ঢাকা,(৩ ফেব্রুয়ারী) : পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার পর ব্যাংক থেকে অর্থ পরিশোধের পরও সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার এলসি পণ্যের হদিস আমদানি সংক্রান্ত কাগজপত্র আসেনি তথ্য বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র মতে, নিয়ম অনুযায়ী এলসির অর্থ পরিশোধের চারমাসের মধ্যে পণ্য দেশে আসার কথা থাকলেও ২০১২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে ৬ হাজার ৫শ’ ৫৫ কোটি টাকা (৮১ দশমিক ৯৪ কোটি মার্কিন ডলার)মূল্যের এলসি পণ্য আমদানি সংক্রান্ত তথ্য দেয়নি তফসিলি ব্যাংকগুলো।
তিনহাজার ৯শ’ ৯৩টি এলসির বিপরীতে এই পণ্য আটকে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ অপারেশন বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি সব ব্যাংকেই এই ধরনের এলসি আছে। ফরেন এক্সচেঞ্জ অপারেশন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী তফসিলি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সমাধানের চেষ্টা চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতেও যদি তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ না নেয় তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য সিআইডিতে দিয়ে দেবে। এসব এলসির বেশির ভাগই ভুয়া আর বাকি সব পণ্য অবৈধ পথে দেশে আনা হয় কর ফাকি দেওয়ার জন্য।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি ততোটা অবগত নই। তবে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব ব্যাংকের ক্লায়েন্টরা এলসির অর্থ পরিশোধের পরও পণ্য আমদানি করেনি বা আমদানি হলেও তা ব্যাংককে অবহিত করেনি তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমেই ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। আর তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব তথ্য সিআইডিতে দিয়ে দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এলসি পণ্যের হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না সোনালী ব্যাংকে। সোনালী ব্যাংকের ৪শ’ ৯৫টি বিলের বিপরীতের প্রায় ৬শ’ কোটি টাকার বিলের পণ্যের আমদানি সংক্রান্ত কাগজপত্র দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংকে। কিন্তু এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের কেউই মুখ খুলতে নারাজ। এ বিষয়ের সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও প্রদীপ কুমার দত্তের সঙ্গে বেশ কয়েকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিন ফোন রিসিভ করেও কেটে দেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকগুলোর অবস্থাও নাজুক। জনতা ব্যাংকের প্রায় ২শ’ ১৫টি বিলের বিপরীতে ৬০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ১শ’ ৭০টি বিলের বিপরীতে প্রায় ২শ’ ৮ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ১‘শ ৬০টি বিলের বিপরীতে প্রায় ৯০ কোটি টাকা এলসি পরিশোধ হলেও পণ্য আমদানির বিল অব এন্ট্রি জমা পড়েনি বাংলাদেশ ব্যাংকে। এমন অবস্থা শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেরই নয়। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর শত শত কোটি টাকার এলসির মাধ্যমে লুটপাট হচ্ছে। স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংকসহ প্রায় সব ব্যাংকেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে তথ্য ওঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে।
এভাবে একের পর এক এলসির অর্থ অপব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চিন্তিত বলে জানা যায় বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র্।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, তফসিলি ব্যাংকগুলো যদি সৎ ও সতর্তার সঙ্গে এলসি অনুমোদন করেন তাহলে এ ধরনের ঘটনা কমে আসবে।
এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের সভাপতি নুরুল আমিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
তবে বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ী মহল ও সংশ্লিষ্ট ব্যাকগুলোর উদ্যোক্তারা কি ভাবেছন সে সম্পর্কে এফবিসিসিআই সভাপতি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম বলেন, যে খারাপ কাজ করবে তার শাস্তি পেতেই হবে। এ বিষয়ে আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলব।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে এক্ষেত্রে ব্যাংকে দায়িত্ব সম্পর্কে কাজী আকরাম বলেন, আমাদের ব্যাংকে (স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক) যদি এ ধরনের কিছু হয়ে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া ব্যাংকগুলোরতো অবশ্যই এ বিষয়ে সিরিয়াসভাবে চিন্তা করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী অক্টোবর ২০১২ পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৯০ লাখ টাকার পরিশোধিত এলসির আমদানির বিল অব এন্ট্রি বাংলাদেশ ব্যাংককে জমা দেওয়া হয়নি। এসব পণ্য কোথায় আছে আদৌ সে পণ্য দেশে এসেছে কি না সে বিষয়ে আপাত কোন তথ্য না আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে, না আছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে। তবে খুব শিগগিরই এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নেবে বলে জানা গেছে।
নিউজরুম