ঢাকা,(১২ ফেব্রুয়ারী): ফাল্গুনের প্রথম দিন আজ, বুধবার। ভোরের আলো ফোটার আগেই শাহবাগ মোহনায় ভেসে আসছে জনতা।
বাঙালি তরুণীর মুখাবয়বে ফাল্গুনের সাজের সঙ্গে রয়েছে রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা।তরুণীর মাথায় বাঁধা ব্যান্ডে দাবি ‘রাজাকারের ফাঁসি চাই’। কমলা রঙের পাঞ্জাবি পরা তরুণীদের মাথায় বাঁধা জাতীয় পতাকা জানান দিচ্ছে রাজাকারদের বয়ে বেড়ানোর অপমানের বোঝা সহ্য করতে পারছে না। এবারের বসন্তে শাহবাগে জ্বলছে প্রতিবাদের আগুন।
স্বাধীনতার পর থেকে বিগত বছরগুলোতে শাহবাগের বসন্ত এভাবে আসেনি। সকাল থেকেই ফাগুনের গান দিয়েই বসন্তকে বরণ করতেন শাহবাগে আসা তরুণ-তরুণীরা। বসন্তের ফুলে রঙিন হয়ে উঠতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। শাহবাগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার সময় খোঁপায় ফুল দেওয়ার জন্য ফুলের দোকানগুলোতে ভিড় জমতো তরুণীদের।
২০১৩’তেও শাহবাগে এসেছে বসন্ত, তবে অন্যবারের চেয়ে আলাদা। স্বাধীনতা লাভ করলেও মুক্ত হতে পারেনি বাংলাদেশ। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে হারাতে পারছিল না এ দেশ। যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের পুনর্বাসনের অপমান সহ্য করতে পারছে না কৃষক-শ্রমিক-জনতা।
যুদ্ধাপরাধীদের ছোবল থেকে দেশের স্বাধীনতাকে মুক্ত করার জন্যে এবার শাহবাগে জড়ো হয়েছে তরুণ প্রজন্মের যোদ্ধারা। শাহবাগের মোহনা রাজাকারদের ফাঁসির দাবি নিয়ে জ্বলছে গত ৯দিন ধরে, ভাসছে তরুণের বিপ্লবে। গণজাগরণের এ মঞ্চ ঘোষণা দিয়েছে রাজাকারমুক্ত না করে ঘরে ফিরবে না জনতা।
ফেব্রুয়ারিতেই আসে বসন্ত। যে বসন্ত ২০১০ সালে নতুন করে জাগিয়েছিল আরব বিশ্বকে সে বসন্তের বাতাস এবার ঢাকার শাহবাগে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতেই পতন হয়েছিল হোসনি মোবারকের দীর্ঘ ৩০ বছরের একনায়কতন্ত্রের প্রতাপশালী শাসন। আরব বসন্তের শুরু মিশরে; এরপর লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে যায়। এরপরে ২০১১ সালের বসন্ত ধুমড়ে মুচড়ে দেয় লিবিয়ায় মুয়াম্মর আল-গাদ্দাফি জামানা।
বাঙালির এবারের বসন্ত ছড়িয়ে গেছে দেশের বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে ও গ্রামে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রুপসা থেকে পাথুরিয়া, দেশের প্রতিটি কোনাতেই পৌঁছে গেছে বসন্তের বাতাস। জনতার রোষ থেকে এবার রেহাই পাবে না চার দশক ধরে গুণ পোকার মতো আশ্রয় নেওয়া রাজাকার আর তাদের সঙ্গীরা। দৃপ্ত কণ্ঠে প্রতিবাদীরা এবার আওয়াজ তুলেছে, ‘শহীদের বাংলায়, রাজাকারের ঠাই নাই।’
যুদ্ধাপরাধীদের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র সংগঠনকে এবার দেশ ছাড়া করবে বসন্ত। বসন্তের সকালে শাহবাগ গর্জে ওঠে ‘একটা একটা জামায়াত ধর, একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, পাকিস্তানে ফিরে যা’।
মৌলবাদকে দেশ থেকে চিরতরে বিদায় জানিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে শাহবাগ বসন্ত দাবি জানায়, ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, আইন করে বন্ধ করো’।
জামায়াত-শিবিরকে প্রতিরোধ করবে এ প্রতিবাদী জনতা। দীপ্ত কণ্ঠে আহ্বান জানাচ্ছে, ‘যেখানেই জামায়াত, সেখানেই প্রতিরোধ।’
বিপ্লবী জনতা আর ধৈর্য্য ধরে থাকবে না। জনতা নিজেদের আদালতে ফাঁসির রায় দিয়েছে এসব যুদ্ধাপরাধীদের। ৪২ বছর ধরে যে অপমানের ঘানি টানছে রাষ্ট্র, তার অবসান হবে এ বসন্তে। যে বসন্তের বাতাস ছড়িয়ে গেছে শাহবাগ থেকে সারাদেশে।
নিউজরুম