বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক(১4 ফেব্রুয়ারী প্রজন্ম চত্বর ঘিরে চলমান আন্দোলনে সাইবারকর্মীরা জামাত-শিবিরের নানা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ‘লড়াই’ করে যাচ্ছেন ল্যাপটপ হাতে। চত্বরে সারি সারি বসে তাঁরা জানিয়ে দিচ্ছেন আন্দোলনের সঠিক খবর। তাঁদের উদ্দেশ্য, বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো সুযোগ দেবেন না তাঁরা।
‘আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের তুই রাজাকার তুই রাজাকার বলে গালি দেওয়ায় আল্লাহর গজব পড়েছে’, ‘যুদ্ধাপরাধীর বিচার আসমানে হবে শাহবাগে নয়’। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর ঘিরে গড়ে ওঠা আন্দোলন নিয়ে জামায়াত-শিবির সমর্থকের ফেসবুক পাতায় ছবিসহ যুক্ত করা মন্তব্য এগুলো। ফেসবুক, ব্লগকেন্দ্রিক এ ধরনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শাহবাগ চত্বরে সব সময় পাওয়া যাবে ২০-৩০ জনের একটা সাইবার দলকে।
অনলাইনে জামাত আর শিবিরের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে তরুণ আন্দোলনকারীদের এই সাইবার দলটি। প্রতি শিফটে ভাগ হয়ে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা। শাহবাগ চত্বরে বসেই অনলাইনে আন্দোলনের নানা তথ্য জানানোর পাশাপাশি জামাতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ‘লড়াই’ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
ফেসবুকে পেজ খুলে, ব্লগে লেখালেখি করে তাঁরা প্রতি মুহূর্তে সজাগ করে দিচ্ছেন মানুষকে আর জানিয়ে দিচ্ছেন আন্দোলনের সর্বশেষ তথ্য।
এদিকে, জামায়াত-শিবিরের কর্মী-সমর্থকেরা ফেসবুকে গ্রুপ চালু করে আন্দোলন নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। ফেসবুকে জামায়াত-শিবিরের কর্মী-সমর্থকেরা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ করে গালিগালাজ করছেন, অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
‘শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ’
শাহবাগের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সোসাইটির তরুণ একদল শিক্ষার্থী সাইবার জগতেও আন্দোলন শুরু করেন। তিন দিন আগে তাঁরা চালু করেন ‘শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ’ নামের একটি ফেসবুক পেজ।বর্তমানে এ পেজে ৩১ হাজারের বেশি মানুষ ‘লাইক’ দিয়েছেন।
এ সাইবার দলের এক কর্মী প্রথম আলো ডটকমকে জানিয়েছেন, বর্তমানে এই দলে সক্রিয় সদস্যসংখ্যা অনেক। সন্ধ্যার পর দলটিতে কর্মীসংখ্যা বেড়ে যায়। সবাই সারি হয়ে বসে ল্যাপটপ হাতে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার আর সচেতন করার কাজ করতে থাকেন।
দলটির একজন সদস্য বলেন, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট আর ব্লগকেই বেছে নেওয়া হয়েছে ‘লড়াই’ আর ‘প্রতিবাদ’-এর ক্ষেত্র হিসেবে। মানুষকে শাহবাগ আন্দোলনের সঠিক বার্তা পৌঁছে দিতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে দলটি। এ দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, হ্যাকার, সামাজিক যোগাযোগে দক্ষ অনেক কর্মী। সবার উদ্দেশ্য, জামাত-শিবির যেন কোনোভাবেই এ আন্দোলন নিয়ে অপপ্রচার চালাতে না পারে।
লড়াইয়ের শুরু
৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে প্রথম অবরোধ শুরু করেছিল ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম।
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের আন্দোলন সম্পর্কে ফেসবুকে জামাত-শিবিরের সমর্থকেরা শুরু থেকেই ফেসবুক, ব্লগ আর অনলাইনের বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে নানা অপপ্রচার চালাতে শুরু করেন। শাহবাগ আন্দোলন ঘিরে কুিসত, অশ্লীল, বানোয়াট ছবি, কুরুচিকর মন্তব্য প্রকাশ করে ফেসবুকে। এমনকি ব্লগেও যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থনে অপপ্রচার চালান শিবির-সমর্থকেরা।
সাইবার আন্দোলন প্রসঙ্গে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, আন্দোলনের উদ্দেশ্য, বিষয়. ধরন নিয়ে জামায়াত ও শিবির প্রতিনিয়ত ফেসবুক-ব্লগে অপপ্রচার চালাচ্ছে।আন্দোলনের সঠিক তথ্য দিতে আর শিবিরের অপপ্রচার ঠেকাতে ফেসবুক বেছে নিয়েছে তরুণরা। যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবিতে এ সক্রিয় আন্দোলনে তাঁরা সমমনা সবার সঙ্গে রয়েছে। ফেসবুক পেজটিতে আন্দোলন ঘিরে নানা মন্তব্য লিখছেন দেশ-বিদেশের আন্দোলন সমর্থনকারীরা, পাচ্ছেন সঠিক তথ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সোসাইটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল-ইমরান প্রথম আলো ডটকমকে জানিয়েছেন, ‘সক্রিয় আন্দোলনে একদল সাইবার কর্মীসহ তাঁরাও শামিল।শাহবাগ চত্বরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তাঁরা স্লোগানে আর সাইবার যুদ্ধে পরাজিত করতে চান অপপ্রচারকারীদের। তাঁদের এই সক্রিয় আন্দোলন চলছে, চলবে।
লড়াইয়ের হাতিয়ার ল্যাপটপ
রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর এখন স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত। রাত নামলেই প্রত্যেকের হাতে মোমবাতি। দফায় দফায় মিছিল।কোথাও মশাল মিছিল। কোথাও অবরোধ। সবার দাবি একটাই। স্লোগানও একটাই— ‘কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই’।
স্বতঃস্ফূর্ত এ আন্দোলনে শিশু, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ—সবাই রয়েছেন। তবে ‘প্রজন্ম চত্বর’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা এ আন্দোলনে ‘বসন্ত’ এনেছেন বাংলাদেশের সাইবার জগতের তরুণ-যুবারা। আর তাঁদের লড়াইয়ে অস্ত্র ‘ল্যাপটপ’।
অনলাইনের লড়াই
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এখন উত্তাল। ‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’ ‘ক-তে কাদের মোল্লা’, ‘কসাই কাদেরের যাবজ্জীবন সাজা মানি না’, ‘আর কোনো রায় নাই, কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই’, ‘রাজাকারদের সঙ্গে বসবাস করতে চাই না’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’—এসব স্লোগানে মুখরিত প্রজন্ম চত্বর। এ আন্দোলনের স্লোগানের সঙ্গে ল্যাপটপ হাতে সাইবার আন্দোলন গড়ে তুলেছেন তরুণেরা। ফেসবুক আর ব্লগে যাঁরা অপপ্রচার শুরু করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ‘ল্যাপটপ’ বিপ্লব করছে তরুণদের এ দলটি।
বিভ্রান্ত হবেন না
শাখাওয়াত হোসেন কাজ করেন একটি বেসরকারি অফিসে। ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে তাঁর ফেসবুক পাতায় একটি ছবিসহ মন্তব্য দেখে তিনি অবাক হলেন। এই পোস্টে শাহবাগের ছবি এডিট করে নানা কুরুচিকর মন্তব্য লেখা হয়েছে। তাঁকে এ পোস্টটি শেয়ার করার জন্যও বলা হয়েছে। তিনি শাহবাগে যাওয়ার সুযোগ পাননি। যতটুকু জানার টিভি আর পত্রপত্রিকায় জেনেছেন। হঠাত্ ফেসবুকে ঢুকে শাহবাগের আন্দোলন সম্পর্কে এ ধরনের তথ্য জেনে তিনি বিভ্রান্ত হয়ে যান। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে চলমান আন্দোলন নিয়ে চালানো অপপ্রচারের নিন্দা জানান তিনি।
প্রতিরোধ ব্লগে, প্রতিবাদ সামাজিক যোগাযোগে
বাংলাদেশের ব্লগ সাইটগুলোতে গেলেই জামাত-শিবিরের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার লেখাগুলো চোখে পড়বে। যাঁরা সশরীরে শাহবাগে আসতে পারেননি, তাঁরা ফেসবুক মন্তব্য, টুইট, ব্লগে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন আর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন।
নিউজরুম