ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক(০৯ ফেব্রুয়ারী): দেশের বিভিন্ন শিল্পে আঠার ব্যবহার বাড়ছে। ১০ বছর আগেও প্রধানত চামড়ার জুতা ও ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহূত হতো আঠা। এখন ব্যবহূত হচ্ছে তৈরি পোশাক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, কাঠ এবং কাঠের বিকল্প প্লাইউডসহ বিভিন্ন সামগ্রীতে।
ব্যবহার বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে এর বিস্তার। একসময় শুধু পুরান ঢাকায় আঠার কারখানা থাকলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলিয়ে দেশে আঠা প্রস্তুতকারক কারখানা এখন ৪০টি। এক দশক আগের ১০ কোটি টাকার আঠার বাজার এখন ১০০ কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশ অ্যাডহেসিভ উৎপাদনকারী সমিতি (বিএএমএ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আগে ব্যবসাটি ছিল মূলত পুরান ঢাকার বংশাল, সিদ্দিক বাজার, সিক্কাটুলি ও মালিটোলাকেন্দ্রিক। বর্তমানে এসব এলাকা আঠার মতো পণ্যের কারখানা তৈরির উপযোগী নয়। তাই ঢাকার কাছাকাছি বিভিন্ন স্থানে ও চট্টগ্রামে আঠার কারখানা গড়ে উঠেছে।
বিএএমএ সূত্রে জানা গেছে, আঠার ৩০০ পাইকারি দোকান রয়েছে পুরান ঢাকায়। এসব এলাকায় রয়েছে পাঁচ হাজারের মতো ছোট ও মাঝারি মানের জুতার কারখানা। অন্যদিকে, চকবাজার, মোগলটুলি ও মৌলভীবাজার এলাকায় রয়েছে প্রায় ২০০ ব্যাগের কারখানা। এগুলোতেই ব্যবহূত হয় বিভিন্ন ধরনের আঠা।
সমিতির সভাপতি টিকে চক্রবর্তী প্রথম আলোকে জানান, আঠার কাঁচামাল দেশে হয় না। তা আমদানি করা হয় ভারত, চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে। দেশের রাবার বাগান থেকে একধরনের কাঁচামাল সংগ্রহ করে আঠা তৈরি করা হলেও তা অতটা উন্নত মানের হয় না।
পুরান ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব কারখানায় চামড়া, র্যাক্সিন ও কাপড়ের এক অংশের সঙ্গে অন্য অংশের জোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহূত হয় আঠা। ব্র্যান্ডের জুতা ও ব্যাগের কারখানায় উন্নত মানের আঠা ব্যবহারের বিকল্প নেই।
মজার ব্যাপার হলো, দোকানি ও ব্যবসায়ীদের কেউই একে আঠা বলেন না। তাঁরা বলেন, পেস্টিন, সলিউশন, দুধ, ল্যাটেক্স, গাম ইত্যাদি। এদের মধ্যে আবার গুণগত মানের তারতম্য রয়েছে। অবশ্য এসবের কৌটা বা টিনের গায়ে লেখা থাকে অ্যাডহেসিভ, বাংলায় যাকে বলা হয় আঠা।
এপেক্স এডহেসিভ, অটবি, ওয়ার্ল্ড, পারটেক্স, ফেভিকল, বেইলী, গাজী সলিউশন, সোয়ান, এলজি, প্যান্থার, নাহার, জনতা সুপার ইত্যাদি ব্র্যান্ডের আঠা কারখানা থেকে টিনজাত হয়ে সেগুলো চলে আসে পুরান ঢাকায়। এখান থেকে যায় সারা দেশে। এক থেকে ২০ লিটার পর্যন্ত টিন হয়ে থাকে।
কয়েকটি দোকান ঘুরে জানা যায়, তিন লিটারের ডা-কো ব্র্যান্ডের আঠার দাম ৬৩০ টাকা।তবে ওয়ার্ল্ড ব্র্যান্ডের তিন লিটারের আঠার দাম ৯৩০ টাকা।
সিদ্দিক বাজারের শাহীন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শাহীন আহমেদ জানান, সাধারণত দামি জুতা ও ব্যাগে বেশি দামের আঠা ব্যবহূত হয়। আবার কিছু কারখানায় ব্যবহূত হয় কম ও বেশি দামি—দুই ধরনেরই আঠা।
দেখতে অনেকটা তরল দুধের মতো এবং ছোট ছোট কৌটাজাত করা হয় একধরনের আঠা, যা বাচ্চাদের জুতা তৈরিতে ব্যবহূত হয় বেশি।
বিএএমএর সভাপতি বলেন, লেটেক্স বা দুধের মান তুলনামূলক খারাপ। কারণ, এগুলো অত ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয় না। তিনি মনে করেন সংগত কারণেই উন্নত মানের পণ্য তৈরিতে এগুলো ব্যবহার করা হলে পণ্যের মান টেকসই হবে না।
আরিফ ব্র্যান্ডের জুতা কারখানার স্বত্বাধিকারী আরিফ বিল্লাহ বলেন, রাস্তায় যেসব জুতা বিক্রি হয়, এগুলোতে দুধ লাগানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে তাজমহল, মতিমহল ও হাঁস মার্কা দুধ।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুধের চেয়ে তুলনামূলক গুণগত মানসম্পন্ন আঠা হচ্ছে সলিউশন। তার চেয়েও ভালো হচ্ছে পেস্টিন। কাজী আলাউদ্দিন রোডের জনতা ফোমসের ব্যবস্থাপক অলিউল্লাহ রনি বলেন, ‘পাইকারি দোকানগুলোতে আঠার টিনগুলো সংরক্ষণের দিকটি অনেকেই অবহেলা করেন।মনে রাখা দরকার যে, এটি সহজেই দাহ্যপণ্য। একবার আগুন লাগলে পুরো এলাকা জ্বলে উঠবে।’ কয়েক বছর আগে নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্মরণ করেন তিনি।
বেঙ্গল অ্যাডহেসিভ লিমিটেডের পণ্য হচ্ছে ডা-কো ও এড-কো। বিএএমএর সদস্য ও বেঙ্গল অ্যাডহেসিভের কর্মকর্তা শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, দিন দিন আঠার বহুমুখী ব্যবহার বাড়ছে, বাজারও বাড়ছে। বিভিন্ন আঠা প্রস্তুতকারক কারখানায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৫০ হাজার মানুষ জড়িত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আঠার কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ফাঁকি দিতে কেউ কেউ আন্ডার ইনভয়েসিং করছেন বলে অভিযোগ তোলেন শামসুল আলম। সরকারকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নিউজরুম্