১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩।।
সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ছে। সভা সমাবেশের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার কারণে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ, অসন্তোষ থেকে সহিংসতার ঘটনাগুলো ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ বাড়াবাড়ি রকমের আচরণ করছে। সভা সমাবেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুলি ছোড়া হচ্ছে। এতে অসংখ্য মানুষ হতাহত হচ্ছে। সম্প্রতি কক্সবাজারে জামায়াত নেতা ও বিশিষ্ট আলেম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশ ঠেকাতে পুলিশ সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালালে ঘটনাস্থলে চারজন নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৩০ জনের বেশি। এর আগে বগুড়ায় পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। রাজশাহীতেও একইভাবে গুলির ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীতে সভা সমাবেশ ঠেকাতে পুলিশ প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ছে, ফলে মানুষের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমনকি বিরোধী দলের কর্মীদের খুব কাছে থেকে পায়ে গুলি করার ঘটনাও ঘটেছে।
শুধু বিরোধী দলের সভা সমাবেশ করতে না দেয়ার কারণে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে না, সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটছে। রাজধানীতে একজন স্থপতি ও ব্লগারকে তার বাড়ির সামনে খুন করা হয়েছে। এই ব্লগার শাহবাগকেন্দ্রিক যে আন্দোলন চলছে তার একজন সক্রিয় সদস্য। তাকে কেন এবং কারা হত্যা করল তা দ্রুত উদঘাটন করা প্রয়োজন। কারণ এই হত্যাকাণ্ডকেও রাজনৈতিক দিকে মোড় দেয়ার চেষ্টা চলছে। যে বা যারাই তাকে হত্যা করুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এসব ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। না হলে এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে।
সভা সমাবেশ করতে না দেয়া এবং চাপ প্রয়োগে বিচার প্রভাবিত করার প্রবণতা থেকে দেশে এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সরকারের উচিত রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া এবং বিচারকে স্বাভাবিকভাবে চলতে দেয়া। মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে শুরু থেকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা ও প্রশ্নবিদ্ধ বিচারপ্রক্রিয়ার কারণে দেশে এখন রাজনৈতিক সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করছে।
আমরা মনে করি, সারা দেশে যে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে তা বন্ধ করতে হলে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া দরকার। বিরোধী দলের সভা সমাবেশে পুলিশের বলপ্রয়োগ বন্ধ করা দরকার। মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক কর্মসূচি গুলি চালিয়ে দমন করা যায় না। বরং তা আরো ক্ষোভের সৃষ্টি করে। আমরা আশা করব, সরকার শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করবে।