ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক(০৫ ফেব্রুয়ারী): নতুন ফলন ওঠায় গত ডিসেম্বরে দেশি পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৩০ টাকায়নেমে আসে। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২৪ থেকে ২৬ টাকা কেজিদরে।
কিন্তু জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজের দাম আবারও বেড়েছে। বেশি বেড়েছেভারতীয় পেঁয়াজের দাম। দাম বাড়ার প্রবণতায় এ পেঁয়াজ গতকাল খুচরা বাজারেবিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়। পাড়া-মহল্লায় এর কেজি ৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। একসপ্তাহ আগেও এই পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয় ৩৮ টাকায়। এভাবে পাল্লা দিয়েবেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দামও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকাথেকে বেড়ে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক মাসে দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।
শ্যামবাজারেরপাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের নতুন যে ফলনটা (মুড়িকাটা) উঠেছিল, তারমজুত ফুরিয়ে এসেছে। অন্যদিকে পেঁয়াজ আমদানিকারক ও ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরঅনুযায়ী, এ বছর ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন কম হয়েছে। এ অবস্থায় ভোমরা স্থলবন্দরদিয়ে পণ্য আনা-নেওয়াও কয়েক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সব মিলিয়ে পেঁয়াজেরএকধরনের সরবরাহ-সংকট তৈরি হয়েছে। আর এ কারণেই দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামবাড়ছে।
পেঁয়াজের বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল সেখানে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৩৭ থেকে ৪২টাকায়। আর দেশি পেঁয়াজের কেজি ২২ থেকে ৩০ টাকায়। ১০ দিন আগেও ভারতীয়পেঁয়াজের পাইকারি দর ছিল ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৮থেকে ২২ টাকা কেজি দরে। অবশ্য দুই দিন আগে শ্যামবাজারে ভারতীয় পেঁয়াজেরকেজি ছিল ৪২ থেকে ৪৪ টাকা আর দেশি পেঁয়াজ ৩২ থেকে ৩৩ টাকা।
পেঁয়াজের বড়পাইকার ও আমদানিকারক পপুলার বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী রতন সাহা প্রথমআলোকে বলেন, পেঁয়াজ লাগানোর সময় টানা কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ায় অনেক চারাইনষ্ট হয়ে যায়। অনেক চাষি পরে নতুন করে পেঁয়াজ রোপণ করেন, অনেকে করেননি।আবার গত বছর ভালো দাম না পেয়ে অনেক চাষিই এবার পেঁয়াজ আবাদ করাই বাদদিয়েছেন। এসব কারণে এবার পেঁয়াজের উৎপাদন কম হয়েছে।
এদিকে দেশের অন্যতমবড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গতকাল ভারতের উন্নতজাতের নাসিক পেঁয়াজ ৪১ থেকে৪২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে সরবরাহ বাড়ায় দেশি পেঁয়াজের দাম কমতিরদিকে। এ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩১ থেকে ৩২ টাকা কেজি। তবে আকারে ছোট বলে এরচাহিদা কম। খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
খাতুনগঞ্জেরব্যবসায়ীরা বলছেন, সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দরের ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গেরঘোজাডাঙ্গা দিয়ে সব ধরনের পেঁয়াজ, মাছ ও ফলমূল সরবরাহ গত ১৯ জানুয়ারি থেকেবন্ধ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনআইএনটিটিইউসির নেতা-কর্মীদের বাধার কারণে এসব পণ্য এ দেশে ঢুকতে পারছে না।
খাতুনগঞ্জেরসততা বাণিজ্যালয়ের মালিক রতন রায় বলেন, ভোমরা সীমান্ত দিয়ে দুই সপ্তাহ ধরেপেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। বেনাপোল ও অন্য সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে সীমিতপরিমাণে সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ আসছে। এতে সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। তবেউন্নতমানের নয় বলে এ পেঁয়াজের চাহিদা কম।
এদিকে দাম বেড়ে যাওয়ায়পেঁয়াজের ক্রেতাও কমে গেছে। চট্টগ্রামের পাইকারেরা বলছেন, আগে এ বাজারেপ্রতিদিন গড়ে ২৫০ টন পেঁয়াজ বিক্রি হলেও এখন গড়ে ৫০-৬০ টনের বেশি বিক্রিহচ্ছে না।
ভারতেও কম উৎপাদন: ভারতীয় পেঁয়াজের উৎপাদনও এবার কম হয়েছে।সেখানেও দায়ী বৃষ্টি। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, উৎপাদন মৌসুমেভারতের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ উৎপাদনকারী প্রদেশ মহারাষ্ট্রে অনেক কম বৃষ্টিহয়েছে। ফলে এ বছর পেঁয়াজের ফলন গত মৌসুমের চেয়ে কম হয়েছে। সে কারণেদেশটিতেই চলছে পেঁয়াজের সংকট।
এশিয়ার সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের পাইকারি বাজারহিসেবে ধরা হয় ভারতের নাসিকের লাসালগাঁওকে। শুক্রবার সেখানে প্রতি কেজিপেঁয়াজ বিক্রি হয় ২২ রুপিতে। এক মাস আগে এর দর ছিল ১৪ রুপি। ঠিক এক বছর আগেসেখানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় চার রুপিতে।
ইকোনমিক টাইমস গতকাল এক প্রতিবেদনে বলেছে, ভারতে এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫৭ শতাংশ।
নিউজরুম