ঢাকা,(১২ফেব্রুয়ারী) : ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে অংশ গ্রহণের জন্য তরুণ প্রজম্ম ও দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার দুপুরে দলটির দপ্তর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ এ আহবান জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসি প্রদানের দাবিতে ঢাকার শাহবাগে অবস্থান করছেন।
তাদের সমাবেশে অবশ্য আরও কিছু অতিরিক্ত বিষয় নিয়ে প্রস্তাব পাঠ করা হয়েছে। দেশের তরুণ প্রজন্ম জাতির বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে আগ্রহী হবেন এবং যৌক্তিক ও কার্যকর অবস্থান নেবেন এটাই কাঙ্খিত। তাই তারুণ্যের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায় বিএনপি।
নেতৃবৃন্দ বলেন,সমাবেশ মঞ্চ থেকে সমাবেশটিকে দল নিরপেক্ষ বলে দাবি করলেও ক্রমান্বয়ে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে এটি একটি বিশেষ রাজনৈতিক ঘরানার ব্যক্তিদের হাতেই এর নেতৃত্ব কুক্ষিগত করার প্রয়াস চলছে।
সমাবেশ মঞ্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় বহুলভাবে উচ্চারিত একটি স্লোগান স্বাধীনতা উত্তরকালে চরমভাবে দলীয়করণ করার ফলে যার সর্বজনগ্রাহ্যতা হারায় সেই স্লোগান বার বার উচ্চারিত হওয়ার ফলে জনমনে চরম সংশয় এবং সমাবেশের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সমাবেশের অরাজনৈতিক চরিত্রের পক্ষে দাঁড়ানোর ফলে এর একজন সুপরিচিত ছাত্রী উদ্যোক্তা দলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন। এটি অত্যন্ত গর্হিত ও নিন্দনীয় ঘটনা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, জনগণ আজ ১৯৭১ এর মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। বিএনপি সর্বদা এই বিচারের পক্ষে। একই সঙ্গে বিচারটি যাতে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হয় বিএনপি সে দাবিও জানিয়ে আসছে।
বিএনপি’র এই দাবীর প্রতি সম্মান দেখালে বিচারটি প্রশ্নবিদ্ধ হত না। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলও এই বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। একটি সভ্য রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে বাংলাদেশ কত ন্যায়নিষ্ঠভাবে মানবাধিকার ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে পারছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের মানুষের আকাঙ্খা বিবেচনা করে অভিযুক্তদের মৃত্যুদন্ড দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচারকদের অনুরোধ জানিয়ে সমগ্র জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সমাবেশ মঞ্চের ঘোষণা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অথচ মানবতাবিরোধীসহ যে কোন অপরাধে অভিযুক্তদের যথাযথ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার প্রধানের। বিচারকরা তাদের নিজস্ব মূল্যায়ন, যুক্তিতর্ক ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে যদি রায় ঘোষণা করতে না পারেন তা হলে সমগ্র বিচারিক প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।
এটা আইনের শাসন ও ন্যয়বিচারের পরিপন্থী। শাহবাগের সমাবেশ থেকে কিছু মিডিয়া ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনাকাঙ্খিত হুমকি উচ্চারিত হয়েছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে ভিন্নমত ও পথের প্রতি এ ধরনের অসহিষ্ণুতা নৈরাজ্যেকে অনিবার্য করে দেশকে গভীর সংকটে নিপতিত করতে পারে। এটা কারও কাম্য হতে পারে না।
তরুণ প্রজন্ম দেশের ভবিষ্যত। তারা অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলবে, অবস্থান নেবে এবং প্রয়োজনে আন্দোলনে নামবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা বিশ্বাস করি, তরুণ-তরুণীরা সকল ধরণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধারণ করবে এবং এদেশে সংগঠিত মানবতাবিরোধী সকল অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে।
দলটির স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বাধীনতার অব্যবহিত পর পরই সিরাজ সিকদার, অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও অগণিত তরুণ-তরুণীরা যেভাবে বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। সাম্প্রতিককালে ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমসহ অনেকে গুম হয়েছেন।
এছাড়া গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যা এবং অ্যাডভোকেট এম.ইউ. আহমেদসহ যারা পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছেন সেই সব মানবাধিকার লংঘনের বিষয়গুলো শিশু ও নারী নির্যাতন, বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড, সাগর-রুনী হত্যাকান্ড, দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রত্যাহার, হলমার্ক, ডেসটিনি, শেয়ার বাজার, কুইক রেন্টাল কেলেংকারী, শাসক দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনসমূহের সন্ত্রাস বাংলাদেশের কপালে কলংকের তিলক এঁকে দিয়েছে।
এই বিষয়গুলো শাহবাগে সমেবত তরুণ সমাজের হৃদয় ও আবেগকে স্পর্শ করলে এবং তাদের উদ্বেগ ও প্রতিবাদের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করলে বর্তমানের আন্দোলন আরও মহিমান্বিত হতো। আমরা আশা করব, শাহবাগে সমবেত তরুণ-তরুণীরা দেশবাসীর এ সকল উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা ধারণ করবেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই- বিএনপি যদি নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসে তাহলে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে এবং অবশ্যই মানবতাবিরোধী অপরাধসহ সকল ধরণের অপরাধের নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করবে।
১৯৭১ সনে হানাদারমুক্ত হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের জনগণ বহুদলীয় গণতান্ত্রিক অধিকার, ন্যায় বিচার, মানবাধিকার, সুশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে আসছে। এসব অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত হবে।
বিএনপির মতে- বাংলাদেশের জনগণ বর্তমানে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশ গ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছে। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের এই ক্রান্তিকালে গণতন্ত্রকে রক্ষা এবং অব্যাহত রাখার জন্য আগামী নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ।
একমাত্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। তাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা নতুন প্রজন্ম বহুদলীয় গণতন্ত্রকে রক্ষা এবং অব্যাহত রাখার জন্য একটি বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করবে।
আজ সময় এসেছে, দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক, শক্তিশালী, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার। বাংলাদেশের জনগণ এই স্বপ্নকে লালন করেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে অংশ গ্রহণের জন্য তরুণ-প্রজন্মসহ দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান দলটির নেতৃবৃন্দ।
নিউজরুম