ডেস্ক রিপোর্ট(৫ ফেব্রুয়ারী ): যে বয়সে একজন মানুষের অভিভাবক বা বাবা-মায়ের দেখভালে বড় হওয়ার কথা, পড়ালেখাসহ অন্যান্য কাজকর্মের অবসরে গান শোনা, বেড়ানো ছাড়াও আরো অনেক কিছু করার কথা, সেই বয়সে কেউ যদি সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় বড় ধরনের দায়িত্বে নিয়োজিত হয় তবে তা কেমন হয়? এ ধরনের কিছু নিশ্চয়ই বিস্ময়কর।এমনই একজন কিশোরী বাসায়ের ওসমান। মাত্র ১৫ বছর বয়সী এই কিশোরী ফিলিস্তিনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর তিনিই হলেন বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র। তার এত অল্প বয়সে মেয়রের পদ অনেকে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। তা ছাড়া স্বার্থান্বেষী দুই-একটি দেশ নিজেদের স্বার্থে প্রায়ই অশান্ত করে ফেলে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন জায়গা। এর একটা ধকল এবং পড়ালেখার চাপ ইত্যাদির পরও সুষ্ঠুভাবে ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন এ কিশোরী। যথাযথভাবে মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পারায় বাসায়ের যেন মহাখুশি।
বেশি দিন হয়নি বাসায়ের ওসমান বিশেষ বৈঠক ডেকেছিলেন।সেখানে উপস্থিত ছিলেন আইনপ্রণেতারাও। বৈঠকটি বসেছিল ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায়। বৈঠকে বাসায়ের নগরজীবনের নানা সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। তিনি সেখানে প্রকল্প হাতে নেয়ার জন্য এমন সব কাজ করেছেন, যাতে তরুণেরা সম্পৃক্ত হয় এতে। তিনি মনে করেন, কোনো প্রকল্প বা কাজের সুফল পেতে তরুণদেরও রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। কারণ তারাই যে একদিন সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলে।
ফিলিস্তনের পশ্চিম তীরের ছোট শহর আলাবের মেয়রের দায়িত্বে দিলেন কিশোরী বাসায়ের ওসমান। তবে তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন মাত্র দুই মাস। সময় বা মেয়াদটা তেমন বেশি না হলেও একজন কিশোরীর পক্ষে তা যেন রীতিমতো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। শহরটির লোকসংখ্যা একেবারে কম নয়, প্রায় আট হাজার। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন শহর পরিচালনার জন্য বেছে নেয় বাসায়েরদের একটি দলকেই। আর তা করা হয় ফিলিস্তিনের ‘যুব ক্ষতায়ন কর্মসূচির’ আওতায়। দায়িত্ব নিয়ে বাসায়ের স্বাভাবিক সব ধরনের কাজই করেন। তিনি শোনেন নগরবাসীর নানা সমস্যার কথা। নানা ধরনের প্রতিবেদন পড়েন। কাগজপত্র বা নথিপত্রে স্বাক্ষরও করেন। সভাও পরিচালনা করেন নিয়মিত।সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, তার (বাসায়েরের) এ সংক্রান্ত কাজকর্ম দেখলে এমনটিই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে তিনি এর আগেও এমন ধরনের আরো দায়িত্ব পালন করেছেন।নিয়মিত কাজের তত্ত্বাবধানও করেন বাসায়ের। দায়িত্বে থাকাকালে তিনি খোলেন একটি দমকল বাহিনীর দফতর। চালু করেন একটি নগর উদ্যান। এমনকি পাথরের খনির দেখভালও করেন। মাস কয়েক আগে বাসায়ের ওসমানসহ বেশ কয়েকজন তরুণের একটি দলের হাতে শহর পরিচালনার গুরু দায়িত্ব তুলে দেন শহরের মেয়র সুফিয়ান শহীদ ও তার পরিষদ। দলটির ১১ জন তরুণের মধ্যে পাঁচজনই ছিলেন নারী। দলটি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে শহর পরিষদের মতোই। তবে তাদের দেয়া হয়নি রাজস্বের দায়িত্ব।
দুই মাসের দায়িত্ব পালনকালে সুফিয়ান শহীদ নগর ভবনে গিয়েছিলেন মাত্র একবার। এর প্রধান লক্ষ্য, কাজের ক্ষেত্রে যাতে ওসমান এবং তার পরিষদের কোনো সমস্যা না হয়। এ প্রসঙ্গে ওসমান বলেন, কাজের ক্ষেত্রে বড়দের যারপরনাই সহযোগিতা পেয়েছি আমরা। তারা আমাদের এ ধরনের একটি জায়গাও করে দিয়েছেন। অবশ্য আমাদের প্রয়োজন ছিল তা।
জানা গেছে, যুব পরিষদগুলোর অন্যতম ছিল বাসায়েরের দলটি। এ পরিষদগুলো গঠন করা হয় মূলত তরুণ ফিলিস্তিনিদের নেতৃত্বদানে প্রস্তুত করার জন্য। আর সে জন্যই শহরের পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের মতো দায়িত্ব পালন করেন এর সদস্যরা। জানা যায়, এ ধরনের আরো অনেকগুলো যুব পরিষদ রয়েছে পশ্চিম তীরে। বাসায়ের ওসমান প্রথম নারী সভাপতি এ ধরনের যুব পরিষদের। ভবিষ্যতে বাসায়ের নিজেকে গড়ে তুলতে চান জননেতা হিসেবে। উচ্চতর শ্রেণীতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে পড়াশোনা করারও ইচ্ছা আছে প্রতিভাবান বাসায়েরের। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি সব সময়ই তরুণদের অংশগ্রহণকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ‘যুব পরিষদ’ তরুণ নেতৃত্বের পাশাপাশি নারী এমনকি পুরুষকেও রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষ করে গড়ে তোলায় আপ্রাণ চেষ্টা চালায়।এসব হতে পারে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ।
নিউজরুম