আর্ন্তজাতিক ডেস্ক(১৬ ফেব্রুয়ারী): ভারতের মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেল। সামনে অসংখ্য তরুণ-তরুণীর ভিড়। হলিউডের তারকারা নিয়মিতই এই হোটেলে আসেন। তাঁদের দেখতে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তবে এই ভিড় সে জন্য নয়, বিদেশে শিক্ষার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে। হোটেলের ভেতরে চলছে আন্তর্জাতিক শিক্ষা মেলা।
মেলায় যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্টল দেওয়া হচ্ছে, তার প্রায় অর্ধেকই যুক্তরাজ্যের। এর মধ্যে রয়েছে ডারহাম, কার্ডিফ, নটিংহাম, ল্যাংকাস্টার ইয়র্কসহ সব নামীদামি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ও। ভারতীয় শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য দ্বিতীয় পছন্দ হচ্ছে যুক্তরাজ্য (প্রথম যুক্তরাষ্ট্র)। তবে যুক্তরাজ্য এ অবস্থান খোয়াতে চলেছে। কারণ একটাই; ভিসা-ব্যবস্থায় পরিবর্তন।
যুক্তরাজ্যের আগের ভিসা আইনে কোনো শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করার পর কাজ খোঁজার জন্য অন্তত দুই বছর অবস্থান করতে পারতেন। তবে ২০১২ সালে আইনে পরিবর্তন আনা হয়। নতুন আইনে একমাত্র ইউরোপীয় শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যদের জন্য এই সুবিধা বাতিল করা হয়। এখন অ-ইউরোপীয় কোনো শিক্ষার্থীকে সেখানে থাকতে হলে টাইয়ার-২ অভিবাসী মর্যাদা অর্জন করতে হবে। তার মানে তাঁকে পয়েন্ট-ভিত্তিক পদ্ধতিতে যেতে হবে এবং এমন একটি চাকরি পেতে হবে, যেখানে বেতন হবে ন্যূনতম ২০ হাজার পাউন্ড। উদ্যোক্তা বা বাণিজ্য সংগঠক হিসেবে আরেকভাবে ভিসা পাওয়া যায়, তবে বছরে প্রায় এক হাজারজনকে এ ধরনের ভিসা দেওয়া হয়।
ভিসা আইনে এই পরিবর্তনের প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যের হায়ার এডুকেশন স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটির (এইচইএসএম) ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের একটি হিসাবে দেখা গেছে, গত শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাজ্যে ভারতীয় শিক্ষার্থীর যে সংখ্যা ছিল, এবার তা ২৪ শতাংশ কমে গেছে।
শিক্ষার্থী জোনাথন ফার্নান্ডো বলেন, যুক্তরাজ্য কোনোমতেই তাঁর জন্য উপযুক্ত নয়। কারণ, সেখানে পড়াশোনার খরচ খুব বেশি। আবার কাজ করে এই খরচ চালানোর সুযোগ কম। তাঁর মতে, ভিসা-ব্যবস্থায় যুক্তরাজ্য যে পরিবর্তন এনেছে, তা ‘নির্বোধের’ মতো একটা সিদ্ধান্ত।
এর পরও অনেক ভারতীয় শিক্ষার্থীর কাছে এখনো যুক্তরাজ্যই ভালো গন্তব্য। এর মধ্যে রয়েছেন রোমেলা বসু, যিনি সাংবাদিকতায় উচ্চতর ডিগ্রি নিতে আগ্রহী। রোমেলার মতে, একজন ভারতীয় হিসেবে যুক্তরাজ্যে তিনি অন্যান্য ভারতীয়র সহায়তা পাবেন। সেখানে নিজ দেশের মতো একটা আবহ পাওয়া যাবে।
শিক্ষা মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান এডওয়াইজের পরিচালক অজয় সুখওয়ানির মতে, যুক্তরাজ্যের উচিত হবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পুনরায় আশ্বস্ত করা। সেখানে শিক্ষার্থীদের একটি ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি হয় যৌক্তিক কাজের সুযোগ, না-হয় অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য অবস্থান করার সুযোগ করে দিতে হবে। বিবিসি।
নিউজরুম