১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩: গণিতের ছেলেটি যখন গান গায় তখন মুগ্ধ হতে হয়। আর গানের ছেলেটি যখন পড়তে যায় বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে তখন বিস্মিত হতে হয়। এই মুগ্ধ-বিস্ময় জাগানিয়া ছেলেটির নামও মুগ্ধ। পুরো নাম মির্জা তানজীম শরীফ। মুগ্ধ তাঁর মেধার মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন ‘মুগ্ধ’ হিসেবেই। শুধু দেশেই নয়, বিদেশ অব্দি ছড়িয়েছেন সেই মুগ্ধতার আবেশ।
কীভাবে? সেই গল্প শুনতেই একদিন মুখোমুখি হই মুগ্ধ ওরফে মির্জা তানজীম শরীফের। বলতে দ্বিধা নেই, সদ্য কৈশোর পেরোনো সেই হ্যাংলা পাতলা তরুণকে দেখে সত্যিই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল, এরই মধ্যে তিনি তাঁর ঝুলিতে কীভাবে ভরেছেন চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ প্রতিযোগিতায় ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন শিরোপা এবং ২০১২ সালে আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত ৫৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ‘অনারেবল মেনশন’। আর জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে ছয় ছয়বার চ্যাম্পিয়ন!
মুগ্ধ সাবলিল কণ্ঠে বলতে শুরু করেন, ‘আমাকে দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমি জাদু বিদ্যা জানি না। আমি শুধু চেষ্টা করে যাই আর আমার চেষ্টাই আমাকে সাফল্যের পথ দেখায়।’
মুগ্ধর চেষ্টা মুগ্ধকে সাফল্যের পথ দেখাতে শুরু করে সেই ছোটবেলাতেই। তিনি পঞ্চম শ্রেণীতেই পেয়ে যান ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। তারপর অষ্টম শ্রেণীতেও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিকে জিপিএ ৫ এবং একই ধারাবাহিকতায় নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকেও
জিপিএ ৫।
পড়ালেখায় সফল এই মুগ্ধ পাশাপাশি সাফল্য দেখিয়েছেন নাচ ছাড়া শিল্পের আর সকল শাখায়। জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে নতুনকুঁড়ি, শাপলা কুঁড়ি, পদ্ম কুঁড়ি, উপস্থিত বক্তৃতা, রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, গণিত অলিম্পিয়াড কিংবা পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড—যখন যে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন সেখানেই হয়েছেন সেরা। আছে খেলাধুলাতেও সাফল্য। ২০০৮ সালে আন্তস্কুল টেবিল টেনিস ও বাস্কেট বল প্রতিযোগিতায় ছিলেন চ্যাম্পিয়ন। সবমিলিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ২৯টি জাতীয় পুরস্কার!
মুগ্ধর জন্ম ময়মনসিংহের চড়পাড়ায়।বাবা ইসকান্দর মির্জা একজন কলেজ শিক্ষক। মা তাহমিনা বেগম স্বাস্থ্য-পরিদর্শক। তিন ভাইয়ের মধ্যে মুগ্ধ দ্বিতীয়। তৃতীয় ভাইটি মুগ্ধর জমজ ভাই। তাই খাতির বেশি জমজ ভাইটির সঙ্গেই। ‘তবে বড় ভাইয়া আমার বন্ধুর মতো। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাব-মার সঙ্গেও।’ অকপটে স্বীকার করলেন মুগ্ধ। বললেন, ‘বাবা-মা কখনোই তাঁদের ইচ্ছা আমার ওপর চাপিয়ে দেননি। বরং আমার প্রতিটি কাজে উৎসাহ দিয়েছেন।’ তাই হয়তো ক্ষণে ক্ষণে মুগ্ধর ইচ্ছা বদল হতো। এই পাইলট হতে চাইতেন তো দুমাস বাদে হতে চাইতেন ডাক্তার! ‘এখন অবশ্য একটাই ইচ্ছা। প্রকৌশলী হওয়া।’ হাসতে হাসতে বললেন তিনি। হাসি থামিয়ে ফের বলেন, ‘গান নিয়েও আমার স্বপ্নের শেষ নেই। আমি শাস্ত্রীয় সংগীতের সঙ্গে পাশ্চাত্য সংগীতের ফিউশন ঘটাতে চাই। হতে চাই একজন ভালো মিউজিক কম্পোজার।’
আর গণিত? ‘গণিত আমার সবচেয়ে পছন্দের বিষয়। ইশ! গণিত নিয়েই যদি সারা জীবন পড়তে পারতাম!’ গণিতের প্রতি এই ভালো লাগা জেনে নিয়ে আমরা জানতে চাই আরো ভালো লাগার কথা। তখন মুগ্ধ বলেন, ‘ভালো লাগে বই পড়তে আর ঘুরে বেড়াতে।’