হুমকির মুখে দেশের বস্ত্র খাত

0
158
Print Friendly, PDF & Email

ফেব্রুয়ারি, ২০১৩: বস্ত্র খাত দেশের একটা সম্ভাবনাময়ী খাতইতোমধ্যে দেশের সুতা ও বস্ত্র দুই খাতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছেকিন্তু বিশাল অঙ্কের এই বিনিয়োগ এখন হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছেএমন আশঙ্কা করছেন দেশীয় টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরাগার্মেন্ট পণ্যের কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশ হিসেবে ঘোষণার জন্য বাংলাদেশকে করা ভারতের এক আহ্বানের পরিপ্রেেিতই টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরা এমন আশঙ্কা করছেন বলে তারা জানিয়েছেন

 

জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) গার্মেন্ট পণ্য রফতানির েেত্র বাংলাদেশকে জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সের (জিএসপি) শর্ত মেনে চলতে হয়ওই শর্তে বলা আছে, ইইউতে পোশাক রফতানি করার জন্য কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশের নাম ঘোষণা করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকেসম্প্রতি আগ্রায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত সফরে যান বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদেরসেখানে ভারতীয় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার সাথে এক বৈঠক হয় তারওই বৈঠকে ভারতীয় মন্ত্রী বাংলাদেশের তৈরী  পোশাক শিল্পের বা গার্মেন্টের কাঁচামালের সরবরাহকারী হিসেবে ভারতের নাম ঘোষণা করার জন্য জি এম কাদেরকে অনুরোধ করেনভারতীয় পত্রিকা বিজনেস লাইন ও দ্য ইকোনমিক টাইমসের অনলাইন সংস্করণ থেকে এ কথা জানা যায়উল্লেখ্য, ইইউর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোয় তৈরী পোশাক রফতানির েেত্র আগে শুধু বাংলাদেশে উপাদিত কাঁচামাল ব্যবহার করা যেতবর্তমানে আমদানিকৃত কাঁচামাল দিয়েও পোশাক প্রস্তুত করে তা রফতানি করার সুযোগ রয়েছে

 

বিজনেস লাইনের খবরে বলা হয়েছে, জিএসপির অধীনে তৈরী পোশাক ও অন্যান্য  টেক্সটাইল পণ্য রফতানির েেত্র কাঁচামালের সরবরাহকারী দেশের নাম ঘোষণা করতে হয়এই শর্তসাপেে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে থাকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভারতের বাণিজ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাটি আরো জানায়, শুধু একবার ভারতকে সরবরাহকারী দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হলে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে রফতানির জন্য প্রস্তুতকৃত গার্মেন্ট পণ্যের কাঁচামাল সহজেই পাবে  যেহেতু জিএসপি শর্তে এ বিষয়ে কোনো বাধা নেই

 

২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে জিএসপির অধীনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত পণ্য রফতানি সুবিধা চালু হয়এরপর দেশীয় টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যানতারা আশঙ্কা করেছিলেন জিএসপির শর্ত শিথিল করা হলে দেশের সুতা ও বস্ত্র খাতে নেমে আসবে মারাত্মক বিপর্যয়কিন্তু সরকার থেকে তখন তাদের আশ্বস্ত করে বলা হয় এ খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবেএ দিকে ভারতীয় মন্ত্রীর আহ্বানের পরিপ্রেেিত বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের তা ইতিবাচকভাবে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে বিজনেস লাইনের প্রকাশিত প্রতিবেদনে

 

রফতানিকারকেরা জানান, সরকার যদি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমাদের তৈরী পোশাক খাত ও বস্ত্র খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবেএকটি দেশের কাছে আমরা আটকা পড়ে যাবোএমনিতেই সরকারের কিছু সঙ্কোচনমূলক নীতির কারণে রফতানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেএমনকি আমদানিও কমেছেবাংলাদেশ ব্যাংক সঙ্কোচনমূলক পলিসি গ্রহণ করেআর তা হলো ঋণপ্রবাহ কমিয়ে দেয়াযেখানে এই ঋণপ্রবাহ ২৮ শতাংশ ছিলতা কমিয়ে ১৬ শতাংশে আনা হয়েছেযে কারণে আমদানি কমেছেলেনদেন কমেছেতিনি বলেন, পুরো বিশ্ববাজারের ৪.৯৬ শতাংশ রফতানি হয় বাংলাদেশ থেকেতাই ওখানে মন্দা হলেও আমাদের রফতানির ক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রভাব পড়ার কথা নয়কিন্তু আমাদের অভ্যন্তরীণ নীতির কারণে যখন আমাদের উপাদন ব্যয় বেড়ে যায় তখন উপাদিত পণ্যমূল্যও বৃদ্ধি পায়যার কারণে অন্যান্য প্রতিযোগী দেশে পণ্যমূল্য  হ্রাস পাওয়ার কারণে আমরা বাজার ধরে রাখতে পারছি না

 

বাংলাদেশের এই খাতের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ পরিপ্রেেিত বাংলাদেশ সরকার যদি ভারতকে তৈরী পোশাক শিল্পের কাঁচামালের সরবরাহকারী দেশ হিসেবে ঘোষণা করে তাহলে দেশের টেক্সটাইল খাত তির সম্মুখীন হবেকারণ বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাত সম্পূর্ণভাবে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেএমনিতেই সুতার জন্য ভারত বাংলাদেশকে প্রায়ই বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেতারা বলছেন, টেক্সটাইল খাতে ইতোমধ্যেই ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ হয়েছেএত দিন সরবরাহকারী দেশের নাম ঘোষণা না করার কারণে পোশাক শিল্পের মালিকেরা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার জন্য দেশে পাদিত সুতা ও কাপড় বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতেনযদি সরবরাহকারী দেশ হিসেবে এখন ভারতের নাম ঘোষণা করা হয় তাহলে তারা সেখান থেকে আমদানি করা সুতা ও কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি করবেন এবং শুল্কমুক্ত সুবিধায় তা ইউরোপীয় ইউনিয়নে রফতানি করতে পারবেনএতে করে বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাত চীন, ভারত, পাকিস্তান প্রভৃতি বড় উপাদনকারী দেশের সাথে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে

 

শেয়ার করুন