রুপশী বাংলা ডেস্ক(১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩): চট্টগ্রামে জামায়াতের ডাকা গতকালের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় ৪ নেতাকর্মী নিহত হওয়া এবং এর প্রতিবাদে পূর্বনির্ধারিত সমাবেশের অনুমতি না দেয়ায় বৃহত্তর চট্টগ্রাম (চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার) জেলায় এ হরতাল ডাকা হয়। হরতালে প্রায় অচল ছিল জীবনযাত্রা।
তবে তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অনলাইন একটিভিস্ট ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নামক দুটি সংগঠন হরতাল প্রতিরোধের ঘোষণা দিলেও তাদের মাঠে দেখা যায়নি। ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের তত্পরতা। হরতালে জামায়াতের তত্পরতাও তেমন একটা ছিল না। বিচ্ছিন্ন কিছু মিছিল ও ভাঙচুর হলেও সাম্প্রতিক সময়ের অন্যান্য হরতালের মতো মাঠে সরব দেখা যায়নি জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের।
রাস্তাঘাটে পিকেটিংও ছিল তুলনামূলক কম। সকাল ৯টার দিকে নগর জামায়াত সেক্রেটারি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে কোতোয়ালি থানার জেল রোড এলাকা থেকে বের হয়ে একটি বিশাল মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জামায়াত নেতারা বক্তব্য রাখেন। সকাল ১০টার দিকে নগরীর ষোলশহর ২ নং গেট এলাকায় হরতাল সমর্থকদের একটি ঝটিকা মিছিল থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করা হয়। এসময় পুলিশ ছুটে এলে মিছিলকারীরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।একই সময় হামজারবাগ এলাকায় একটি টেম্পো ভাঙচুর করা হয়। বিকালে নগরীর বিবিরহাট এলাকায় হরতাল সমর্থকরা মিছিল বের করে একটি হিউম্যান হলার ভাঙচুর করে। এসময় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ আসার আগেই এখান থেকে চলে যায় পিকেটাররা। এছাড়া বন্দর, পাঁচলাইশ, বাকলিয়া ও বায়েজিদ থানা এলাকায় পৃথক মিছিল-সমাবেশ করে জামায়াত। তবে এসব কর্মসূচি চলাকালে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। হরতালের কারণে সকাল থেকেই নগরীতে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।চট্টগ্রাম থেকে তিন পার্বত্য জেলা এবং কক্সবাজার সড়কে চলাচলকারী দূরপাল্লার কোনো বাস-ট্রাক ছাড়েনি। শহর এলাকায়ও বাস-ট্রাক ও হিউম্যান হলার চলাচল বন্ধ ছিল। তবে স্বাভাবিক ছিল রিকশা চলাচল। দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই ছিল বন্ধ। চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে কাজ হলেও ট্রাক না চলায় পণ্য পরিবহন হয়নি।
এদিকে অনলাইন একটিভিস্ট ও ঘাতক দালাল নির্মূূল কমিটি গতকালের হরতাল প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিল। তবে হরতাল প্রতিরোধে তাদের কোথাও দেখা যায়নি।নগরীর জামাল খান ও প্রেস ক্লাবের সামনে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে চলা সমাবেশে হরতালবিরোধী নানা স্লোগান দেয়া হয়। এসময় ওই সমাবেশ থেকে দাবি করা হয়, প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়ায় জামায়াত-শিবির প্রকাশ্যে মাঠে নামার সাহস পায়নি। তবে সমাবেশস্থল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল হরতাল প্রতিরোধকারীদের তত্পরতা।
সকালে জেল রোড এলাকার সমাবেশে নগর জামায়াত সেক্রেটারি মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান আওয়ামী সরকারের দুঃশাসন থেকে জনগণ বাঁচতে চায়। বার বার হরতাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করে ব্যর্থ সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে দেশবাসী। হরতাল সফল দাবি করে তিনি বলেন, এই হরতালের মাধ্যমে অবিলম্বে বিতর্কিত রায় এবং ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে জনগণ। তিনি বলেন, সরকার পুলিশকে দলীয় কর্মী হিসেবে ব্যবহার করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম.খা. আলমগীরের নির্দেশেই পুলিশ এবং ছাত্রলীগ যৌথভাবে শিবিরের মিছিলে গুলি চালিয়েছে। তিনি অবিলম্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেন।
জামায়াতের চান্দগাঁও থানার উদ্যোগে হরতাল চলাকালে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় থানা সেক্রেটারি মুহাম্মদ কলিম উল্লাহর সভাপতিত্বে। এতে বক্তব্য রাখেন জামায়াত নেতা আজম ওবায়দুল্লাহ, এমএ রািফক, এএম আলী প্রমুখ।
নিউজরুম