ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক(০২ ফেব্রুয়ারী): শাসন ক্ষমতার চতুর্থ বছরে এসে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অববাংলাদেশকে (টিসিবি) শক্তিশালী, কার্যকর ও পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছেসরকার। এ জন্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২-এর সংশোধনী আনাহচ্ছে।
তবে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, সত্যি সত্যিই প্রতিষ্ঠানটিকেশক্তিশালী করা হবে তো? নাকি সবকিছুই হচ্ছে লোক দেখানো! প্রশ্ন ওঠার কারণওঅবশ্য অসংগত নয়। আগেরবারও (১৯৯৬-২০০১) টিসিবিকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতেউদ্যোগ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন (পিএআরসি)তখন একটি প্রতিবেদনও দাখিল করেছিল তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।এতে টিসিবির জনবল বাড়ানো, পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন এবং নিজস্ব সম্পত্তিতেগুদামঘর নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু এগুলো আর বাস্তবায়িত হয়নি।
সত্যিইযদি আইন সংশোধন হয়, তাহলে টিসিবির অনুমোদিত মূলধন বর্তমানের পাঁচ কোটিটাকা থেকে বেড়ে হবে এক হাজার কোটি টাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাজারস্থিতিশীল রাখতে টিসিবিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে সরকার।সংস্থাটি ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল ও পেঁয়াজের মজুত বাড়াবে। এ ছাড়া সংস্থাটিরপরিচালনা পর্ষদের সদস্য হবে পাঁচজন। বর্তমানে তিনজন সদস্যের পদ রয়েছে।
প্রশাসনিকউন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির গত বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে আইন সংশোধনের খসড়াকিছুটা কাটছাঁট করে অনুমোদিত হয়েছে। এর পর নীতিগত অনুমোদনের জন্য তাউপস্থাপন করা হবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিলে যাবেপরীক্ষা-নিরীক্ষার (ভেটিং) জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে। তারপর চূড়ান্ত অনুমোদনেরজন্য যাবে আবারও মন্ত্রিসভার বৈঠকে। সবশেষে যাবে সংসদে।
যোগাযোগ করলেবাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবিকে শক্তিশালীও কার্যকর করতে আমরা সব ধরনের চেষ্টাই করে যাচ্ছি।’ স্বল্পতম সময়ে ইতিবাচকও দৃশ্যমান কিছু দেখা যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
এদিকে, সচিব কমিটির বৈঠকেক্রয় আইন ও ক্রয়বিধি অনুসরণ থেকে টিসিবিকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়ারপ্রস্তাব উপস্থাপিত হলেও সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট(সিপিটিইউ) এতে আপত্তি জানিয়েছে বলে জানা গেছে। সিপিটিইউর মতে, টিসিবিকে এইঅব্যাহতি দেওয়া হলে একটি মন্দ দৃষ্টান্ত তৈরি হবে, যার সুযোগ নিতে চাইবেসরকারি অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও।
বাজারে প্রভাব বিস্তার করতে হলে কমপক্ষে২৫ শতাংশ পণ্যের মজুত থাকতে হয়। এটিই প্রচলিত ধারণা। টিসিবি কয়েকটি পণ্যের২৫ শতাংশ মজুত রাখতে চায়। কিন্তু আইন যেভাবে সংশোধন করা হচ্ছে, বাস্তবে তাকতটা সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আওয়ামী লীগেরনির্বাচনী ইশতেহারে অগ্রাধিকারভুক্ত পাঁচ বিষয়ের মধ্যে এক নম্বরটাই হলোদ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধ। ইশতেহারে বলা হয়েছে, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয়জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থাকরা হবে এবং সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য সৃষ্টি করা হবে।’
টিসিবি অবশ্যস্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি—দুই ধরনের পরিকল্পনাই করেছে নিজেকে শক্তিশালীকরতে। টিসিবির চেয়ারম্যান সারোয়ার জাহান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে টিসিবির মাধ্যমে বাজারে প্রভাব বিস্তারঅবশ্যই সম্ভব।’
পর্ষদ সংখ্যা পাঁচে উন্নীত করার পাশাপাশি টিসিবিরস্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে জনবল কমপক্ষে তিন গুণ করা এবংরাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও নবগঠিত রংপুর বিভাগে আঞ্চলিক শাখা গঠন করা। আরদীর্ঘমেয়াদির মধ্যে রয়েছে—গুদাম ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ এবং পণ্যের উৎপাদনমৌসুমেই রপ্তানিকারক দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা।
জানা গেছে, টিসিবিকেদুর্বল করার প্রক্রিয়া শুরু হয় মূলত এরশাদ সরকারের শেষ দিকে। মুক্তবাজারেরতত্ত্ব দিয়ে তখন উদারীকরণ শুরু হয়। তারই অংশ হিসেবে টিসিবির কর্মকাণ্ডওসীমিত করে আনা হয়।
তবে সংস্থাটিকে ব্যাপকভাবে দুর্বল করে বিএনপি সরকার।১৯৯২ সালে এক আদেশে এতে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার আগের বছর ১৯৯৫ সালে এক হাজার ৩৩৬ জনের জনবল কমিয়েআনা হয় ৭১৩ জনে। এরপর চারদলীয় জোট সরকার (২০০১-০৬) আবারও ক্ষমতায় এসেসংস্থাটির জনবল ৭১৩ থেকে ২৩৫-এ নামিয়ে আনে। এরপর সংস্থাটিতে আর নতুন নিয়োগহয়নি। তবে বর্তমান সরকারের আমলে কিছু নিয়োগ হয়েছে।
টিসিবির কর্মকর্তারাজানান, সরকারের অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো টিসিবি লোকসানি নয়।ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করেও লাভ করে এই সংস্থা। প্রধান কার্যালয়সহঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় টিসিবির ৪৩ বিঘা জমি রয়েছে। এগুলোকে যথাযথভাবেকাজে লাগাতে পারে সরকার।
বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে টিসিবির প্রতি সরকারের নজরদারি বেশিইরয়েছে।’ আইন সংশোধন হওয়ার পর এর ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে বলে তিনি বিশ্বাসকরেন।
নিউজরুম