কৃষি ডেস্ক(১২ ফেব্রুয়ারী): ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পাবনার বেড়া উপজেলার বোরো চাষিরা হন্যে হয়ে ছুটছেন চারার পেছনে। কয়েক গুণ বেশি দাম দিয়েও যখন তাঁরা চারা সংগ্রহ করতে পারছেন না, তখন হাতিগাড়া এলাকার কৃষক ফিরোজ ‘শুষ্ক বীজতলা’ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করে পেয়েছেন উন্নত মানের চারা। নতুন পদ্ধতির এই বীজতলা দেখতে প্রতিদিনই তাঁর জমিতে ভিড় করছেন এলাকার অসংখ্য কৃষক।
শুধু ফিরোজ একা নন, তাঁর মতো পাবনা উপজেলার আরও চার-পাঁচজন কৃষক এই পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করে সুফল পেয়েছেন। এতে তাঁদের চারা উৎপাদনের খরচ ও ঝামেলা দু-ই কমে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষকেরা প্রতিবছরের মতো এবারও চারা উৎপাদনের জন্য খোলা পদ্ধতিতে জলাবদ্ধ জমিতে বীজতলা তৈরি করেছিলেন।কিন্তু ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে বেশির ভাগ কৃষকের বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চারার তীব্র সংকট দেখা দেয়।
কৃষকেরা জানান, উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা নতুন উদ্ভাবিত ‘শুষ্ক বীজতলা’ পদ্ধতিতে চারা তৈরির জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ কৃষক সেই পরামর্শ শোনেননি। তবে উপজেলার চার-পাঁচজন কৃষক ওই পরামর্শ অনুযায়ী শুষ্ক বীজতলা তৈরি করে সাফল্য পান।
বেড়া কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল বারী বলেন, ‘আমার আওতাভুক্ত এলাকার অনেক কৃষককে এই পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরির পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু শুধু ফিরোজ মিয়া আমার কথা শুনেছেন। তাঁর বীজতলার চারা দেখে অন্য কৃষকেরা অভিভূত। আমার মনে হয়, আগামীবার বছর থেকে এই পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরির হিড়িক পড়ে যাবে।’
উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এবারই প্রথম বেড়ায় ‘শুষ্ক বীজতলা’ পদ্ধতিতে চারা তৈরি হয়েছে। এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরির জন্য প্রথমে আর্দ্রতাসম্পন্ন শুকনো জমি নির্বাচিত করতে হবে। সেই জমি ভালোভাবে চাষ করে তাতে অঙ্কুরিত বীজ ছিটিয়ে দিতে হবে। তারপর গোবর মেশানো মাটি ছিটিয়ে দিয়ে বীজতলা ভেজাতে হবে। পরে পলিথিন দিয়ে বীজতলা এমনভাবে ঢেকে দিতে হবে, যাতে বাতাস ঢুকতে না পারে। ২০ থেকে ২৫ দিন এভাবে ঢেকে রাখলে গজানো চারাগুলো রোপণের উপযোগী হবে। বীজতলার পানি সেচের প্রয়োজন নেই। তবে শেষের তিন-চার দিন পলিথিন তুলে কিছুক্ষণের জন্য রোদ লাগিয়ে আবার ঢেকে রাখতে হবে।
বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঈসমাইল হোসেন বলেন, শুষ্ক পদ্ধতিতে চারার উৎপাদন খরচ কম হয়। পাশাপাশি ফলন শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ বেশি হয়। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে তদারকি করে চার-পাঁচজন কৃষককে দিয়ে এবার এই পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করিয়েছি। এখন এলাকার সব কৃষকের মধ্যে সাড়া পড়ে গেছে। আশা করছি, আগামী দিনে শীত ও কুয়াশায় কৃষকেরা আর ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।’
নিউজরুম