ঢাকা(২ ফেব্রুয়ারী) : রাজধানীতে জাল ডলার-ইউরো তৈরির একটি চক্রকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় চক্রের সদস্য দুই বিদেশী নাগরিকসহ ৫ জনকে আটক করা হয়।
শুক্রবার রাতে রাজধানীর নিকেতন আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় পুলিশ ৫০ লাখ টাকা মূল্যের সমপরিমাণ জাল মার্কিন ডলার, ইউরো এবং জাল নোট তৈরির সরঞ্জামাদি আটক করে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন, জিংগে ফিলিক্স সিফু (৩৫) ও সামজেলা ক্রিস (৩৪), স্টিফেন লুক (৪০) , গোলাম কিবরিয়া (৩৫) ও ইউসুফ আলী (৩০)। এদের মধ্যে ফিলিক্স সিফু দক্ষিণ আফ্রিকার এবং সামজেলা ক্রিস ক্যামেরুনের নাগরিক বলে জানা গেছে। স্টিফেন লুক সহ অপর তিনজন বাংলাদেশি নাগরিক। স্টিফেন লুক বাংলাদেশি খ্রিস্টান।
গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে এ সময় জাল ৪৫ হাজার ৮শত ইউএস ডলার, ১২ হাজার ৫’শ জাল ইউরো, ১টি প্রিন্টার, ২টি ল্যাপটপ, ১ বান্ডিল টাকা ছাপানোর কাগজ, ১০ বান্ডিল ইউএস ডলারের ছাপযুক্ত কালো কাগজ এবং পাউডার ও রাসায়নিক দ্রব্যসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
চক্রের অপর্কম ফাঁস হলো যেভাবে
আটককৃতদের শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে হাজির করে এক সংবাদ সম্মেলনে চক্রের প্রতারণা ও অপকর্মের বিস্তারিত বিবরণ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মশিউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সংঘবদ্ধ এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা শহরের গুলশান, বনানী, উত্তরা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে জাল বিদেশী নোটের ব্যবসা ও প্রতারণামূলক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিল। হোটেল ৠাডিসন, হোটেল রিজেন্সি, হোটেল ওয়াশিংটনসহ নগরীর নামীদামী হোটেলে অবস্থান করে গার্মেন্টস ব্যবসা ও বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণার উদ্দেশে বিভিন্ন বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা।
তাদের সর্বশেষ শিকার লন্ডন ফেরত এক সিলেটের অধিবাসী। তার কাছ থেকে বিদেশে পাঠানোর নাম করে ৭ লাখ টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাত করে ওই চক্র।
মূলত প্রতারণার শিকার ওই সিলেটের অধিবাসীর দেওয়া দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এ সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে জালিয়াত চক্রের সন্ধানে গুলশান থানার নিকেতন আবাসিক এলাকার রোড-৪, বাসা-৭৯, ফ্ল্যাট-৮/এ বাসায় হানা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।
এডিসি মশিউর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃত জিংগে ফিলিক্স সিফু এবং সামজেলা ক্রিস প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে, তারা বাংলাদেশে এসে গুলশানের নিকেতন আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে জাল ডলার ও ইউরো তৈরি করে আসছিলো। আর তাদের সহযোগী হিসেবে এসব জাল বিদেশী মুদ্রা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্রয় বিক্রয় করে আসছিলো বাংলাদেশি নাগরিক স্টিফেন লুক, কিবরিয়া ও ইউসুফ।
গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, গার্মেন্টস ব্যবসার ছদ্মাবরণে অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে এদেশে এসে বিদেশী নাগরিক জিংগে ফিলিক্স সিফু ও সামজেলা ক্রিস পরিকল্পিতভাবে নিজেদের পাসপোর্ট ও ভিসা হারিয়ে ফেলে।
পরে নতুন করে পাসপোর্ট ও ভিসা পাওয়ার জন্য স্ব-স্ব দেশের হাইকমিশন বরাবরে আবেদন জানিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করতে থাকে তারা।
নতুন কাগজপত্র বাংলাদেশে এসে পৌঁছার মধ্যবর্তী কয়েক মাস সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন অপরাধীর যোগসাজসে মাদক ব্যবসা, ডলার ও ইউরোসহ বিভিন্ন বিদেশী মুদ্রা জালসহ প্রতারণামূলক কাজে লিপ্ত হয় তারা। পরে অপরাধ সংঘটন করে তারা নতুন পাসপোর্ট নিয়ে আবারও নিজের দেশে চলে যায়।
চক্রের বাংলাদেশি সদস্যদের ব্যাপারে এডিসি মশিউর আরও জানান, স্টিফেন লুক (বাংলাদেশি খ্রিস্টান) ভালো ইংরেজি বলতে পারে। তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে আরও অনেক বিদেশীর সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক স্থাপন করেন। এ সম্পর্কের সূত্র ধরে তিনি বিদেশে পাঠানোর নাম করে বিশাল অংকের টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করে থাকেন। যে সব বাংলাদেশি বিদেশ থেকে ফেরত আসেন বিশেষ করে তাদেরকেই টার্গেট করেন তিনি।
অল্প খরচে পুনরায় বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তাদের জিংগে ফিলিক্স সিফু ও সামজেলা ক্রিসসহ আরও কিছু বিদেশি নাগরিকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন স্টিফেন লুক।
পরে টাকা পয়সা লেনদেন করে বিদেশী নাগরিকেরা বাংলাদেশ ছেড়ে হয় পগারপর আর স্টিফেন লুকসহ তাদের দেশীয় সহযোগীরা দেয় গা ঢাকা।
নিউজরুম