কৃষি ডেস্ক(০৯ ফেব্রুয়ারী): কুল আমাদের দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমি ফল। কুল চাষে এর আগে পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন দেখা না গেলেও বর্তমানে কুল চাষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু পোকা কুলের উত্পাদন বৃদ্ধিতে মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করছে। ফলে কুলের উত্পাদন বৃদ্ধি ও ফসলটি রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। এই পোকামাকড়ের মধ্যে কুল বাগানে ফল ছিদ্রকারী উইভিল পোকা ও টিউব স্পিটল বাগ পোকা অন্যতম। এসব পোকা কীভাবে ক্ষতি করে এবং তা দমনে কী কী করণীয় সে বিষয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ফল ছিদ্রকারী উইভিল পোকা : ফল ছিদ্রকারী উইভিল কুল গাছের মারাত্মক ক্ষতিকারক পোকা। কয়েক বছর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কুলের উন্নত জাতে এ পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। পোকার সদ্যজাত লার্ভা হালকা হলুদ বর্ণের এবং এদের পা থাকে না। পূর্ণ বয়স্ক পোকা গাঢ় বাদামি থেকে কালো বর্ণের হয়। পূর্ণ বয়স্ক পোকা কচি ফলে ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে লার্ভা ও পিউপা থেকে পূর্ণ রূপ ধারণ করে। সদ্যজাত লার্ভা কচি ফলের বীজে আক্রমণ করে এবং সম্পূর্ণ বীজ খেয়ে ফেলে। আক্রান্ত ফলের নিচে কালো দাগ পড়ে এবং বীজের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, ফল ছোট গোলাকার হয় এবং ফ্যাকাশে ও হলুদ বর্ণ ধারণ করে। আক্রান্ত ফল গাছ থেকে ঝরে পড়ে বা গাছ শুকিয়ে যায়। আক্রান্ত ফলে পোকার লার্ভা বা পিউপা বা পূর্ণ বয়স্ক পোকার মল দেখা যায়। ফলের ভেতরের অংশ খাওয়ার পর গোলাকার ছিদ্র করে পোকা বের হয়ে আসে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে বাগানের সব গাছের ফল আক্রান্ত হয়। তবে আপেল কুল ও বাউ কুলে আক্রমণ বেশি হয়। সাধারণত গাছে ফুল আসার পর এ পোকার আনাগোনা দেখা যায় এবং পরাগায়নের পর গাছে ফল ধরা শুরু হলে পোকার আক্রমণ শুরু হয়।
প্রতিরোধ : কুল বাগানের আশপাশের ঝোপজঙ্গল ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। কুল গাছে অসময়ে আসা ফুল ও কুঁড়ি নষ্ট করে ফেলতে হবে। গাছ ও মাটিতে পড়ে যাওয়া আক্রান্ত ফলগুলো সংগ্রহ করে লার্ভা বা পিউপা বা পূর্ণ বয়স্ক পোকাসহ ধ্বংস করতে হবে। বেশি আক্রান্ত এলাকায় ফুল ধরার আগেই সারা বাগান ও এলাকা অনুমোদিত কার্বারাইল জাতীয় কীটনাশক বা ডাইমেথোয়েট জাতীয় কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। যেহেতু পোকাটি ফলে ডিম পাড়ে এবং লার্ভা ফলের ভেতর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, সেজন্য আক্রমণের আগেই পোকা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।এজন্য পরাগায়নের পর ফল ধরা শুরু হলে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
টিউব স্পিটল বাগ : এ পোকা কুল গাছের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে থাকে এবং এর আগে কখনও এ পোকার আক্রমণ দেখা যায়নি। পোকার নিল্ফগুলো সরু, লম্বা চুনযুক্ত টিউবের মধ্যে অবস্থান করে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। নিল্ফগুলো টিউবের মধ্যে তাদের তৈরি ফ্লুয়িডে নিজেকে লুকিয়ে রাখে এবং টিউবে এদের মাথা নিচে ও পেট উপরে রাখে। নিল্ফগুলোর পেটে একটি বর্ধিত প্লেট থাকে যা টিউবের খোলা প্রান্তে দরজা হিসেবে কাজ করে এবং টিউবকে বন্ধ করে দেয়। পূর্ণ বয়স্ক পোকা এবং নিল্ফ ফুল থেকে রস চুষে খায়। আক্রান্ত ফুল সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে যায় এবং ফল ধারণের অনুপযোগী হয়। অধিক আক্রান্ত গাছ সম্পূর্ণরূপে ফল ধারণে ব্যর্থ হয়। এরা মধু রস নিঃসৃত করে যেখানে স্যুটি মোল্ড জন্মে। ছায়াযুক্ত স্থানে আক্রমণ বেশি হয়। সাধারণত কুল গাছে ফুল আসার সময় আক্রমণ বেশি হয় এবং টিউবের মধ্যে নিল্ফ দেখা যায়। পরে ফুল ধরা শেষ হলে এরা টিউব ছেড়ে চলে যায় এবং গাছে শুধু খালি টিউব পড়ে থাকে।
প্রতিরোধ : জমি সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে যাতে ডালপালা পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পায়। ছায়াযুক্ত জায়গায় কুল চাষ না করাই উত্তম।হাত বা শক্ত লাঠি দিয়ে টিউবগুলো নিল্ফসহ ধ্বংস করতে হবে। যেহেতু ফুল ধরার সময় এ পোকার আক্রমণ দেখা যায় সেজন্য গাছে ফুল আসার সময়ে কাণ্ড বা শাখায় টিউব দেখামাত্র সাইপারমেথ্রিন বা ফেনভালারেট জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মি.লি. হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
সূত্র : কৃষি তথ্য সার্ভিস, রাজশাহী
নিউজরুম