পুলিশি অ্যাকশনে আতঙ্কে রাজধানীবাসী জনগণের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাক

0
159
Print Friendly, PDF & Email

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩।।

রাজধানীজুড়ে যেন এখন এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশের বাড়াবাড়িমূলক কার্যক্রম প্রবল ভীতি ছড়াচ্ছে। নিতান্ত প্রয়োজন না থাকলে মানুষ রাস্তায় নামছে না। এ ধরনের অবস্থাকে স্বাভাবিক বলা যায় না। রাজধানীতে এখন প্রায় এক কোটি মানুষের বাস। বিশাল জনগোষ্ঠীর নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। কত দিন এ ধরনের অস্বাভাবিক অবস্থা চলবে? পুলিশের বাড়াবাড়িমূলক আচরণ পরিহার করে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাপনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আন্তরিক উদ্যোগ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, কয়েক দিন ধরেই রাজধানীতে চলছে সংঘর্ষ এবং পুলিশি অ্যাকশন। দিন হলে সংঘর্ষ, আর রাতে পুলিশের ধরপাকড়। প্রতি রাতেই গ্রেফতার হচ্ছেন অনেকে। এর মধ্যে অনেকে রয়েছেন, যারা রাজনীতির সাথে জড়িত নন। তাদের আটক করে পুলিশ বাণিজ্য করে। নিরীহ মানুষদের পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেতে বড়মাপের আর্থিক দণ্ড দিতে হয়। একবার পুলিশের হাতে ধরা পড়লে যতই নিরপরাধীই হোক না কেন, টাকা ছাড়া মুক্তি মেলে না। নানা শ্রেণিপেশার মানুষের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আর দিনে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার শহরে ত্রাসের সৃষ্টি করছে। এজন্য রাস্তাঘাট, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, ব্যাংক-বীমা প্রায় অনেকটাই জনশূন্য। জীবিকার তাগিদে যে বা যারাই বের হয়েছেন তারাও উদ্বিগ্ন। কখন বাসায় ফিরবেন সেই তাড়া সবার মধ্যে।

কয়েক দিন ধরেই রাজধানীজুড়ে জামায়াত-শিবিরের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষ এবং গুলির ঘটনা ঘটছে। কোনো কোনো সময় পুলিশ বিনা কারণেই ফাঁকা গুলিবর্ষণ করছে। প্রয়োজনের তুলনায় পুলিশের শক্তি প্রয়োগ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের মাত্রা অনেক বেশি। গত বুধবার রাজধানীজুড়েই এমন ঘটনা ঘটেছে। ওই দিন পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় বিনা কারণে গুলি ছুড়েছে। কোনো কোনো এলাকার মানুষের সকালের ঘুম ভাঙে পুলিশের গুলির শব্দে। ওই দিনও রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন এলাকায় জামায়াত-শিবিরের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। জামায়াত-শিবির কয়েকটি স্থানে মিছিল বের করার চেষ্টা চালালে পুলিশ তাদের ওপর অ্যাকশন চালায়। তারা যে ক’মিনিট মিছিল করে সে মিছিলকে কেন্দ্র করে এ ধরনের তাণ্ডব চালানো বৈধ হতে পারে না। একইভাবে জামায়াত-শিবির ইস্যুটি ব্যবহার করে গত কয়েক দিন ধরে রাত হলেই পুলিশ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ছাত্রাবাস, মেস ও বাসাবাড়িতে হানা দিয়ে ব্যাপক ধরপাকড় চালায়। আটক করা হয় শত শত ব্যক্তিকে। গত তিন দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। অনেককে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাদের বেশির ভাগ রাজনৈতিক কর্মী নয়।

রাজনৈতিক নানা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর এক কোটির ওপর মানুষের জীবনকে শঙ্কা ও ভীতির মধ্যে ফেলে দেয়া কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। ভীতি ছড়িয়ে পুলিশ যখন বাণিজ্য চালায়, সেটা আরো বড় অন্যায়। আমরা মনে করি, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পুলিশ কোনোভাবে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করতে পারে না। সরকারের এ ব্যাপারে মনোযোগী হয়ে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

শেয়ার করুন