কৃষি ডেস্ক(০৯ ফেব্রুয়ারী): দেশের বিভিন্ন স্থানে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে।সাঁথিয়া অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ ও সময়মত বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাবনার সাঁথিয়ায় কৃষকরা রোপা আমন ধান কাটার পর কার্তিক মাসে তেলজাতীয় ফসল সরিষার আবাদ করেছিলেন ব্যাপকভাবে। এবার সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এলাকায় শুরু হয়েছে সরিষা তোলা ও মাড়াইয়ের কাজ। সরিষা ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে। এবার টরি-৭, রাই-৫, বারি-৯ ও ১৪, এসএস-৭৫ জাতের সরিষা আবাদ করা হয়েছে। সরিষা উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন আমার দেশকে জানান, সঠিক সময়ে, উন্নতমানের বীজ, উফশী জাতের বীজের সহজলভ্যতা, সুষম মাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহার, কৃষকদের সঠিক পরামর্শ প্রদান এবং উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত মাঠ তদারকির ফলে ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ না থাকায় মাঠে সরিষার বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত ভালো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উচ্চমানের ফলন হবে বলে তিনি আশাবাদী।
উপজেলার জোড়গাছা গ্রামের কৃষক ইউনুস আলী জানান, তিনি প্রায় ১ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। তার শ্রমিক, সার, কীটনাশক বাবত খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ টাকা। সরিষা আবাদে খরচ সীমিত হওয়ায় প্রায় ৩ মাসের মধ্যে সরিষা ঘরে তোলা যায়। এছাড়া বিঘাপ্রতি গড়ে সরিষা ৫-৬ মণ ফলন হয়। মৌসুমের সময় সরিষার বাজারদর ২ হাজার ৫০০ টাকা হলেও পরে তা ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। খরচ বাদে তার আয় হবে প্রায় ১০ হাজার টাকা।
নীলফামারী : শীতের আগমনে নীলফামারীর প্রকৃতিক রূপ বদলে যাচ্ছে। এবার সরিষার ব্যাপক চাষ হয়েছে, দিন দিন আবাদ বেড়েই চলছে। নীলফামারী জেলায় এ বছর ১৫১০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ২০২০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৬শ’ হেক্টর বেশি। জেলায় এ বছর সরিষার ফলন আশা করা হচ্ছে হেক্টরপ্রতি ১ টন করে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর কৃষককে সরিষা চাষে সচেতন করা হয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সরিষা চাষ হবে বলে তাদের ধারণা। তাছাড়া কর্মকর্তারা সব সময় মাঠে থেকে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছেন।
মো. মোস্তাফিজুর রহমান আমিন ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
সরিষা ফুলের হলুদ বর্ণে বর্ণিল হয়ে উঠেছে ভৈরবের মাঠ-প্রান্তর। ফুলের মৌ মৌ গন্ধে চারদিক বিমোহিত। মৃদু বাতাসের দোলায় প্রস্ফুটিত সরিষার ফুলের সঙ্গে মৌমাছি ও নানা জাতের ফড়িং আর প্রজাপতির নাচন কৃষকের দুই চোখে জমিয়েছে ভালো ফলন পাওয়ার স্বপ্ন। স্বল্প খরচ ও পরিশ্রমে অধিক ফলন ও ফসল বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় সরিষা চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন ভৈরবের কৃষকরা। ফলে এখানে প্রতি বছরই আশাব্যঞ্জক বাড়ছে সরিষার আবাদ। বীজ বোনার দুই মাসের মধ্যে সরিষার ফলন ঘরে তোলা যায় বলে বোরো আবাদের কোনো সমস্যা হয় না বলেও সংশ্লিষ্টদের অভিমত। সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া ছাড়া আর কোনো সারের প্রয়োজন পড়ে না সরিষার আবাদে। চারা গজানোর পরপর আগাছা পরিষ্কার ছাড়া তেমন কোনো শ্রমেরও দরকার হয় না। তাই প্রতি বিঘা সরিষা আবাদে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার বেশি খরচ হয় না। কৃষকরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে সরিষার ফলন হয় ৬ থেকে ৭ মণ এবং প্রতি মণ সরিষা দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি করলেও ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা পাওয়া যায়। ফলে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা মুনাফা হয় কৃষকদের। ধানসহ অন্য যে কোনো ফসল আবাদে এমন মুনাফা না পাওয়ায় ধীরে ধীরে ভৈরবের কৃষকরা সরিষা আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
ভৈরব কৃষি অধিদফতর জানায়, কয়েক বছর আগেও সরিষা চাষে আগ্রহী ছিলেন না স্থানীয় কৃষকরা। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের তেলের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শসহ নানা সহযোগিতা দিয়ে আগ্রহী করে তুলছে। অন্যদিকে অল্প শ্রম আর খরচে অধিক মুনাফা পাওয়ায় কৃষকরাও সরিষা আবাদে আকৃষ্ট হচ্ছেন।সাধারণ দেশীয় জাতের সরিষা আবাদে কৃষক আগে যেখানে প্রতি হেক্টরে ফলন পেতেন এক টনেরও কম, সেখানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আবিষ্কৃত ‘বারী-৯’ জাতের বীজ চাষ করে ফলন পাচ্ছেন দেড় থেকে দুই টন। বারী-৯ জাত আবাদে ফলনও ওঠে খুব অল্প সময়ে। তাই সরিষার আবাদ শেষে বোরো ধান আবাদে কোনো ধরনের সমস্যা হয় না। ফলে দিন দিন সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে আশানুরূপ। চলতি মৌসুমে ভৈরবে দেড় হাজার একর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও, চাষ হয়েছে প্রায় আঠারশ’ একর। গত মৌসুমে দেড় হাজার একর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিল।প্রতি বছর এ হারে ভৈরবে সরিষার আবাদ বৃদ্ধিকে আশপাশের বিভিন্ন এলাকাসহ সারা দেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছে সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ।
নিউজরুম