৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩: ‘পাহাড়ি তরুণাস্থি কাছিম’
গত ১৯ ডিসেম্বর ২০১২ চিঠিপত্র কলামে ড. এস এম এ রশীদ এবং তার আগে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যায় প্রকাশিত (২৩ নভেম্বর ২০১২) বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. রেজা খানের ‘বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ’ শীর্ষক লেখার দু-একটি তথ্যের সংশোধন প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন।তিনি প্রথম যে তথ্যের উল্লেখ করেছেন, সেটি আমার কাজ সংশ্লিষ্ট হওয়ায় পাঠকের বিভ্রান্তি দূর করা প্রয়োজন মনে করছি।
গত নভেম্বর ২০১১ সালে আমি বান্দরবানের দুর্গম রেম্যাক্রি খালে বুনো অবস্থায় একটি বিরল কাছিম পাই, যেটিকে ‘এশিয়াটিক সফটশেল টার্টল’ হিসেবে শনাক্ত করি। পরবর্তীকালে রেজা খান এর বাংলা নাম দেন ‘পাহাড়ি তরুণাস্থি কাছিম’। ঢাকায় ফেরার পর বাংলাদেশের বন্য প্রাণীসংক্রান্ত প্রকাশিত সব বইপত্র, জার্নালের লেখা, দৈনিক পত্রিকার রিপোর্ট ইত্যাদি ঘেঁটে কোথাও বাংলাদেশে ওই কাছিম প্রাপ্তির উল্লেখ না দেখে নিশ্চিত হই যে, এটি বাংলাদেশের জন্য নতুন প্রজাতি। খবরটি সবাইকে জানানোর জন্য লেখা পাঠাই প্রথম আলোতে এবং একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে। প্রথম আলোর শেষের পৃষ্ঠায় কাছিমের রঙিন আলোকচিত্রসহ লেখাটি ছাপা হয় গত ২৩ ডিসেম্বর ২০১১। রেজা খানসহ যাঁরা ওই লেখাটি পড়েছেন, তাঁরা বাংলাদেশে এই কাছিমের প্রাপ্তি সম্পর্কে প্রথম অবগত হন। এমন প্রাপ্তিকে উৎসাহিত করতে রেজা খান তাঁর লেখায় উল্লেখ করেন, ‘২০১১ সালের শেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক মনিরুল এই প্রজাতি প্রথম শনাক্ত করেন।’
ড. এস এম এ রশীদ তাঁর চিঠিতে দাবি করেছেন তিনি এবং তাঁর সংস্থা ক্যারিনাম ২০০৯ সালে ফেনীতে এক কাছিম ব্যবসায়ীর কাছে (যেটি ভারত থেকে এসেছে বলে তিনি সন্দেহ করেন) এবং নভেম্বর ২০১০ সালে ফেনী নদীতে জেলেদের হাতে ধরা পড়া পাহাড়ি তরুণাস্থি কাছিম পান। ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় বাংলাদেশে পাহাড়ি তরুণাস্থি কাছিমের অস্তিত্বের কথা প্রথমবারের মতো প্রকাশ করেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
আমি ড. রশীদকে সাধুবাদ জানাই, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বুনো পরিবেশ থেকে ধরা হয়েছে এমন দুই প্রজাতির কাছিমের (বড় কাইট্টা ও বোস্তামী কাছিম) নমুনা সংগ্রহের জন্য। এই দুটো প্রাপ্তির অব্যবহিত পরই প্রথম আলোয় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু পাহাড়ি তরুণাস্থি কাছিম প্রাপ্তির খবর পত্রপত্রিকা, জার্নালের লেখা অথবা বইপত্রে প্রকাশিত হয়েছে কি? তিনি চিঠিতে আমার লেখা ২৩ ডিসেম্বর ২০১১ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আগে এ-সংক্রান্ত তাঁর প্রকাশিত প্রতিবেদনের রেফারেন্স দেননি। এমনকি সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত যে কর্মশালায় তিনি অংশগ্রহণ করেছেন, তার প্রসিডিংসে বাংলাদেশে পাহাড়ি তরুণাস্থি কাছিমপ্রাপ্তির কোনো উল্লেখ আছে কি? কোনো প্রকার প্রকাশিত রেফারেন্স না থাকলে এ ব্যাপারে সবার অবগত হওয়ার এবং তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করার কোনো সুযোগ আছে কি?
মনিরুল খান
সহযোগী অধ্যাপক, প্রাণীবিদ্যা বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।