১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩: হুমায়ূনকে উত্সর্গ করে বিপাকে!
এবারের মেলা উত্সর্গ করা হয়েছে জননন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদকে। মেলারউদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হুমায়ূনের নামটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি প্রধানমন্ত্রী, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক কিংবা কোনো অতিথি। মেলার দ্বিতীয় দিন একাডেমীপ্রাঙ্গণ থেকে বেরুতেই কয়েকজন সাংবাদিকের ক্ষুব্ধ কণ্ঠ শোনা গেল—হুমায়ূনকেউত্সর্গ করা হয়েছে মেলা অথচ হুমায়ূনের নাম নেই কোথাও। হুমায়ূন আহমেদেরছোটভাই প্রখ্যাত রম্য লেখক আহসান হাবীবও এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।তিনি বলেছেন, ‘হুমায়ূনকে উত্সর্গ করে কর্তৃপক্ষ যেন বিপাকে পড়ে গেছে। অথচ এমেলায় হুমায়ূনকে নিয়ে অনেক আয়োজনও করা যেত।’ আহসান হাবীব এ ঘটনাকে বলেছেন ‘দুঃখজনক’।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হুমায়ূন পরিবারের কাউকে আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। খোঁজনিয়ে জানা গেছে, হুমায়ূনের ওপর একাডেমী কোনো আলোচনা বা সেমিনারেরও আয়োজনকরেনি। নিছক উত্সর্গ করেই ‘দায়’ সেরেছে বাংলা একাডেমী।
মসজিদের খোঁজে
বাংলা একাডেমীর ছোট্ট মসজিদটি গ্রাস করেছে নবনির্মিত ভবন। ফলে মেলায় এসেঅনেকেই মসজিদ খুঁজে পাচ্ছেন না। মেলার দ্বিতীয় দিন দাঁড়িয়েছিলাম মেলাপ্রাঙ্গণে। সালাতুল মাগরিবের আজান হচ্ছিল। একজন বললেন, আমরা আরও বিশ মিনিটপর নামাজে যাব। এখন গেলে জায়গা পাব না। বাংলা একাডেমীর বিক্রয় কেন্দ্রেরপাশেই নামাজের ছোট স্থান। বিশ মিনিট পর হাজির হলেও আমাদের অপেক্ষা করতে হলোআরেকটি জামায়াত শেষ হওয়া পর্যন্ত। চতুর্থ জামাতে নামাজ পড়লাম। নামাজেরজন্য অপেক্ষমাণ একজন সহসাই বলে উঠলেন, বাংলা একাডেমী একটু বেশি মাত্রায়সেক্যুলার। আরেকজন মন্তব্য করলেন, সেক্যুলার হলে তো ভালোই হতো। নামাজআদায়ের জন্য আরও ভালো ব্যবস্থা থাকত।
এক সপ্তাহ পর স্টল নম্বর
মেলার প্রথম পাঁচদিন পাঠক-ক্রেতাদের বেশ হয়রানির শিকার হতে হয়েছে স্টলগুলোরগায়ে নম্বর না থাকায়। বুধবার মেলায় ঢুকে দেখা গেল নম্বর লাগানো হয়েছে, মেলা শুরু হয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি, স্টলের গায়ে নম্বর লাগানো হয়েছে ৬ফেব্রুয়ারি। এতে ব্যবস্থাপনার শৈথিল্য ও দুর্বলতা প্রমাণিত হয়েছে।
ষষ্ঠদিনেও বন্ধ স্টল
বুধবার মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে দেখা গেল, মাগরিবের পরপরই বেশ কিছু স্টল বন্ধহয়ে গেছে। ৪৭২ নম্বরে ডত্রঃবত্ং.ওহশ নামের প্রতিষ্ঠানটিতে দেখা গেল পর্দা।৪২১ নম্বরে মডেল পাবলিশিং হাউজেও দেখা গেল পর্দা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুরু থেকেই স্টলগুলোর এ অবস্থা। ডত্রঃবত্ং.ওহশ-এ নেই পর্যাপ্ত প্রকাশনা।নেই তাদের বেচাবিক্রিও। ফলে দু’এক ঘণ্টা খোলা রেখেই স্টলটি বন্ধ করে দেয়াহয়, মেলা চলাকালে স্টল বন্ধ রাখার নিয়ম না থাকলেও গত বুধবার পর্যন্ত এ রকমইদেখা গেছে কয়েকটি স্টলের অবস্থা।
ক্যান্টিনে ফাস্টফুড
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণেরএকমাত্র ক্যান্টিন। এখানে খাবারের দাম আকাশ ছোঁয়া। সপ্তাহে দু’দিন শুক্র ওশনিবার সকাল থেকে মেলা শুরু হয়। এ দিন স্টল মালিক, তাদের কর্মচারী ও বিক্রয়কর্মীদের বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়। বেশ কয়েকজন স্টল মালিক এ ব্যাপারে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, ক্যান্টিনে স্বল্পমূল্যে ডাল-ভাত, মাছ-ভাতেরব্যবস্থা রাখা উচিত ছিল। দুপুরে ফাস্টফুড কিংবা রিচফুড খাওয়া নিরাপদ নয় বলেতাদের অভিমত।
চার ফুট ব্যানার কয় ফুট হয়
বাংলা একাডেমী ঘোষিত নিয়ম অনুযায়ী মেলায় বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতাদের স্টলে সর্বোচ্চ ৪ ফুট উঁচু ব্যানার লাগাতে পারবেন। এক ইউনিট স্টল হলে৪ ফুট বই ৬ ফুট; দুই ইউনিট হলে ৪ ফুট বাই ১২ ফুট। তিন ইউনিট হলে ৪ ফুট বাই১৮ ফুট ব্যানার লাগাতে হবে। কিন্তু মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেল, অন্যপ্রকাশ, মিজান পাবলিশার্স, তাম্রলিপিসহ বেশকিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানেরব্যানারে উচ্চতা চার ফুট ছাড়িয়ে অনেক উঁচুতে উঠে গেছে।
মহিলাদের জন্য টয়লেট নেই?
আছে। কিন্তু কোথায় কেউ জানে না। মেলা প্রাঙ্গণে মহিলাদের টয়লেটের ব্যাপারেকোনো নির্দেশিকাও নেই। ফলে অনেক মহিলাই স্টলগুলোতে বিক্রয় কর্মীদের কাছেজানতে চান, মহিলাদের জন্য টয়লেট নেই? অবশেষে শুরু হলো খোঁজাখুঁজি। জানাগেল, বাংলা একাডেমীর মূল গেট দিয়ে ঢুকলেই বাম পাশে মহিলাদের জন্য টয়লেটেরব্যবস্থা আছে। গত বুধবারও দেখা গেছে, মহিলাদের অনেক খোঁজাখুঁজি করে জেনেনিতে হচ্ছে টয়লেটের অবস্থান।
ভারতীয় বই
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দি স্কাই পাবলিশার্সসহ বেশকিছু স্টলে দেখা গেছে ভারতীয়বাংলা বই। পাইরেসির বিরুদ্ধে এত কথা হচ্ছে, বাংলা একাডেমীর মেলা সংক্রান্তনীতিমালা বাস্তবায়নের কথা হচ্ছে, কিন্তু ভারতীয় বাংলা বই থাকছেই মেলাপ্রাঙ্গণে। নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশী লেখক, অনুবাদক ও প্রকাশকদের বই-ইথাকার কথা মেলায়। অথচ সুনীল, সমরেশের দেদার বইপাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারেএখনও কোনো অভিযান পরিচালিত হয়নি বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একপ্রকাশক জানিয়েছেন, বাংলা একাডেমী নাকি এমন একটি ঘোষণা দিয়েছে, যাতে বলাহয়েছে বিদেশি বই রাখা যাবে যদি সেগুলো পাইরেটেড না হয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ লেখক সম্মানী পরিশোধের রশিদ দেখাতে হবে। বেশ কয়েকটিসূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কিছুই জানে না।
ধূলিধূসরিত বইয়ের পাতা
অন্যান্য বারের মতো মেলা প্রাঙ্গণ এবারও ধুলোয় ধূসরিত। কয়েকজন প্রকাশকেরসঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, ধুলার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। তাদের দাবি, মেলার কয়েকটি স্পটে যদি পানির পাইপ টেনে কল বসিয়ে দেয়া হয়তাহলে তারাই নিজ উদ্যোগে পানি ছিটিয়ে মেলা প্রাঙ্গণকে ধুলোমুক্ত রাখতেপারেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখতে পারেন।
প্রকাশকের পরিচিতিসহ নির্দেশিকা চাই
একজন প্রকাশক বললেন, প্রতি ইউনিট স্টলের জন্য কর্তৃপক্ষ প্রায় নয় হাজারটাকা করে নিয়েছে। অথচ তারা আমাদের জন্য তেমন কিছুই করেনি। তিনি বলেন, বাংলাএকাডেমী অন্তত মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচিতি ও স্টল নম্বরসহএকটি নির্দেশিকা প্রকাশ করতে পারে। এরকম একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করতে খুববেশি টাকা খরচ হবে না, কিন্তু লাভ হবে অনেক বেশি। লেখক, পাঠক, প্রকাশক, সাংবাদিক-সবারই উপকারে আসবে এরকম একটি প্রকাশনা। মেলায় এটি গাইডের ভূমিকাপালন করতে পারে।
লটারি নিয়ে ক্ষোভ
অনেক স্টল মালিক এখনও ক্ষুব্ধ। তাদের মতে, তারা যথাযথ জায়গায় স্টল পাননি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব প্রকাশক বলেন, এবার মাওলা ব্রাদার্সকে লটারিরবাইরে রাখা হয়েছে এবং তাদের নির্দিষ্ট জায়গা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া পুরনোপদ্ধতিতে যে লটারি করা হয়, এ লটারির বিশ্বাসযোগ্যতা এখন প্রায় শূন্যেরকোঠায়। তাদের দাবি, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যদি লটারি হয় তাহলে কারও আপত্তি থাকবেনা।