ঢাকা,(১৪ ফেব্রুয়ারী) : আইন দিয়ে নিবন্ধন বাতিল করা লম্বা প্রসিডিউর বলে জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।
বৃহস্পতিবার আগারগাঁও নির্বাচন কমিশনের সম্মেলন কক্ষে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা বলেন।
তিনি বলেন, “এরই মধ্যে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে আমরা তাদের নিবন্ধন বাতিল করে দেবো। আমরা স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতের গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
তবে জামায়াতের গঠনতন্ত্রে সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারা থাকার কারণে নিবন্ধন বাতিলের প্রক্রিয়া ‘অনেক দীর্ঘ মেয়াদী’ মন্তব্য করে সিইসি বলেন, “সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে ইসি সহজেই দলটির নিবন্ধন বাতিল করতে পারে।”
তিনি বলেন, “আইনের মধ্যে থেকে আমাদের অ্যাকশন নিতে হবে। দলীয় গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করে শর্তভঙ্গের জন্য নোটিশ দিতে হবে।” সিপিবি-বাসদসহ বামপন্থী দলগুলো জামায়াত ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। এই দাবিতে তারা গত ডিসেম্বরে হরতালও করে, যাতে জনগণের ব্যাপক সাড়া দেখা যায়।
সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের দুটি রায়ে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসার পর সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি আরো জোরালো হয়ে ওঠে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগ মোড়ে চলমান আন্দোলন থেকেও জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত রাজপথে সোচ্চার থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়।
জামায়াত যে যুদ্ধাপরাধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল- তা ওঠে এসেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত দেওয়া দুটি রায়েও।
গত ২১ জানুয়ারি জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী একাত্তরে ‘পাকিস্তান রক্ষার’ নামে সশস্ত্র বাহিনী তৈরির মাধ্যমে নীরস্ত্র বাঙালিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করে।
আর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সহযোগী বাহিনী লেলিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে জামায়াত ইসলামীর অংশগ্রহণের বিষয়ে আরো বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় রায়ে, যাতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।এই দ্বিতীয় রায় প্রত্যাখ্যান করেই কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন চলছে শাহবাগে।
জামায়াত একাত্তরে যুদ্ধাপরাধে যুক্ত ছিল- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এমন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী রকিব বলেন, “আদালতের আদেশ সবাইকে মানতে হবে। নির্দেশ পেলে তাও মানবে ইসি।”
ইসির আইন শাখা জামায়াতের সংশোধিত গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আইনি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতে সময় লাগে।”
কাজী রকিবের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন গঠনের এক বছরের মাথায় এই প্রথম সিইসি জামায়াতের বিষয়ে সরাসরি মুখ খুললেন। জামায়াত নিবন্ধন পাওয়ার চার বছরে দলটির গঠনতন্ত্রের অংসঙ্গতি নিয়ে চার দফা চিঠি দিলেও সন্তোষজনক জবাব পায়নি কমিশন।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, নির্বাচন করতে হলে কোনো রাজনৈতিক দলকে ইসিতে নিবন্ধিত হতে হবে। নিবন্ধন দেওয়ার আগে রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী বুধবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “জামায়াতের গঠনতন্ত্র দেশের সংবিধান ও আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে, দেশের শাসন ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। কিন্তু জামায়াতের গঠনতন্ত্রে প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা এবং শাসন ব্যবস্থাকে পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে।”
নিউজরুম