৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩: পিতা ছবির গল্প শুনব শায়নার কাছ থেকে। তার আগে জেনে নিই, হালে কী করছেন তা।মুম্বাইয়ে অনীল কাপুরের ফিউচার স্টুডিও থেকে শুরু করে আশপাশের ফিল্ম বাংলোয় টানা ১৬ দিন শুটিং করেছেন। তাই সময়-অসময়ে ছুটতে হয়েছে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন রাস্তাঘাটে। এশিয়ান টেলিভিশনে প্রচারিতব্য অন্তহীন নাটকের শুটিং শেষে মুম্বাই থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন শায়না আমিন। সেই গল্পই করছিলেন শনিবার লালমাটিয়ায় তাঁর বাসায় বসে।
টানা শুটিংয়ের ধকলে চেহারায় কিছুটা ক্লান্তির ছাপ। ‘আমাকে একটু বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে। অন্তহীন-এ আমি আর আমিন খান ছাড়া সবাই ইন্ডিয়ার কলাকুশলী। আমরা বাংলাদেশের শিল্পী। শুটিংয়ের শুরুতে তাই একটু অবহেলার চোখে দেখতে শুরু করলেন তাঁরা। বিষয়টি আঁচ করে প্রথম থেকেই কাজের প্রতি খ্যাপাটে ছিলাম আমি। একটা সময় কাজের প্রতি আমার আগ্রহ দেখে উল্টো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন মুম্বাইয়ের শিল্পীরা।’ শায়নার সঙ্গে আড্ডার শুরুতে একনাগাড়ে বলে গেলেন তিনি। তারপর একটু দম নিয়ে বললেন, ‘ওদের চেয়ে আমাদের নাটকের গল্প বেশি শক্তিশালী।’
আড্ডার গল্প ততক্ষণে মুম্বাই হয়ে বাংলাদেশের মাটিতে। সেই গল্পে বারবার উঁকি দিচ্ছে একজন পল্লবী।মাসুদ আখন্দ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র পিতায় পল্লবী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এখানে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর ভূমিকায় তাঁর অভিনয় মন ছুঁয়েছে দর্শকের। অভিনয়ের সময় নিজেও অনুভব করেছেন মুক্তিযুদ্ধের আবেগ।আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও সেই আবেগ তাঁর মুখে, ‘যুদ্ধ দেখিনি, কিন্তু অভিনয় করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে অনুভব করেছি ক্ষণে ক্ষণে। প্রতিটি দৃশ্যে যেন আমি মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোয় বারবার ফিরে গেছি।’ এই চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য টানা ২০ দিন গাজীপুরের একটা গ্রামে থাকতে হয়েছে শায়নাকে।তিনি বলেন, ‘সব সময়ই শুটিংয়ের পোশাক পরে থাকতাম। নিজেকে ওই পরিবেশের মধ্যে রাখার চেষ্টা করতাম। একটা ঘটনার কথা বলি, প্রসব বেদনার কষ্টের প্রকাশটা কেমন হবে, নিজে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। শ্রাবণ মেঘের দিন-এ এমন একটা দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন শামীমা আপা (শামীমা নাজনিন)। তাই তাঁর কাছে গেলাম।তিনি আমাকে শেখালেন। পরে এই দৃশ্যে আমার অভিনয় দেখে অনেকেই কেঁদেছেন।’
এবার প্রশ্ন পিতা ছবিতে অভিনয়ের ক্ষেত্রে তাঁর প্রস্তুতি সম্পর্কে।
‘প্রস্তুতি এক দিনের নয়। ছোটবেলায় সিনেমার পোকা ছিলাম। এ জন্য মায়ের হাতে অনেক পিটুনি খেয়েছি। আবার তোরা মানুষ হ, আলোর মিছিল, ওরা ১১ জনসহ মুক্তিযুদ্ধের অনেক নন্দিত ছবি দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। আমার স্কুলশিক্ষক ছিলেন আনিসুর রহমান।তিনি ক্লাসে মুক্তিযুদ্ধের গল্পগুলো এমনভাবে বলতেন, যুদ্ধের ভয়াবহতা যেন আমাদের চোখে ছবির মতো ভেসে উঠত। এসব স্মৃতি বহন করেই এ পর্যন্ত এসেছি।’ একটানা বলেন শায়না। ‘ছবিটি দেখে অনেকেই প্রশংসা করেছেন। ফেসবুক ও ফোনে প্রচুর সাড়া পেয়েছি।’
চলচ্চিত্র থেকেই সাফল্য কুড়াতে চান শায়না। তাঁর কথায়, ‘বড় পর্দায় কাজের অনুভূতি ও আনন্দ অন্য রকমের। এখানকার পরিকল্পনা, শুটিং ও প্ল্যাটফর্ম একেবারেই আলাদা। বড় পর্দায় অভিনয় শিল্পীর গ্রহণযোগ্যতাও বাড়িয়ে দেয়। তাই চলচ্চিত্রের জন্য নিজেকে তৈরি করতে চাই।’
আড্ডার গল্পে শায়নার আয়নায় ভাসছে রাশি রাশি স্বপ্ন।