১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩:এক জায়গায় এক নামে দুজন থাকলে এই অসুবিধা। একজনকে ডাক দিলে আরেকজন জবাব দেয়।একজন দোষ করলে একই নামের অন্যজনের ঘাড়ে সেই দোষ গিয়ে বর্তায়। আর কথায় তো বলেই, নামে নামে যমে টানে। দুই লাকিকে এ যাত্রা পারলৌকিক যমে না টানলেও প্রোডাকশন ফ্লোরের ইহজাগতিক যম পিএম স্যার ছাড়লেন না। বরং নানা রকম রঙ্গ-রসিকতা করে লাইন চিফ, সুপারভাইজার, ফ্লোর ম্যানেজার সবাইকে শুনিয়ে বললেন, ‘এ তো সহজ ব্যাপার, শরীয়তপুরের লাকি ধলা আর শেরপুরের লাকি কালা।একজন কালো লাকি, আরেকজন ফরসা লাকি।’
ব্যস, কালো ও ফরসা লাকি চালু হয়ে গেল। ফরসা লাকি তার গায়ের রঙের উজ্জ্বলতার এমন প্রকাশ্য প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিতে হয়তো ভেতরে ভেতরে আনন্দিতই হয়, আর কালো লাকি স্বভাবতই নিজের কালো চামড়া নিয়ে এই সত্য কিন্তু নিষ্ঠুর বিবৃতি শুনে হীনম্মন্যতায় ভেতরে ভেতরে আরও খানিক কুঁকড়ে যায়। তার এই কুঁকড়ে যাওয়ার আরেকটি গোপন কারণ লুকানো আছে নিজের কামিজের ভেতরে। কালো লাকি আপাতত সেটা ভুলে দ্রুত মেশিন চালিয়ে সাদা-কালো চেক শার্টের অগণিত কলার সেলাই করতে থাকে। বখরম ভরা, দুই পাশে তিন কোনাবিশিষ্ট লম্বাটে শার্টের কলার, কলারের স্তূপ, কলারের পাহাড়। কলার সেলাই শেষ হলে হাত, হাত শেষ হলে পকেট, পকেট শেষ হলে বোতাম। হাত চলতেই থাকবে, মেশিন চলতেই থাকবে—সুইং মেশিন, ফ্লাট লক মেশিন, ওভার লক মেশিন। দিন পার হবে, ওভারটাইম চলবে, বাটন হোল হবে, বাটন স্টিচ মেশিন চলবে, বেতনের দিনও শুধু পেছাতে থাকবে, তবে একসময় না একসময় তো বেতন হবেই, হাতে আসবে সাত/ আটটা আধময়লা ৫০০ টাকার নোট।
লাকি এতেই খুশি। গ্রামের মিয়াবাড়িতে লাত্থি-গুঁতো খেয়ে পেটেভাতে কাজ করার চেয়ে, শহুরে বিবি-সাহেবদের অসুখী অন্ধকার বগলের নিচে মুখ ঝামটা সহ্য করে নিশ্চুপে মাথা গুঁজে থাকার চেয়ে, বুড়া সাহেবের লোভের লালা এড়িয়ে ইন্দুরের মতো পালিয়ে বাঁচার চেয়ে এই গার্মেন ভালো। টিফিন ক্যারিয়ারে ভাত নিয়া ভোর সকালে বড় দালানের অপিসে যাই, চাকরি করি, বেতন পাই, খরচা করি। লিপিস্টিক কিনি, সাবান কিনি, ফিয়ার এন লাবলি কিনি, মুখে ঘইষ্যা ঘইষ্যা লাগাই, মনে হয় মুখের রংটা একটু ফিরছে। ‘এই যদি হয়, যদি আস্তে আস্তে দুই লাকির মধ্যে তফাত মিলায়া যায়, তখন কী হবে? পিএম স্যার, সুপারভাইজার স্যার আমাদের আলাদা করে চিনবে কেমনে? তাদের তো তখন ভারি বিপদ হবে।’
আয়রন সেকশনের সুন্দর চেহারার তমিজ তখন হয়তো কালো লাকির মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকাতে গিয়ে হাতের কাপড়ই পুড়িয়ে ফেলবে। ফ্লোর ম্যানেজার তখন ইচ্ছেমতো গালিগালাজ করবে, জরিমানা করবে, বেতন কাটবে। এই বেতন কাটাটাই মহা আতঙ্ক ওদের। এবসেন্ট করলে বেতন কাটা যায়, লেট করলে বেতন কাটা যায়, মনে হয় বেতন কাটল নাতো, গায়ের মাংসটাই ছুরি দিয়া কাইট্টা নিল, কয়টা টাকাই বা বেতন, তা-ও কাটলে আর থাকে কী? মেশিন মেকানিক বিল্লালের তো মাথা গরম, তার আবার কী জানি কী সংগঠনের সাথে খাতিরও আছে, অন্যায় অবিচার দেখলেই হে বিরাট চেঁচামেচি শুরু করে, জোয়ান ছেলেগুলিরে নিয়া কারখানার সামনের রাস্তা বন্ধ কইরা দেয়। তখন পুলিশ আসে আর বিরাট হাঙ্গামা শুরু হয়। কতজনরে পিটায়া পুলিশ যে মাথা ফাটাইল। উফ্্!
ফরসা লাকি নিজের মাথায় ওড়নাটা ভালো করে টেনে দিয়ে দ্রুত পা চালায়, তার ঝুলন্ত দোলায়মান হাতে রাখা টিফিন ক্যারিয়ারের ভেতর পাতলা ডাল ছলাত্ ছলাত্ শব্দ করলে লাকি সামান্য থেমে দেখে নেয় ডাল আবার রাস্তার ওপর ছলকে পড়ে গেল কি না,‘ওই ছেমড়ি, এত তাড়াহুড়া কিয়ের? একটু আস্তে হাঁট না…’ পেছন থেকে শেলি আপা ডাক দিলেও লাকি তার গতি থামায় না, আসলে শেলি আপাকে এড়িয়ে চলতে চায় সে, খালি খারাপ কাজের জন্য ফুঁসলায়, সুযোগ পাইলেই অল্পবয়সী মেয়েদের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে, লাকিকেও কয়েক দিন বলেছে, ‘কয় ট্যাকা বেতন পাস?…এই বেতনে চলে? এমুন রূপ-যৌবন থাকতে হুদাহুদি কষ্ট করছ কেন? কেউ কিচ্ছু টের পাইত না, ফাঁকতালে কিছু বাড়তি কামাই করতে পারবি, সুখে থাকবি…’তার ছলনায় ভুলে কিছু বোকা মেয়ে ঠিকই ফাঁদে পা দেয়, কিন্তু ফরসা লাকি সেই পদের না। সে গরিব হতে পারে কিন্তু তার মান-ইজ্জত আছে।
শরীয়তপুরের শান্তিগঞ্জে তাদের মিয়া বংশের সুনাম আছে, সবাই এক ডাকে চেনে। সেই সুনাম সে নষ্ট করতে পারে না। অবশ্য তার না-রাজি ভাব দেখেও শেলি আপা হাল ছাড়েনি, পেছনে লেগেই আছে। নিজের সুন্দর গায়ের রংকেই এখন শত্রু মনে হয় ফরসা লাকির, সুন্দর মেয়েদের প্রতি পুরুষের লোভ বেশি, কালো লাকিকে হয়তো শেলি আপার এমন প্রস্তাব শুনতে হয় না, ভাদ্র মাসের কড়কড়ে সূর্যের দিকে তাকায় লাকি, এই রোদে পুড়ে যদি তার গায়ের রংও কালো হয়ে যেত, যদি কালো লাকি আর তার মধ্যে কোনো ফারাক না থাকত, ফ্যাক্টরির স্যাররা তখন আর তাদের আলাদা করতে না পেরে বেশ একটা বিপদে পড়ে যেতেন। আয়রন সেকশনের সুন্দর তমিজ তখন কি তার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলত? কে জানে? মানুষের মন তো ক্ষণে ক্ষণে পাল্টায়। শুধু কারখানা পাল্টায় না, কারণ কারখানার মন নেই। যদি থাকত, তাহলে হয়তো কালো লাকি কামিজের আড়ালে লুকিয়ে রাখা তার গোপন দুঃখের কথা এই কারখানাকেই জানাত। হয়তো কোনো একদিন চুপি চুপি ফিসফিস করে বলত, ও ফ্যাক্টরি, ও লোহালক্কড়ের কঠিন হূদয় কারখানা, তোমারে কই আমার জীবনের সবচেয়ে গোপন দুঃখের কথাটা।
ছোটবেলায়, আমাদের শেরপুরে শীতের দিনগুলাতে গারো পাহাড়ের ঠান্ডা বাতাস ছুটে আসত, সেই হিম ঠান্ডাকে বশে রাখতে গ্রাম-দেশের মহিলারা মাটির মালশার মধ্যে কয়লা, ধানের তুষ নিয়ে একটা আগুনের আইল্যা তৈরি করত, আমার দাদির ছিল এমন একটা আইল্যা, দাদি তার চাদরের ভিতরে, দুই পায়ের মাঝখানে কাপড়ের নিচে বিশেষ কায়দায় আইল্যাটা রেখে সেখান থেকে উত্তাপ নিয়ে শীত তাড়াত, আমি তখন ছোট, সবে হামাগুঁড়ি দিই, দাদির সাথে খুব খাতির আমার, দাদিরে দেখলে কলবল করে উঠি, হাত বাড়ায়া দিই, মা আমার চেয়ে এক বছরের বড় ভাইরে সামলাতে ব্যস্ত, এক শীতের দিনে সন্ধ্যায় দাদি তার আইল্যাটা ঘরের কোনায় রেখে গরুর গোয়ালে গেছে নাকি আরেক বাড়ির দাদির সাথে গপ্পো করতে গেছে, জানি না, আমি হামাগুঁড়ি দিতে দিতে গিয়া পড়লাম সেই আগুনের মালশার মধ্যে, এক কাইতে পড়ছি, আগুনে আমার ডান হাত, ডান পিঠ, ডান বুক ঝলসায়া গেল। কী পুড়ানি পুড়াইছিল, সেই স্মৃতি আর মনে নাই, কি জ্বলুনিতে জ্বলছিলাম তাও বলতে পারি না, শেরপুর সদর হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিত্সা হইছিল কি না, তাও জানি না।
আগুন শুধু তার লম্বা জিহ্বা দিয়া একটা চাটা দিছিল আমার শরীরে, তারপর সেই চাটার দাগটা শরীরে রাইখ্যা বিদায় হইছিল। চামড়া কুঁচকায়া দলা দলা হইয়া গেছিল। যে দেখছে, সেই বলছে, ছেড়িডা বাঁচত না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচলাম তো।অর্ধনারী হইয়া বাঁচলাম। আগুনের কারসাজিতে আমার ডান বুক সমান থাকল, বাম বুক নারী হইল। দাদি কানতে কানতে কইল, ‘টুন্ডা হইয়া বাঁচলি বইন, এই বাঁচার কষ্টে তো প্রতিদিন মরবি…’‘প্রতিদিন মরি গো কারখানা আবার প্রতিদিন বাঁচি, তোমার মেশিনের মুখে খাবার তুইল্যা দিই, তার বদলে মালিকেরা আমাদের খাওন দেয়। আমরা মরতে মরতে বাঁচি। বাঁচতে বাঁচতে মরি।
যদি কই, যে টেকা দেও তাতে চলে না, বেতন বাড়াও, তখন পুলিশ দেয় পিটানি, আমরা খালি মাইর খাই, পুলিশ মারে লাঠি দিয়া, মালিক মারে মজুরি কম দিয়া। হঠাত্ একদিন শুনি মাথা গরম বিল্লালের লাশ রাস্তার পাশে পইড়া আছে। আমরা তখন ডরাই, মেশিনে মুখ গুঁইজ্যা কাজ করতে থাকি…’কালো লাকিদের এই সব কষ্টের কথা শুনে শুনে কারখানার ইলেকট্রিক সুইচ বক্সে হঠাত্ কেমন গন্ডগোল হয়ে যায়, পজিটিভ নেগেটিভ তার একসঙ্গে মিলে চটচট করে পুড়তে শুরু করে। ভাগ্যিস ক্লিনার গৌরাঙ্গ কাছেই ছিল, তার চিত্কারে দৌড়ে গিয়ে কেউ একজন মেইন সুইচ বন্ধ করে দিলে আর কোনো অঘটন ঘটে না। শুধু অল্পবয়সী হেলপার রেজিয়া ভয়ের চোটে তিন তলার জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে পা ভেঙে ফেলে। সব শুনে জিএম স্যার এসে ঘোষণা দেয়, ‘কালকেই ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগার মহড়া হবে।
অ্যালার্ম বাজবে। সবাই লাইন ধরে দৌড়ে কারখানা থেকে নেমে পড়বা।ফায়ার ডিসটিংগুইশার ব্যবহার করা শিখাব তোমাদের। কেমন কইরা এই লাল রঙের বিরাট বোতলটার পাইপে চাপ দিতে হয় শিখবা।’ ‘না, আমাদের জিএম স্যার ভালো, এমডি স্যার আরও ভালো, খারাপ শুধু সিকিউরিটির লোকগুলা, বডি চেক করার নামে শুধু গায়ে হাত দিতে চায়।’ ফরসা লাকি ভাবে। বডি চেকের দরকার কী? না, কেউ যদি কাপড়ের টুকরা জামার নিচে লুকায়া বাড়িতে নিয়া যায়! আজ পর্যন্ত কাউরে কি ধরতে পারছে? পারে নাই। তবু চেক করা চাই। লাকির খুব অপমান লাগে। তারা কাজ করতে আসছে, চুরি করতে তো আসেনি। চারদিকে এত অবিশ্বাস, একদিকে দারোয়ানের অবিশ্বাস, আরেক দিকে বাড়িওয়ালার অবিশ্বাস। বাড়িওয়ালা বলে, গারমেনের মেয়েরা নাকি টাইমমতো ভাড়া দেয় না। আরে, দিবে কেমনে? বেতন পাইলে না দিবে? বেতন না দিলে যদি রাস্তায় যাই, চিল্লাপাল্লা করি, ওই যে আগেই বলছি, তখনই পুলিশ আইস্যা আমাদের ইচ্ছামতো পিটায়। যেন যত দোষ সব গরিবের, বড়লোকের কোনো দোষ নাই। আর সে জন্যই লাকির মাঝে মাঝে খুব বড়লোক হইতে ইচ্ছা করে। সিনেমার শাবনূর, পপি, মৌসুমীরা যেমন গরিব থাকে, তারপর বড়লোকের ছেলেরে ভালোবাইসা বড়লোক হৈয়া যায়, তেমন কইরা কি লাকিদের দিন পাল্টাইতে পারে না?
বড়লোকের মেয়েরা তো আমাদের মতো রাস্তা দিয়া হাঁইট্যা হাঁইট্যা গারমেনে যায় না, সেই জন্য তাদের রাস্তার পাশের সিগ্রেটের দোকানের সামনে দাঁড়ায়া থাকা মাস্তান আর বখাইট্যাদের বিশ্রী সব কথা-বার্তাও শুনতে হয় না। যতই মাথা নিচু করে দ্রুত জায়গাটা পেরিয়ে যাক, যতই তারা উপেক্ষা করুক, বাতাসে ভেসে ভেসে ওইসব নোংরা কথা ঠিকই কানে আসে সবার, আর লাকির তখন মন খারাপ হয়।
সে নিচু গলায়, শুয়োরের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা বলে ওদের গালি দিতে থাকে। খায়রুন আপা তখন বুদ্ধি দেয়, ‘বিয়া বৈয়া পড়, মাথার উপরে একটা স্বামী থাকলে বদমাইশগুলা একটু ডরায়, দুইটা কথা কওয়ার আগে চিন্তা করে।’ কিন্তু না, লাকি বিয়া বসতে চায় না।দেখতেছে তো, খায়রুন আপা চাকরি করে, ওভারটাইম করে, রান্ধে, বাড়ে, কত কষ্ট করে আর হের জামাই খালি বৈয়া বৈয়া খায়। একদিন হয়তো দেখা যাবে আরেকটা বিয়া কইরা খায়রুন আপারে ছাইরা হাওয়া।
নিজের দগ্ধ বুকের দিকে তাকিয়ে কালো লাকি দীর্ঘশ্বাস ফেলে, কামিজের ভেতরে বাম হাত ঢুকিয়ে ডান বুকের মসৃণ সমতল জায়গায় হাত বোলায়। কোনো মলমেই, কোনো চিকিত্সাতেই এটা ভালো হবে না। তার পোড়া কপালে কি আর স্বামী জুটবে? নাকি আগুনই তার স্বামী? বাল্যকালে আগুনের সঙ্গেই তার বিয়ে হয়ে গেছে। ফ্যাক্টরিতে আগুনের মহড়ায় বিপদের ঘণ্টা বাজলেও তাই তার সিট ছেড়ে নড়তে ইচ্ছা করে না, এগুলি তো মিছিমিছি খেলা, আসল খেলা শুরু হবে তো সেই দিন, যেদিন সত্যি সত্যি আগুন লাগবে, প্রথমে কেউ টের পাবে না, নিচতলা থেকে হঠাত্ দেখা যাবে কুণ্ডুলী পাকানো ধোঁয়ার রেখা, মেশিন অপারেটর মাজেদা, সাজেদা, মনোয়ারা, হালিমার নাকে এসে প্রথমে লাগবে কাপড় পোড়ার গন্ধ। ওরা চঞ্চল হয়ে সিট ছাড়বে, লাইন চিফ আর সুপারভাইজার হয়তো বলবে, ‘আরে কিছু না, বসো তোমরা, কাজ করো, দেখতেছি…’ততক্ষণে সিকিউরিটির লোকজন নিচের কেঁচিগেটে তালা দিয়ে দেবে। কারখানার বিকল্প সিঁড়ি ভর্তি জমে থাকবে জুটের বস্তা, ভাঙাচোরা মেশিন।
তমিজ, রমিজ, হেলাল, ইকবাল, দেলোয়ার-কারখানার অল্পবয়সী জোয়ান ছেলেগুলো জানালা দিয়ে লাফিয়ে নিচে নেমে যাবে। লাফিয়ে পড়তে গিয়ে পা ভাঙবে, মাথা ফাটবে শাহেদা, বকুল, শামসুন্নাহারের। চাপা সিঁড়িতে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পিষ্ট হবে সায়েদা, হনুফা, রাফিয়া। বাতাসের দুষ্ট ইন্ধনে দুরন্ত আগুন নেচে নেচে তার জ্বলন্ত হাত বাড়িয়ে পেঁচিয়ে ধরবে পুরো দালান। কালো ধোঁয়ায় একসময় তাদের শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। একসময় কালো লাকি আর সাদা লাকির মধ্যে রং বা চেহারার কোনো পার্থক্য থাকবে না। পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া মৃতদেহগুলোর আলাদা নাম-পরিচয় থাকে না।