১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩:শাহবাগের প্রতিবাদী তরুণদের আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েছেবিএনপি। ক্ষমতায় গেলে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার কথাও দিয়েছে দলটি।যুদ্ধাপরাধবিচারের রায় নিয়ে শাহবাগে প্রতিবাদী তরুণদের চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতেগতরাতে স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।বিএনপিরপক্ষ থেকে আজ এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা আশ্বস্ত করতে চাই বিএনপি যদিনির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসে তাহলে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতানিশ্চিত করবে এবং অবশ্যই মানবতাবিরোধী অপরাধসহ সকল ধরনের অপরাধের নিরপেক্ষও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি জাতীয় ও মানবাধিকার ইস্যুগুলোআন্দোলনে যুক্ত করতে তরুণদের আহ্বানও জানিয়েছে দলটি।দলের দপ্তরেরদায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, একসপ্তাহ ধরে বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুনী ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধীদেরফাঁসির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান করছেন। তাদের সমাবেশে অবশ্য আরওকিছু অতিরিক্ত বিষয় নিয়ে প্রস্তাব পাঠ করা হয়েছে। দেশের তরুণ প্রজন্ম জাতিরবিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে আগ্রহী ও যৌক্তিক এবং কার্যকর অবস্থান নেবেন এটাইকাঙ্খিত। তাই তারুণ্যের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।সমাবেশ মঞ্চথেকে সমাবেশটিকে দল নিরপেক্ষ দাবি করা হলেও ক্রমান্বয়ে এটা প্রতীয়মানহচ্ছে, একটি বিশেষ রাজনৈতিক ঘরানার ব্যক্তিদের হাতেই প্রতিবাদের নেতৃত্বকুক্ষিগত করার প্রয়াস চলছে। সমাবেশ মঞ্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় বহুলভাবেউচ্চারিত একটি শ্লোগান উচ্চারিত হচ্ছে। যা স্বাধীনতা উত্তরকালে চরমভাবেদলীয়করণ করার ফলে সর্বজনগ্রাহ্যতা হারায়। সেই স্লোগান বার বার উচ্চারিতহওয়ার ফলে জনমনে চরম সংশয় এবং সমাবেশের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্ন দেখাদিয়েছে। সমাবেশের অরাজনৈতিক চরিত্রের পক্ষে দাঁড়ানোর ফলে একজন সুপরিচিতছাত্রী উদ্যোক্তা সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন। এটিঅত্যন্ত গর্হিত ও নিন্দনীয় ঘটনা।বিবৃতিতে বলা হয়, জনগণ আজ ১৯৭১ এরমানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। বিএনপি সর্বদা এই বিচারেরপক্ষে। একই সঙ্গে বিচারটি যাতে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয় বিএনপি সে দাবিও জানিয়ে আসছে। বিএনপি’র এই দাবীর প্রতি সম্মানদেখালে বিচারটি প্রশ্নবিদ্ধ হত না।
উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘেরমানবাধিকার কাউন্সিলও এই বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। একটিসভ্য রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের গ্রহনযোগ্যতা নির্ভরকরে বাংলাদেশ কত ন্যয়নিষ্ঠভাবে মানবাধিকার ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখতেপারছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের মানুষের আকাঙ্খা বিবেচনা করেঅভিযুক্তদের মৃত্যুদন্ড দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচারকদেরঅনুরোধ জানিয়েছেন। জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতাঘোষণার মাধ্যমে সমাবেশ মঞ্চের ঘোষণা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অথচমানবতাবিরোধীসহ যে কোন অপরাধে অভিযুক্তদের যথাযথ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করারদায়িত্ব সরকার প্রধানের। বিচারকরা তাদের নিজস্ব মূল্যায়ন, যুক্তিতর্ক ওসাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে যদি রায় ঘোষণা করতে না পারেন তা হলেসমগ্র বিচারিক প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। এটা আইনের শাসন ওন্যয়বিচার এর পরিপন্থী। শাহবাগের সমাবেশ থেকে কিছু মিডিয়া ও প্রতিষ্ঠানেরবিরুদ্ধেও অনাকাংখিত হুমকি উচ্চারিত হয়েছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে ভিন্নমত ওপথের প্রতি এ ধরনের অসহিষ্ণুতা নৈরাজ্যেকে অনবিার্য করে দেশকে গভীর সংকটেনিপতিত করতে পারে। এটা কারও কাম্য হতে পারে না।
বিবৃতিতে বলা হয়, তরুণ প্রজন্ম দেশের ভবিষ্যত। তারা অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধেকথা বলবে, অবস্থান নেবে এবং প্রয়োজনে আন্দোলনে নামবে এটাই স্বাভাবিক। আমরাবিশ্বাস করি, তরুন-তরুনীরা সকল ধরণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধারণ করবে এবংএদেশে সংগঠিত মানবতাবিরোধী সকল অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। স্বাধীনতারপরপরই সিরাজ সিকদার, অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও অগণিত তরুন-তরুনী বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। সাম্প্রতিককালে ইলিয়াস আলী ও চৌধুরীআলমসহ যারা গুম হয়েছেন, গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যা, এডভোকেট এম.ইউ. আহমেদসহ যারা পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছেন সেই সবমানবাধিকার লংঘন, শিশু ও নারী নির্যাতন, বিশ্বজিৎ-এর হত্যাকান্ড, সাগর-রুনীহত্যাকান্ড, দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নপ্রত্যাহার, হলমার্ক, ডেসটিনি, শেয়ার বাজার, কুইক রেন্টাল কেলেংকারী, শাসকদলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনসমূহের সন্ত্রাস বাংলাদেশের কপালে কলংকের তিলক এঁকেদিয়েছে। এই বিষয়গুলো শাহবাগে সমবেত তরুন সমাজের হৃদয় ও আবেগকে স্পর্শ করলে, তাদের উদ্বেগ ও প্রতিবাদের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করলে বর্তমানের আন্দোলনআরও মহিমান্বিত হতো।
আমরা আশা করব, শাহবাগে সমবেত তরুন-তরুনীরাদেশবাসীর এ সকল উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা ধারন করবেন। কারণ ১৯৭১ সালে হানাদারমুক্তহওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের জনগণ বহুদলীয় গণতান্ত্রিক অধিকার, ন্যায় বিচার, মানবাধিকার, সুশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠারজন্য আন্দোলন করে আসছে। এসব অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেই মহান মুক্তিযুদ্ধেরচেতনা বাস্তবায়িত হবে। বিশেষ করে দেশের জনগণ বর্তমানে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষসরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আন্দোলনকরছেন। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের এই ক্রান্তিকালে গণতন্ত্রকে রক্ষা ওঅব্যাহত রাখার জন্য আগামী নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ।একমাত্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই একটি সুষ্ঠুনির্বাচন হতে পারে। তাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা নতুন প্রজন্ম বহুদলীয়গণতন্ত্রকে রক্ষা এবং অব্যাহত রাখার জন্য একটি বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করবে।
আজসময় এসেছে, দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে বাংলাদেশকে একটিগণতান্ত্রিক, শক্তিশালী, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়েতোলার। বাংলাদেশের জনগণ এই স্বপ্নকে লালন করেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকরেছিলেন। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে অংশগ্রহণের জন্যআমরা তরুন-প্রজন্মসহ দেশের সকল মানুষের প্রতি আহ্বান জানাই।
নিউজরুম