কৃষি ডেস্ক(১০ ফেব্রুয়ারী): ‘সবজি যারা আবাদ কইছে, (করেছে) ওরা এইবার বড়লোক হই গেল।’ দিনাজপুর সদর উপজেলার মাশিমপুর গ্রামের কৃষক আবদুল ওয়াহেদ শীত মৌসুমে সবজি চাষে কৃষকের লাভবান হওয়ার তথ্যটি এভাবেই প্রকাশ করেন।
তিনি এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছিলেন। বিক্রি করে দাম পেয়েছেন এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, আলু, করলা—যে সবজিই কৃষক লাগিয়েছেন, আশাতীত মূল্য পেয়েছেন।
সরেজমিনে দিনাজপুর সদর, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবার ব্যাপক সবজি চাষ চোখে পড়ে। চাষি ছাড়াও পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে সবজিতে ভালো মূল্য পাওয়ার তথ্য মেলে।
কৃষকেরা জানান, বছরের এই সময় মানুষ গরু-ছাগলকে সবজি খাওয়ায়। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। বাজারে সবজির চাহিদা, সরবরাহ এবং যথেষ্ট মূল্য পাওয়া যাচ্ছে।
এবার কৃষকের সবজি বিক্রি করতে বাজারে যেতে হচ্ছে না, পাইকারেরা এসে জমি থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলার উলিপুর গ্রামের কৃষক আলিমুদ্দিন জানান, তিনি ১০ শতক জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। সপ্তাহে দুই দিন দুই মণ করে ২০ টাকা কেজি দরে জমিতেই বেগুন বিক্রি করছেন। মহব্বতপুর গ্রামের কৃষক আবদুল মান্নান জানান, তিনি ২৪ শতক জমিতে চাষ করে দুই মাসে ৪০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেছেন।
মোহনপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, এক বিঘা (৫০ শতক) জমিতে শিম চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। সপ্তাহে চার দিন সাত মণ করে শিম তোলেন। প্রথম দিকে ৪০ টাকা, পরে ৩০ টাকা, আরও পরে ২০ টাকা ও বর্তমানে ১৫ টাকা কেজি দরে জমিতেই শিম বিক্রি করছেন।
কৃষক আবদুর রশিদ পাঁচ হাজার টাকা ব্যয় করে ১৫ শতক জমিতে গোটা পেঁয়াজ লাগিয়ে ২০ হাজার টাকায় তা বিক্রি করেছেন বলে জানান।
শেখপুরা ইউনিয়নের ভাটিনা গ্রামের কৃষক আবুল হাশেম জানান, তাঁরা মৌসুমের শুরু থেকেই জমিতে বসে টমেটো বিক্রি করেছেন ৩০ টাকা কেজি দরে।
জেলা শহরের প্রধান বাহাদুর বাজারের পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি হিসেবে প্রতি পাঁচ কেজি আলু ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ২২ টাকা। বেগুন পাঁচ কেজি ১২৫ টাকা, খুচরা মূল্যে তা প্রতি কেজি ২৫ থেকে ২৮ টাকা। পাঁচ কেজি শিমের দাম রাখা হচ্ছে ১২০ টাকা আর প্রতি কেজির দাম ২৮ টাকা। পাঁচ কেজি ফুলকপির দাম পড়ছে ৭৫ টাকা, তবে প্রতি কেজির দাম ২৪ টাকা।
আড়তদার মো. আবদুল গাফ্ফার গত শুক্রবার বলেন, ৩০ বছর ধরে তিনি বাজারে সবজির ব্যবসা করছেন। এ বছর শুরু থেকে যে দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে, তা অতীতে দেখা যায়নি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আনোয়ারুল আলম এ প্রতিবেদককে বলেন, জেলার ১৩ উপজেলায় ৩৭ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে আলু এবং নয় হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মুলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ৪০০ হেক্টর বেশি জমিতে আলু এবং ৩৮৪ হেক্টর বেশি জমিতে সবজির চাষ হয়েছে।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বিধান চন্দ্র হালদার বলেন, মানুষ বেশি করে সবজি খাচ্ছে। আর কৃষকদের মাঝেও সচেতনতা বেড়েছে। লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করে নিজেরাই পণ্যের দাম নির্ধারণ করে খেতেই তা বিক্রি করছেন।
নিউজরুম