১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩।।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। গত শনিবার ঢাকায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে ১৯৭৪ সালের সীমান্তচুক্তি প্রটোকল বাস্তবায়নের জন্য লোকসভার আগামী অধিবেশনে সংবিধানের সংশোধনী বিল পাস করা হবে। আর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে উভয় দেশের স্বার্থেই স্বাক্ষরিত হবে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। বিরাট এ দেশ আমাদের দেশের তিন দিক ঘিরে রয়েছে। ভারত বরাবরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে দাবি করে থাকে। অথচ তার সাথেই বাংলাদেশের সম্পর্ক সর্বাধিক সঙ্কটপূর্ণ ও জটিল। এ দেশের স্বাধীনতার পর থেকেই ঢাকার প্রতি নয়া দিল্লির আচরণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অন্যায় কর্তৃত্বপরায়ণ ও আধিপত্যকামী বলে জনগণ মনে করে। গঙ্গাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, সীমান্তে হামলা ও হত্যা, বাণিজ্যিক লেনদেন, ট্রানজিট প্রভৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ভারতীয় আচরণকে বাংলাদেশের জনগণ আগ্রাসী হিসেবেই গণ্য করে থাকে।
এই প্রেক্ষাপটে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা না বাড়িয়ে যত শিগগির সম্ভব বিরাজমান সঙ্কটগুলোর কার্যকর, স্থায়ী ও সম্মানজনক সুরাহাই বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে। কিন্তু দেখা যায়, ভারত খোঁড়া অজুহাতে টালবাহানা করে আসছে। এমনকি সম্পাদিত চুক্তিও অনেক সময়ে লঙ্ঘন করতে দ্বিধা করে না। আর বেকায়দায় পড়লে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আশ্বাস দিয়ে সময় পার করে দিতে চায়। এভাবে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে বাস্তবে ভারতই ফায়দা পায় এবং বাংলাদেশের ক্ষতি থাকে অব্যাহত। এবারো ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা আশ্বাসই পেয়েছি। গত শনিবার ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয় তাদের বৈঠককে ‘ফলপ্রসূ ও ইতিবাচক’ বলে দাবি করলেও কার্যত জাতি আশাবাদী হতে পারছে না। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উল্লিখিত দাবি কূটনীতির নিছক গতানুগতিক শব্দমালা বলেই ওয়াকিবহাল মহল মনে করে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো সুরাহার ক্ষেত্রে আমাদের সদিচ্ছার কোনো ঘাটতি নেই।’ বাংলাদেশের জনগণ গত চার দশকে এমন সদিচ্ছার বাস্তবায়ন দেখেছে খুব কমই।
শনিবার সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় মন্ত্রীর সফরসঙ্গী সাংবাদিক, কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার জয়ন্ত ঘোষাল শাহবাগের সমাবেশ এবং জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা সম্পর্কে প্রশ্ন করেন উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। এর জবাব ভারতীয় মন্ত্রী কৌশলে এড়িয়ে বলেন, ‘কোনো মন্তব্য করব না।’ তবে তিনি শাহবাগের সমাবেশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় বলেছেন, সেখানে তরুণেরা তাদের দাবি নিয়ে যেভাবে সমবেত হয়েছেন, এ জন্য তাদের অভিনন্দন জানাই। তাদের প্রতি আমাদের অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।’ তিনি বলেছেন, আমরা ধর্মনিরক্ষে বাংলাদেশ চাই।’
বাংলাদেশের ঘরোয়া ব্যাপারে ভারত অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ করে থাকেবলে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ ও সন্দেহ রয়েছে আগে থেকেই। এর বহু প্রমাণও পাওয়া গেছে বিভিন্ন সময়ে ভারত সরকারের শীর্ষ স্থানীয় দায়িত্বশীলদের অবাঞ্চিত বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গিতে। শাহবাগের সমাবেশ জামায়াত কিংবা এদেশ ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ রাষ্ট্র হবে কি না, এসব বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়। এখানে পক্ষ-বিপক্ষ ও নানা বিতর্ক-মতভেদ রয়েছে। গণতান্ত্রিক সমাজে এটাই স্বাভাবিক ও সঙ্গত।
এ দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে ভারত বা আর কোনো দেশের বিশেষত সরকারি পরিচয়ের কোনো কর্মকর্তার মন্তব্য করা বাঞ্ছনীয় নয়। এতে সে দেশ সম্পর্কে বাংলাদেশের জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে এবং তা সংশ্লিষ্ট কোনো দেশের জন্য কল্যাণকর হবে না।