রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে নতুন কৌশলে ঠাণ্ডা লড়াইয়ে রাজনীতিকরা

0
478
Print Friendly, PDF & Email

ঢাকা (২ ফেব্রুয়ারী) : রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে নতুন কৌশলে ঠাণ্ডা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের রাজনীতিকরা। একে অপরকে ঘায়েল করতে নতুন কৌশল হিসাবে আড্ডা ও পার্টি জমাচ্ছেন কূটনৈতিক পাড়ায়। এসব অনুষ্ঠানের আড়ালে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও আলোচনা চলছে নিয়মিত। প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের দেখা যাচ্ছে এসব পার্টি বা আড্ডাতে। তবে পিছিয়ে নেই জামায়াতের নেতারাও।
বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোকে কত তাদের কাছে টানতে পারেন সে প্রতিযোগিতায় নেমেছে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল। এ সুযোগে কূটনৈতিকরাও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছেন। আদায় করে নিচ্ছেন যার যার স্বার্থ।
এ জন্যই এ সব আড্ডায় বাংলাদেশের রাজনীতি ছাড়াও বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েও আলোচনা হয় বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
কূটনৈতিকদের দেওয়া পার্টিতে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী দিনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ছাড়াও বন্ধু দেশগুলোর কূটনৈতিকদের সঙ্গে হয় ব্যবসায়িক আলোচনা।তবে সমসাময়িক কিছু ঘটনা ছাড়াও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়েও আলোচনার ঝড় ওঠে বলে উল্লেখ করেছে সুত্র।
সূত্রমতে, বাংলাদেশের বড় দু’টি রাজনৈতক দলের মধ্যে শাপে-নেউলে সম্পর্কের সুযোগ কাছে লাগাচ্ছেন কূটনৈতিকরা। এ কারণেই তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের কুটনৈতিকদের আগ্রহ বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূ-রাজনৈতিক কারণেই প্রতিবেশী দেশ ভারত, এশিয়ার উদীয়মান বিশ্বশক্তি চীন, এমনকি বিশ্বমোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরের উন্মুক্ত জলসীমা আরো বেশি স্পর্শকাতর করে তুলেছে বাংলাদেশের অবস্থান।
এ ছাড়া এফবিআইয়ের স্থায়ী প্রতিনিধি, টিফা চুক্তি ,জ্বালানী, ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ ব্যবসা,সন্ত্রাস দমনে উভয় দেশের একসঙ্গে কাজ করা, তিস্তা ও টিপাইমুখ বাঁধসহ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বিষয় ও কানেকটিভিটিসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা হয় এসব আড্ডায়।
সূত্র জানায়, জানুয়ারি মাসেও ২২টি পার্টির আয়োজন করেন বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরা। এ ধরনের পার্টির আয়োজনে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, এনজিওর কর্ণধাররাও। কখনও বাসায়, আবার কখনও রেস্টুরেন্টে হচ্ছে এসব পার্টি।
সম্প্রতি রাজনীতিক ও সরকারের বিভিন্ন আইন-শৃংখলা বাহিনী নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনার দেওয়া পার্টি ছিল খুবই গুরুত্বপুর্ণ। এ পার্টি ছিল এফবিআইয়ের সৌজন্যে।
এ ব্যাপারে ওই বৈঠকে উপস্থিত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “এফবিআই বাংলাদেশে স্থাযী প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে চায় বলেও আলোচনা হয় ওই পার্টিতে।” ওই পার্টিতে জামায়াতের প্রসঙ্গ ও বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানান তিনি।
এদিকে সম্প্রতি ভারতের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীসহ দেশটির বেশ ক’জন কর্মকর্তার বাংলাদেশ  সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে উল্লেখ করেছে সূত্র। এসব কর্মকর্তার সৌজন্যে এক পার্টি আয়োজন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত  ভারতের হাইকমিশনার । তার বাসায় এ পার্টিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন বলেও দাবি ওই সূত্রের।
সূত্রমতে, এসব পার্টির মাধ্যমে বাংলাদেশ নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের বর্তমান কূটনৈতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক বৈঠকে সব মহলের মতামত ছাড়াও প্রত্যাশার স্বরূপ বুঝে নিতে চাইছেন কুটনৈতিকরা।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের দুর্বলতার কারণেই কুটনৈতিকদের কাছে ধরনা দিতে হচ্ছে রাজনীতিকদের। কারণ দেশ ও জনগণের চেয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার রোগ আমাদের মাথায় বেশি চেপে বসেছে।”
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নেই গণতন্ত্র। যে কারণে দলের প্রধান বা দেশের প্রধানমন্ত্রীও রাজনৈতিক নেতাদের মতামতের চেয়ে উপদেষ্টাদের বিশ্বাস করছেন বেশি। তাদের দিয়ে তার কাজগুলো করাতে অভ্যস্ত হওয়ায় রাজনীতিকরা এখন কোনঠাসা। এ কারণে বাংলাদেশের রাজনীতি ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও কূটনৈতিক কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।”
“বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্যের সুযোগ নিচ্ছে বিদেশি কূটনৈতিকরা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কুটনৈতিকরা তাদের দেশের স্বার্থ হাসিলের জন্য কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক।”

নিউজরুম

শেয়ার করুন