আর্ন্তজাতিক ডেস্ক(১২ ফেব্রুয়ারী): মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আজ মঙ্গলবার স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দেবেন। বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ জোরালো করার ওপর তিনি এই ভাষণে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাসে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি ওবামা সরকারের জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত ইস্যুগুলোর অন্যতম।সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এই অস্ত্রভান্ডার এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার ব্যাপারে দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন।
ওবামা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা নির্দিষ্টকরণের ওপর তাঁরা আপত্তি সত্ত্বেও আলোচনা চালাচ্ছেন। কিন্তু হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের মোতায়েন করা পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা এক হাজারের ওপরে সীমিত করতে আগ্রহী।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মোতায়েন করা পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা প্রায় এক হাজার ৭০০। তবে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পাদিত নতুন কৌশলগত অস্ত্র হ্রাস চুক্তির অধীন ২০১৮ সালের মধ্যে এটি এক হাজার ৫৫০-তে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। ২০০৯ সালের শেষ দিকে মার্কিন সিনেটে এই চুক্তি পাস হয়।
অস্ত্র হ্রাস আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা পারমাণবিক অস্ত্র অনেকটা কমাতে আগ্রহী। তিনি বিশ্বাস করেন, এতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো ছাড় না দিয়েই বিপুল পরিমাণ অর্থ বাঁচানো সম্ভব। আর তাঁর এই ধারণায় সায় দিয়েছেন মার্কিন জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ।
বিশ্লেষকেরা বলেন, অস্ত্র হ্রাস পরিকল্পনাকে কীভাবে বাস্তবে রূপ দেওয়া হবে, তা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন রয়ে গেছে। কেননা দীর্ঘদিন ধরে ওবামার এমন দৃষ্টিভঙ্গি উপেক্ষিত হয়ে আসছে।স্টার্ট নামে পরিচিত ওই নতুন কৌশলগত অস্ত্র হ্রাস চুক্তির আওতায় মাঝারি মাত্রায় অস্ত্র কমিয়ে আনার বিষয়েও সিনেটে রিপাবলিকান সদস্যরা বিরোধিতা করেছেন। আবার হোয়াইট হাউস ওই চুক্তির সব শর্ত মেনে রাশিয়ার সঙ্গে পুরোপুরি সমঝোতা করতেও অনিচ্ছুক। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা মনে করেন, এ রকম সমঝোতার ফলে ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ওপর রাশিয়ার বিধিনিষেধ আরোপের দাবি আরও উসকে উঠবে। এ ছাড়া সিনেটে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে সৃষ্টি হবে বড় ধরনের সংঘাত।
কর্মকর্তারা জানান, পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাস নিয়ে অভ্যন্তরীণ সংঘাত এড়াতে ওবামা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কীভাবে একটি অনানুষ্ঠানিক চুক্তি করা যায়, সে বিষয় বিবেচনা করছেন। ওবামা মনে করেন, এতে স্টার্ট চুক্তির অনুসমর্থন (র্যাটিফিকেশন) ছাড়াই ওই চুক্তির কাঠামোর মধ্যে থেকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে দুই দেশের পারমাণবিক অস্ত্র কমানো সম্ভব। এ নিয়ে গ্রীষ্মের শুরুতে দুই নেতার মধ্যে শীর্ষ বৈঠকের পথ সুগম করতে ওবামার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা টম ডনিলন আগামী মাসে রাশিয়া সফরের পরিকল্পনা করছেন।
কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাসের বিষয় নিয়ে ওবামা প্রশাসনের মধ্যে দুই বছর ধরেই আলোচনা চলছে। কয়েক মাস হলো এ-সংক্রান্ত নথিপত্র প্রেসিডেন্ট ওবামার ডেস্কে চূড়ান্তভাবে অপেক্ষা করছে।তবে সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য তা অধরাই থেকে যায়। ওবামা পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাস পরিকল্পনাকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মিট রমনির নির্বাচনী ইস্যুতে পরিণত করতে চাননি। কেননা, রমনি প্রচারাভিযানকালে ‘রাশিয়া এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বর ভূকৌশলগত শত্রু’ বলে ঘোষণা দেন। ওবামা সে সময় এই মন্তব্যকে ‘স্নায়ুযুদ্ধ থেকে রমনি বেরিয়ে আসতে পারেননি’ বলে উপহাসবাক্য বানাতে সক্ষম হন। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।
নিউজরুম