শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর : একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের ১৫তম দিন শুরু হয়েছে। ঠাণ্ডা বাতাসকে উপেক্ষা করে রাত থেকে চলছে নানা স্লোগান। আন্দোলনকারীরা যেন ঠাণ্ডাকে পাত্তেই দিতে চাইছেন না।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়। এসময় সবাই দাঁড়িয়ে যান। এতে যোগ দেন সারারাত জেগে থাকা মানুষেরা। এছাড়া চত্বরে চলে আসতে শুরু করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
রাতভর স্লোগান দেওয়া কণ্ঠগুলোতে দৃশ্যত: ক্লান্তি দেখা দিলেও সেখান থেকে ঝরছে অগ্নিঝরা সব স্লোগান। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি নিয়ে তাদের কণ্ঠে ঘৃণা আগের মতই। ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে ভোর বেলায় চলে আসছেন অনেকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিলন জানান, স্লোগানের তালে গলা মেলাতে যেয়ে কখন যে ভোর হয়ে এসেছে বুঝতেই পারিনি। শীতও ধারে কাছে আসতে পারেনি।
অনেকে কুয়াশা ঠেকাতে মাথায় পলিথিন বেঁধে আন্দোলনের সঙ্গে থেকেছেন। তবু ঘরে ফেরেননি শীত বা কুয়াশার কাছে হার মেনে।
এ বিষয়ে মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘‘আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা অনেক কষ্ট করে, নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যুদ্ধ করে এদেশকে স্বাধীন করেছে। তাদের কাছে শীত ছিলনা, বর্ষা ছিলনা, নাওয়া-খাওয়া ছিলনা। আমাদের এ কষ্ট তাদের কাছে কিছুই না। গত প্রায় সাতদিন ধরে আমি এখানে আছি। থাকবো শেষ পর্যন্ত।’’
ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দিক থেকে দলে দলে যোগ দিতে থাকে আরো মানুষ। সকালের আলো ফুটতে না ফুটতেই রাতের চেয়ে দ্বিগুণ মানুষ জমে যায় শাহবাগে। অনেকে হাতে করে শাহবাগের রাত জাগা পাখিদের জন্য খাবার, পানি নিয়ে আসে।
কথা হয় পুরান ঢাকা থেকে আসা রুবেলের সঙ্গে। তিনি কয়েকব্যাগ খাবার আর পানি হাতে শাহবাগে আসেন। জানান, ভোর রাতের দিকে চলে গিয়েছিলেন তিনি। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসে সকালের নাস্তা খেতেই সামান্য খাবার হাতে করে এনেছেন।
তাকে দেখিযে হাসতে হাসতে আরেক আন্দোলনকারী দিদার বলেন, ‘‘এত ভালবাসা আর উদ্যম যেখানে সেখানে শীত আর কুয়াশা আমাদের কতই বা রোধ করতে পারবে, বলুন!’’
জামায়াতে ইসলামীর নেতা কাদের মোল্লাসহ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের ঢেউ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে প্রবাসেও। নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছে।প্রতিদিনই যেনো বাড়ছে এ গণজোয়ারে আসা মানুষের সংখ্যা।
কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায় প্রত্যাখ্যান করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শাহবাগ মোড়ে এই বিক্ষোভের সূচনা করে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম। এরপর বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ আন্দোলনে যোগ দেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় মহাসমাবেশ। ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় জাগরণ সমাবেশ। উভয় সমাবেশেই যোগ দেয় লাখো জনতা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চলবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৩