০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩: আমার জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হচ্ছে, আমি সেই কাজগুলোই করি, যাআমি করতে চাই। যা করতে পারলে আমার সত্যি ভালো লাগবে, আমি তেমন কিছু করারচেষ্টা করি। একটা চ্যাম্পিয়নশিপ বা বড় কোনো সাফল্য হঠাৎ এসে ধরা দেয় না।খেলার আগে তুমি কী করছ, খেলার এক মাস আগে তুমি কীভাবে প্র্যাকটিস করেছ, আগের করা সেই কাজগুলোই ঠিক করে দেয় তুমি সফল হবে, কি হবে না। লোকে তোমাকেনিয়ে কী ভাবল আর কী বলল, সেটা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। তোমার নিজের কাছেতুমি কেমন, সেটিই আসল কথা। লোকের সব কথায় কান দিতে গেলে জীবন বিষিয়ে উঠতেপারে।
আমি যখন দল থেকে বাদ পড়েছিলাম, তখন ফিরে আসার একমাত্র উপায় ছিলঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করা। কাজটা মোটেও সহজ ছিল না, অন্তত ১১ বছরআন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলা আর ছয় বছর ধরে জাতীয় দলের নেতৃত্ব দেওয়া কারওজন্য তো নয়ই! কিন্তু সেই কঠিন সময়টাতে আমি নিজেকে শক্ত করে ধরে রেখেছিলাম, নিজেই নিজেকে সাহস দিতাম।
এর আগের ১১ বছর ধরে কখনো এতটা সময়ের জন্যকলকাতায় থাকতে পারিনি, নিজের জন্য সময় বের করতে পারিনি। একটা সিরিজও মিসকরিনি ১১ বছরে, এখান থেকে ওখানে ছুটে বেড়িয়েছি সব সময়। এ যেন এক দীর্ঘযাত্রা—এক মাঠ থেকে অন্য মাঠ, একের পর এক হোটেল, এয়ারপোর্ট। বাইরে থেকেখেলাকে যত সহজ মনে হয়, আসলে তা নয়। যখন সাত-আট মাসের জন্য দলের বাইরে চলেযেতে হলো, সোজা ঘরে ফিরে এলাম। আমার পরিবারকে সময় দিলাম, বন্ধুবান্ধবদেরসঙ্গে সময় কাটালাম। নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলতে শুরু করলাম। একটানা ১১ বছরধরে একই ভাবে খেলে গেলে ক্লান্তি আসাটা বিচিত্র কিছু নয়। তাই আমি নতুনভাবে, নতুন রূপে ফিরে আসার চেষ্টা করলাম।
সেই কঠিন সময়ে আমি বিশেষ কোনোপরিকল্পনা বা প্রার্থনা কিছুই করিনি। সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলতখন। আমার নিজেকে নিজেই টেনে তুলতে হয়েছিল, সব সময় গভীর বিশ্বাস ছিল নিজেরওপর। আমি জানতাম আমি পারব, পারতে আমাকে হবেই। সেই দুঃসময়ে নিজেকে যেভাবেসামাল দিয়েছিলাম, তাতে নিজেকে নিয়ে আমি গর্ববোধ করি। আমি জানতাম যে আমারসামনে পথ খোলা ছিল ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর। সত্যি কথা বলতে কি, হাল ছেড়েদিয়ে সরে আসাটা সহজ। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে থাকা, চেষ্টা করে যাওয়া, আবার ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া, নিজেকে প্রস্তুত করে তোলা—এসব অসম্ভবকঠিন।
আমি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে ভালোবাসি। আমি বুঝতে পারছিলাম আমিভালোই খেলছি। আমি জানতাম, আমাকে একবার সুযোগ দেওয়া হলে আমি দেখিয়ে দিতেপারব, আমার গভীর বিশ্বাস ছিল সে সুযোগ আমি পাব। শেষপর্যন্ত আমি তাপেয়েছিলাম। আমি খেলার সময় একটা করে বলের ওপর মনঃসংযোগ করতাম। সেঞ্চুরি, হাফসেঞ্চুরি, দলে সুযোগ পাওয়া না-পাওয়ার দুশ্চিন্তা—এসব কখন মনের ধারে-কাছেওভিড়তে দিইনি খেলার সময়। এসব মনে আসাটাই স্বাভাবিক, মানুষের মন তো! কিন্তুযখনই এসব চিন্তা মাথায় ভিড় করবে, তখনই তা খেলায় প্রভাব ফেলবে। ব্যাটিং করারসময় যদি দলে ডাক পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে চিন্তা করা শুরু করো, তাহলে কখনোতুমি রান পাবে না। তাই আমার লক্ষ্য ছিল শুধু বর্তমান নিয়ে ভাবা, একটি বলেরওপর সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে নিজের সেরাটা উজাড় করে দেওয়া।
কাজেরসঙ্গে এভাবে মিশে যাওয়াটাই হচ্ছে আসল ব্যাপার। আমি সফল হতে গিয়ে অন্যকেআঘাত করব না, নিজেকেও যথাসম্ভব রক্ষা করে চলব, এটাই আমার জীবনের নীতি। আমিবিশ্বাস করি যে যা করতে চায়, তাকে তা-ই করতে দেওয়া উচিত। আমি অন্যকে তারকাজ করতে দেব, নিজেও নিজের কাজ করব এবং একে অপরকে শ্রদ্ধা করব—এমনটিই হওয়াউচিত। আমি যেমন কারও পথে বাধা হয়ে দাঁড়াই না, কেউ আমার পথে বাধা সৃষ্টিকরুক সেটাও আমি পছন্দ করি না। সবার নিজের মতো করে বেঁচে থাকার অধিকার আছেএবং সবার অধিকার বজায় রাখার জন্যই পরস্পরের প্রতি সম্মান দেখানো খুবইগুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: ওয়েবসাইট