১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩।।
পাকিস্তানে অন্তর্বর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সাধারণ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণে শিগগিরই গণভোট নেয়া হবে বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি বিবিসিকে জানিয়েছেন। জারদারি বলেন, বিতর্কের ঊর্ধ্বে অবস্থানকারী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। তাদের আন্তরিকতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে দেশের সংবিধান অনুযায়ী পূর্ণ মতা পাবে।
বাংলাদেশে সাংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বিলুপ্ত করার পর এ ব্যবস্থা পুনর্বহাল নিয়ে যখন তীব্র রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে, ঠিক তখন পাকিস্তানে এ ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য গণভোটের কথা জানালেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি। রাজনৈতিক সরকারের অধীনে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন যে সম্ভব নয়, এ বিষয়ে বাংলাদেশের মতো অন্যান্য দেশেও এক ধরনের ঐকমত্য রয়েছে। এ ধরনের দেশে সরকার নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে নানা ধরনের অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে। পেশিশক্তি কাজে লাগায়। ফলে নির্বাচনী ফলাফলে জনরায়ের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে না। বাংলাদেশই বিশ্বে প্রথমবারের মতো অন্তর্বর্তীকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। এরপর বিশ্বের অনেক দেশেই বিষয়টি আলোচিত হয়। পাকিস্তান ছাড়াও মালয়েশিয়ার মতো দেশেও নির্বাচনকে প্রভাবিত করার পদক্ষেপ কিভাবে ঠেকানো যায়, সে বিষয়টি নিয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করছে।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাসংবলিত ত্রয়োদশ সংশোধনী যখন সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করার রায় দেন, তার আগে শুনানিকালে নিযুক্ত এমিকাস কিউরিদের প্রায় সবাই এ পদ্ধতি রাখার পক্ষে ছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একমাত্র জাতীয় পার্টি ছাড়া সব দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে ছিল। তাছাড়া এ রায়ে বলা হয়েছিল, আরো দুই মেয়াদ নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করা যেতে পারে। এ অবস্থায় সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত করা বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে পরিণত হয়েছে। শান্তিপূর্র্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আন্দোলন সহিংসতা কোনো দেশের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। ক্ষমতা হস্তান্তরে অচলাবস্থাকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক সহিংসতা দেখা দেয়, তাকে কেন্দ্র করে অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে থাকে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় এ ব্যবস্থা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে প্রায় দুই দশক ধরে। ব্যবস্থাটি বাতিলের জন্য ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ক্ষমতায় থাকা এবং রাজনীতিবিদদের ওপর নিপীড়ন চালানোর যে বিষয়টির কথা বলা হয়, সেটিও মূলত এসেছে রাজনৈতিক হানাহানির কারণে। ব্যবস্থাটিকে সংশোধনের মাধ্যমে করে এ ধরনের অবকাশ যাতে না থাকে আবার তা চালু করা যেতে পারে।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সরকার তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা পুনর্বহালের ব্যাপারে প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করতে পারে। মুক্ত পরিবেশে গণভোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যদি জনগণ এই ব্যবস্থার পক্ষে রায় দেয় তাহলে সেটি সংবিধানে আবার সন্নিবেশিত হবে। আর জনগণ যদি এ ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করে তাহলে বিদ্যমান ব্যবস্থাই থাকবে। আর নির্বাচন হবে দলীয় সরকারের অধীনে। বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে বিশেষভাবে। তা না হলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের অনমনীয়তা দেশকে গভীর সঙ্কটে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।