‘ফাঁসি হলে ভাইকে বলবো, আমরা দেশকে পুরোপুরি স্বাধীন করে এসেছি ’

0
194
Print Friendly, PDF & Email

শাহবাগ : ‘‘আট ভাই গিয়েছিলাম যুদ্ধে। এক ভাই যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। আরেক জন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের কবল থেকে মুক্তি পেলেও পাকিস্তানের প্রেতাত্মা যুদ্ধাপরাধীরা বেঁচে থাকায় পুরোপুরি স্বাধীনতা পেয়েছিলাম না।

বেঁচে থাকতে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হলে মৃত্যুর পরে ভাইকে বলতে পারবো, আমরা দেশকে পুরোপুরি স্বাধীন করে এসেছি।’’

রোববার সকালে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগ গণজাগরণ চত্বরে চলমান গণআন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করতে এসে বাংলানিউজকে একথা বলেন মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাজ উদ্দিন এবং মো. আব্দুস সালাম। দুই ভাইই মুক্তিযোদ্ধা।

তারা বলেন, ‘‘আমরা যেমন তরুণ বয়সে যুদ্ধে গিয়েছিলাম, এখানে এসে তরুণদের আন্দোলন দেখে সেই কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। তারা যুদ্ধ দেখেননি ঠিকই, কিন্তু আমরা যা করতে পারিনি এই তরুণ প্রজন্ম তা করে দেখিয়েছেন।’’

গণআন্দোলনের সংগঠক ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তারা বলেন, ‘‘রাজীব হত্যাকাণ্ড খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ওরা এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটাবে, এটি ওদের কাছে খুবই স্বাভাবিক বিষয়। রাজাকাররা ১৯৭১ সালেও এভাবেই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় জন্ম হওয়ায় আমরা দেখেছি, বিজয়ের লাভের পরেও এক মাস মোহাম্মদপুর এবং মিরপুরে যুদ্ধ হয়েছিল। মিরপুরে কাদের মোল্লা দেড়শ’ জনকে হত্যা করেছিলেন। তার তৈরি জল্লাদখানাও আমরা দেখেছি। যুদ্ধাপরাধী রাজাকাররা যতোদিন বাংলাদেশে থাকবে, এভাবেই হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাবে।’

 

কাদের মোল্লাসহ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে চলমান গণআন্দোলনের ১৩তম দিন রোববার। গণআন্দোলনের ঢেউ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে প্রবাসেও। নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছেন। প্রতিদিনই বাড়ছে এ গণজোয়ারে আসা মানুষের সংখ্যা।

কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায় প্রত্যাখ্যান করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শাহবাগ মোড়ে এ বিক্ষোভের সূচনা করে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম। এরপর বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ আন্দোলনে যোগ দেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় মহাসমাবেশ। ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় জাগরণ সমাবেশ। উভয় সমাবেশেই যোগ দেন লাখো জনতা। এছাড়া সারা দেশ জুড়ে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩ মিনিটের স্তব্ধতা কর্মসূচি, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার কর্মসূচি।

 

শুক্রবার রাতে ব্লগার রাজীব শিবির ক্যাডারদের হাতে শহীদ হওয়ার পরে গণআন্দোলন আরো বেগবান হয়েছে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই চলবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

  ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৩

শেয়ার করুন