স্পোর্টস ডেস্ক(১৫ ফেব্রুয়ারী): ভালোবাসা দিবসেই কিনা ভালোবাসার মানুষটিকে খুন করে বসলেন অস্কার পিস্টোরিয়াস! বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের অনুপ্রেরণার উত্স দক্ষিণ আফ্রিকার এই পা-হীন অ্যাথলেট এখন খুনের আসামি। গতকাল ভোরে রাজধানী প্রিটোরিয়ার পিস্টোরিয়াসের বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তাঁর বান্ধবী রিভা স্টিনক্যাম্প। সকালেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে নিয়ে যায় পুলিশ। তখন অবশ্য পুলিশ তাঁর পরিচয় প্রকাশ না করে জানিয়েছিল, পিস্টোরিয়াসের বাড়ি থেকে ২৬ বছর বয়সী একজনকে তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ‘ব্লেড রানার’ পিস্টোরিয়াসের বয়সও ২৬ বলে তখন সবার সন্দেহ ঘনীভূত হয় তাঁর দিকেই। পরে হত্যার অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
প্রথমে শোনা গিয়েছিল, ঘটনাটা ঘটেছে দুর্ঘটনাবশত। চোর সন্দেহেই নাকি গুলি ছুড়েছেন তিনি। তবে পরে পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আগের দিন সন্ধ্যায় পিস্টোরিয়াসের বাড়ি থেকে চিত্কার-চেঁচামেচির শব্দ শোনার অভিযোগ করেন প্রতিবেশীরা। এর আগে ‘ঘরোয়া কোনো বিষয়ে’ একবার নাকি পুলিশও ডাকা হয়েছিল।
গতকাল বিকেলেই পিস্টোরিয়াসকে আদালতে তোলার কথা ছিল। কিন্তু দুপুরে এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাপারটা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ প্রিটোরিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে নেওয়া হবে প্যারালিম্পিকে সোনাজয়ী এই অ্যাথলেটকে।পুলিশের এক সূত্র জানিয়েছে, পিস্টোরিয়াস গতকালই তাঁকে আদালতে নেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু আদালতে প্রতিবন্ধীদের জন্য সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি থাকায় সেটি পেছায় এক দিন।
অ্যাথলেটিকস বিশ্বে সবচেয়ে পরিচিত মুখগুলোর একটি। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে সক্ষম ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে অংশ নিয়ে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন। এর আগে ২০১১ দেগু বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সোনা জেতেন রিলেতে। অদম্য এই মানবজাতির প্রতীকই তিনি তাই গোটা বিশ্বে। কিন্তু এ জন্য পুলিশ পিস্টোরিয়াসকে বিশেষ কোনো সুবিধা দিচ্ছে না। ‘আর সব সাধারণ মানুষের মতোই আচরণ করা হচ্ছে তাঁর সঙ্গে’—এটা জানিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পিস্টোরিয়াস জামিন চাইলে সেটার বিরোধিতা করা হবে। পুলিশই জানিয়েছে, এই মামলায় পিস্টোরিয়াসই একমাত্র সন্দেহভাজন ব্যক্তি।
৩০ বছর বয়সী স্টিনক্যাম্পের লাশের পাশে একটি ৯ মিলিমিটার পিস্তল পাওয়া গেছে। এই পিস্তলেরই চার-চারটি গুলি লেগেছে তাঁর শরীরে। গুলির ঘটনার পরপরই ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দেখতে পায় প্যারামেডিকস দিয়ে চিকিত্সার ব্যর্থ চেষ্টা চলছে। এরপরই পুলিশ ঘিরে ফেলে পিস্টোরিয়াসের বাড়ি।গণমাধ্যমেরও শত শত কর্মীও মুহূর্তেই ভিড় জমান আশপাশে।
স্টিনক্যাম্প ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মডেলিং জগতে পরিচিত এক মুখ।পিস্টোরিয়াসের সঙ্গে তাঁর পরিচয় গাঢ় হয় গত নভেম্বরে। আইনে স্নাতক পোর্ট এলিজাবেথের এই মেয়ে গত সপ্তাহে দেশটির সানডে টাইমস পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন পিস্টোরিয়াসকে। সেখানে স্টিনক্যাম্প পিস্টোরিয়াসকে বর্ণনা করেছিলেন এমন এক মানুষ হিসেবে যে কি না, ‘নিষ্কলুষ, যার হূদয়ে সব সময় তার (স্টিনক্যাম্প) জন্য শুভকামনাই থাকে।’
মৃত্যুর আগের দিন পিস্টোরিয়াসের উদ্দেশে টুইট করেছিলেন ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে। সেখানে স্টিনক্যাম্প লিখেছেন, ‘তোমার ভালোবাসার মানুষের জন্য আগামীকাল কী চমক লুকিয়ে রেখেছ?’ ‘হ্যাঁ’ চমকই বটে। এমনই এক চমক যা চমকে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। ল্যান্স আর্মস্ট্রংয়ের কাছ থেকে পাওয়া আঘাতটা ঠিকভাবে হজম হওয়ার আগেই আরেকটি চপেটাঘাত পেল ক্রীড়াবিশ্ব। আসল ঘটনা যা-ই হোক অফুরন্ত অনুপ্রেরণার উত্স আরেক নায়কের পতনই কি দেখা হয়ে গেল? পতিত নায়কদের তালিকায় কি যোগ হলো আরেকটি নাম? এএফপি, ওয়েবসাইট।
নিউজরুম