জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী তৎপরতার শেষ কোথায়?

0
228
Print Friendly, PDF & Email

১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৩।।

শুক্রবার পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত সংবাদে জামায়াত-শিবিরের হামলায় আরও দুটি মৃত্যুর খবর কবি হাসান হাফিজুর রহমানের বিখ্যাত গল্প ‘আরও দুটি মৃত্যু’র কথাই মনে করিয়ে দেয়। তিনি গল্পটি লিখেছিলেন ১৯৫০ সালের দাঙ্গার পটভূমিতে, যেখানে দুজন নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষ সাম্প্রদায়িক শক্তির জিঘাংসার শিকার হন। আর এখানেও একজন সাধারণ ব্যাংক কর্মচারী ও পুলিশ সদস্যকে জীবন দিতে হলো সন্ত্রাসী হামলায়। সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে যতই সাফাই গাওয়া হোক না কেন, তারা এর দায় এড়াতে পারবে না।
গত মঙ্গলবার মতিঝিলে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা অগ্রণী ব্যাংকের সামনে থাকা গাড়ি ভাঙচুর করলে ব্যাংকের কর্মীরা বাধা দেন।

জবাবে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ব্যাংক কর্মচারীদের ওপর চড়াও হন। এতে কর্মচারী জাফর মুন্সী গুরুতর আহত হন এবং গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশের আহত সদস্য বাহাদুর মিয়াও বৃহস্পতিবার ভোররাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী আহূত ৫ ফেব্রুয়ারির হরতালের আগের দিন রাতে উত্তরায় সন্ত্রাসীরা বাসে আগুন দিলে আরেক ব্যাংক কর্মকর্তা মারা যান। জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যত বাড়ছে, মৃত্যুর মিছিল তত দীর্ঘ হচ্ছে। এগুলো দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
এই তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানাচ্ছি সহমর্মিতা। একই সঙ্গে ধিক্কার জানাই সেই রাজনীতিকে, যে রাজনীতি নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়, যে রাজনীতি দেশের সম্পদ ধ্বংস করে, জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা করে ব্যাহত।
জামায়াতে ইসলামী প্রায়শ তাদের কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়ার অভিযোগ আনে। আমরাও মনে করি, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের অধিকার সবার আছে। কিন্তু জামায়াত-শিবির তো এখন কর্মসূচির নামে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে।

তারা তো যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধের দাবি করে দেশের সংবিধান ও বিচারব্যবস্থাকেই অস্বীকার করছে। বিচার করা যাবে না—কোনো সভ্য দেশে এই আবদার তোলার সুযোগ নেই। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা যখন বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছেন, তখন শাহবাগের গণজাগরণ ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে; সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ, অহিংস ও সুশৃঙ্খলভাবে যা পরিচালিত হচ্ছে। এই মৌলবাদী দলের উচিত দেয়ালের ভাষা পড়া। জনস্রোতের বিপরীতে গিয়ে রাজনীতি করা যাবে না।
জাফর মুন্সীসহ তিনজনের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত, দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা।

বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে জাতি মুক্তি পাক, সেটাই শাহবাগের অদম্য তরুণেরা মোমবাতির আলোয় দেশবাসীকে জানিয়ে দিচ্ছেন। যুদ্ধাপরাধের বিচার হতেই হবে। স্বজনহারা এই পরিবারগুলোর প্রতি রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্বের কথাটিও ভুলে গেলে চলবে না।

শেয়ার করুন