১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩।।
একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করা। সে জন্যই প্রতিটি দেশের সরকারের উচিত এমনসব নীতি, সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা, যাতে রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠার কোনো সুযোগ না পায়।
কিন্তু আমাদের সরকার বোধ হয় বিষয়টি বিবেচনায় নিতে নারাজ। ফলে শুরু থেকেই বিরোধী দলের সাথে কোনো ধরনের সমঝোতামূলক আচরণ না করে সরকার বরং বিরোধী দলকে দমন-পীড়নের পথটিই বেছে নিয়েছে। সেই সাথে জনগণের চাওয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এতে করে দেশের অর্থনীতিতে চাপের সৃষ্টি হয়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে বিনিয়োগ।
গতকাল নয়া দিগন্ত এক খবরে জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে আমদানি হয়েছে এক হাজার ৬০৬ কোটি ডলারের পণ্য। আগের বছরের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৭২১ কোটি ডলার। অর্থাৎ আমদানিব্যয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ কমেছে। আমদানি কমে যাওয়ায় আপাতদৃষ্টিতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয়েছে মনে হলেও এ প্রবণতাকে অর্থনীতিবিদেরা দেখছেন শিল্পের জন্য ‘অশনি সঙ্কেত’ হিসেবে। কারণ মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ায় শিল্পোৎপাদন কমে যাবে, বিআইডিএস গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখতের মতে, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামালের আমদানি কমায় আমদানিব্যয় কম হচ্ছে।
ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের সাথে কথা বলে পত্রিকাটি জানিয়েছে, শেষ সরকারের বছরে এসে রাজনীতিতে যে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হতে পারছেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে চলমান আন্দোলন, আগামী বছরের শুরুতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট কত দূর গড়ায়, তা নিয়ে কোনো ধারণাই করা সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে বিনিয়োগের প্রশ্ন তো আসেই না, উল্টো এরই মধ্যে বিনিয়োগ করা অর্থ ফিরে পাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না কোনো মহল থেকে। মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ার এটিই মূল কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শিল্পোদ্যোক্তারা জানান, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি সরকারের মনোযোগের অভাবে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। ১০ কর্মঘণ্টার সাত ঘণ্টাই বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে শিল্পখাতের উদ্যোক্তাদের। দিনের বেশির ভাগ সময় গ্যাসের চাপ থাকে না। তখন বিদ্যুতের পরিবর্তে ডিজেল কিংবা ফার্নেস অয়েল দিয়ে জেনারেটরের সাহায্যে কারখানা চালু রাখতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এখন চরম সঙ্কট চলছে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করে স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। সেই সাথে শিল্পসংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো বিশেষ করে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সমস্যার অবিলম্বে সমাধান করা দরকার। নইলে শিল্প খাত ও অর্থনীতিতে বিদ্যমান স্থবিরতা কিছুতেই কাটবে না।