলাদেশ-ভারত গ্রিড আন্তঃসংযোগ প্রকল্পের সমাপ্তি নিয়ে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হয়েছেআড়াই বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৩১.০৮ শতাংশএকনেক সভায় অনুমোদনের ছয় মাস আগেই দরপত্র আহ্বান করেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকার প্রকল্পটি শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছেউল্টো এখন প্রকল্প ব্যয় ৫০১ কোটি ১৪ লাখ টাকা বা ৪৬.৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং সময় বাড়ানো হয়েছে দুই বছরপ্রকল্পটি এখন ২০১৪ সলের জুনে শেষ করা হবে বলা হলেও এই বর্ধিত সময়েও প্রকল্প শেষ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছেঅস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধিতে কমিশন থেকে আপত্তিও জানানো হয়েছেউন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন না করেই ইতোমধ্যে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছেআবার কাজও করা হয়েছে অনেকখানি

 

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, বিদ্যু বিভাগের আওতায় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন গ্রিড ইন্টারন্যাশনাল বিটুইন বাংলাদেশ (ভেড়ামারা) অ্যান্ড  ইন্ডিয়া (বহরমপুর) প্রজেক্টটি ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুন মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিলকিন্তু সময় মতো কাজ শেষ করতে না পারায় ব্যয় ঠিক রেখেই প্রথমবার ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়কিন্তু এবার বিভিন্ন অংশের ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনেসেই সাথে বাস্তবায়নের সময়ও বাড়ানোর কথা বলা হয় ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত

 

প্রকল্পটির মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৭৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকাএর মধ্যে ছিল সরকারি তহবিলের ২৭৭ কোটি ২৪ লাখ, বাস্তবায়নকারী সংস্থার ১০১ কোটি ৪৫ লাখ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ ৭০০ কোটি টাকাকিন্তু সেই ব্যয় ৫০১ কোটি ১৪ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে এক হাজার ৫৭৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সরকারি তহবিলের অংশে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন অংশের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছেযেমন এক হাজার ৫০০ বর্গমিটার ভবন নির্মাণে মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল চার কোটি পাঁচ লাখ টাকাসেখানে প্রস্তাবে ৫০০ বর্গমিটার বাড়িয়ে এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকাএক হাজার ২০০ মিটার অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণে অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৬ লাখ টাকা, সেখানে রাস্তা কমিয়ে ৩১০ মিটার করা হলেও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ২৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকাদুই হাজার ৬২৫ রানিং মিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণে আগের ব্যয় ছিল এক কোটি ৩১ লাখ টাকাবর্তমানে প্রাচীরের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে তিন হাজার ৩০০ মিটার করে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা

 

এ ছাড়া এক হাজার মিটার সারফেস ড্রেন নির্মাণে আগে ব্যয় ছিল ১৮ লাখ টাকাএখন ওই একই দৈর্ঘ্যরে ড্রেন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন কোটি ৫৮ লাখ টাকা৭০০ মিটার ক্যাবল ট্রেন্স নির্মাণে ব্যয় ছিল ৩৩ লাখ, এখন সেটি বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে আট কোটি ৭৫ লাখ টাকাদুটি সেপটিক ট্যাংক সোয়াকওয়ে নির্মাণে ব্যয় ছিল তিন লাখ ২০ হাজার টাকা, বর্তমানে বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে দুই কোটি ৭৩ লাখ টাকাইলেকট্রিফিকেশন অ্যান্ড বাউন্ডারি লাইটিংয়ের ব্যয় ছিল ২০ লাখ টাকা, সেখান থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে দুই কোটি চার লাখ টাকাএ ছাড়া নতুন অংশ হিসেবে প্রস্তাব রয়েছে ফিনিসিং অ্যান্ড গেটস চার কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং ফায়ার ওয়ার্ক ওয়াল ফর কনভারটার ট্রান্সফরমারের জন্য দুই কোটি ৭৩ লাখ টাকাএসব অংশে মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল মোট ১০ কোটি ৮০ লাখ টাকাসেখান থেকে বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ৬৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকাসংশোধনী প্রস্তাবের ওপর গত ১০ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়এতে অহেতুক ব্যয় বাড়ানো হয়েছে বলে মনে হওয়ায় ব্যাখ্যা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়

 

সূত্র জানায়, এ প্রকল্পে আরো কিছু অনিয়ম খুঁজে পায় পরিকল্পনা কমিশনস্পেয়ার পার্টস ক্রয়ে অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছেকিছু অত্যাবশ্যকীয় স্পেয়ার পার্টস যেমন রি-অ্যাক্টর ও বুসিং সার্কিট ব্রেকারের দামও বাড়ানো হয়েছে অস্বাভাবিকভাবেপ্রকল্পের ডিপিপি সংশোধনের আগেই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছেট্রান্সমিশন লাইন ও সাবস্টেশন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ব্যয় ছিল ৪৭৮ কোটি টাকাসেটি বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ৭৪৮ কোটি টাকাডিপিপি সংশোধন না করেই ইতোমধ্যে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে গেছেকাজও করা হয়েছে অনেকখানিএসব অভিযোগ থাকলেও কী কারণে এ প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে তা নিয়েই দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন

 

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য এর কাজকে দুভাগে বিভক্ত করে দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছেস্পেনের কোম্পানি এমএস কোবরা প্রকল্পের সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ পেয়েছেবিষয়টি এডিবির অনুমোদন পেতে লেগেছে তিন মাসআর কোবরার সাথে চুক্তি হওয়া পর্যন্তও সময় লেগেছে চার মাসপ্রকল্পটি শেষ হলে চুক্তি অনুযায়ী প্রথম বছরে ২৫০ মেগাওয়াট আর পরবর্তী সময়ে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যু আমদানি করতে পারবে বাংলাদেশ

 

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলোÑ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যু আদান-প্রদানের লক্ষ্যে গ্রিড আন্তঃসংযোগ নির্মাণ, যাতে উভয় দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করে আর্থসামাজিক উন্নয়ন করা সম্ভব হবেপ্রকল্পের আওতায় ভেড়ামারা (বাংলাদেশ)-বহরমপুর (ভারত) ৪০০ কেভি গ্রিড ইন্টারকানেকশন-৩০ কিলোমিটার এবং ভেড়ামারায় ঈশ্বরদী-খুলনা (দক্ষিণ) ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইনে লুপ-ইন-লুপ আউট-৫ কি.মি. সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, ভেড়ামারায় ৫০০ মেগাওয়াট এইচভিডিসি ব্যাক টু ব্যাক ৪০০/২৩০ কেভি সুইচিং স্টেশন স্থাপন, ৫০০ মেগাওয়াট এইচভিডিসি ব্যাক টু ব্যাক (৪০০/২৩০ কেভি) টার্মিনাল স্থাপন, ঈশ্বরদী-খুলনা দক্ষিণ ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইন থেকে লুপ ইন ও লুপ আউটের জন্য চারটি ২৩০ কেভি লাইন-বে নির্মাণ এবং ন্যূনতম দুইটি ২৩০ কেভি বে নির্মাণ করা হবে

 

বিদ্যুসঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ সরকার ভারত থেকে বিদ্যু আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেতারই ধারাবাহিকতায় বিদ্যু বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল আলোচনার জন্য গত ১৮ থেকে ২২ নভেম্বর ভারত সফর করেআর গত ২২ থেকে ২৬ নভেম্বর ভারতের বিদ্যু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে প্রকল্পসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় আলোচনা শেষে একটি মিনিটস অব মিটিং (এমওএম) এ স্বাক্ষর করেওই এমওএম অনুযায়ী প্রকল্পে উচ্চ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রণয়নের লক্ষ্যে উভয় দেশের চারজন করে প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়কারিগরি কমিটি থেকে পাঠানো ডিপিআরের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য প্রকল্পটির ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়

 

 

 

নিউজরুম্

 

শেয়ার করুন