চট্টগ্রাম (২ফেব্রুয়ারী) : দেশে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে জনগণকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।
তিনি বলেছেন, `সংবিধান অনুসারে এদেশের মালিক জনগণ। তাই জনগণকেই মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে যেন দেশ সংবিধানের আলোকে পরিচালিত হয়। যারা সংবিধানের আলোকে দেশ পরিচালনার শপথ নিয়ে জনগণের দ্বারে আসবেন, জনগণ যেন তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি করে দায়িত্ব দেন।`
শনিবার দুপুরে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে দি চিটাগাং পুলিশ ইনষ্টিটিউশনের সুবর্ণজয়ন্তী ও পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সুলতানা কামাল।
দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন,‘দেশ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নারীরা ভয়ানকভাবে আক্রান্ত, শিশুরা ভবিষ্যতের চিন্তা করতে পারে না। আর ধর্মব্যবসায়ীরা জয়ী হয়েছে মনে করে অট্টহাসি হাসছে।`
তিনি বলেন, ‘কিন্তু দেশের মানুষের জীবনে এ পরিস্থিতি কখনো সত্য হবেনা। এর প্রমাণ আমরা পেয়েছি ৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে, ৬ দফা, ১১ দফা, ৬৯ এমনকি ৭১ সালে। একাত্তরে বিশ্বের মানুষকে অবাক করে দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে।’
সংবিধানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আলজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ বছরের পর বছর যুদ্ধ করেছে। কিন্তু আমরা মাত্র নয় মাস যুদ্ধ করেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় ঘোষণা করতে পেরেছিলাম। শুধু এ একটি কাজই নয়, আমরা মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে একটি সংবিধানও রচনা করতে পেরেছিলাম।`
তিনি বলেন, `সংবিধানে বাঙালী জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্রসহ চারটি মূলনীতির কথা বলা আছে। সংবিধানেই বলা আছে, এদেশ হবে প্রতিটি মানুষের দেশ। সংবিধানে আরও একটি সুন্দর কথা লেখা আছে, সেটি হচ্ছে মানব সত্তার মহিমা প্রতিষ্ঠা করা।`
সুলতানা কামাল বলেন, `মানব সত্তার মহিমা প্রতিষ্ঠার মূল কথা হচ্ছে, এদেশের মালিক যেহেতু জনগণ তাই দেশ যাতে সংবিধান অনুসারে পরিচালিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। সেজন্য আমরা সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে গেছি। এ গণতন্ত্র রক্ষায় জনগণকে প্রত্যয়ী ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।`
একুশে ফেব্রুয়ারির কথা উল্লেখ করে সুলতানা কামাল বলেন, ‘বিশেষ পোশাক পরে একটি বিশেষ জায়গায় ফুল দিলে আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়না। ভোরে খালি পায়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাবার ভিন্ন অর্থ আছে। এর মর্মার্থ অনেক গভীরে। আমাদের জন্মের ঋণ স্বীকার করার জন্য আমরা একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করি।`
নতুন প্রজন্মকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, `প্রত্যেক মানুষের ভেতর যে আরেকজন মানুষ থাকে তাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। মানুষের ভেতর আত্মার জাগরণ ঘটাতে হবে। এটি শিক্ষকদের দায়িত্ব এবং ছাত্রদের দায়। আর আমরা যারা শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী কোনটাই নয়, দায়িত্ব আমাদেরও আছে।`
পুলিশ ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদের সভাপতি মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, অনুষ্ঠানের আহবায়ক নাজমুল হায়দার বক্তব্য রাখেন।
অ্যাকটিভ মার্কেটিং প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় দিনব্যাপী বর্নাঢ্য আয়োজনের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল জনপ্রিয় নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।আলোচনার পর প্রতিষ্ঠানের নতুন-পুরাতন শিক্ষার্থীদের মিলন মেলায় সংগীত পরিবেশন করেন ফাতেমা তুজ জোহরাসহ বিশিষ্ট শিল্পীরা।
নিউজরুম