পঞ্চগড় (৩১জানুয়ারী) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হরতাল করে গাড়ি পুড়িয়ে ও মানুষ হত্যা করে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো যাবেনা।‘এ সরকার অঙ্গীকার করেছে, বাংলার মাটিতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে।’
৩১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ময়নামতির চরে গিয়ে সেখানে আয়োজিত দশম জাতীয় রোভারমুট ও পঞ্চম জাতীয় কমিউনিটি ডেভলাপমেন্ট ক্যাম্প (কমডেকা) ৬ দিনব্যাপী উদ্বোধনী করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দেশের শান্তি ও উন্নয়নে স্কাউটিং। দেশের যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় স্কাউট সদস্যদের এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্কাউট আন্দোলন শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি পরিপূর্ণভাবে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার আন্দোলন। এ আন্দোলন বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে ছোট বেলা থেকেই ছেলেমেয়েরা ধাপে ধাপে আত্মনির্ভরশীল এবং সেবার ব্রত নিয়ে বেড়ে ওঠে, প্রকৃতির কাছাকাছি গিয়ে প্রায়োগিক শিক্ষা গ্রহণ করে।’
সকাল ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে ময়নামতির চর সংলগ্ন দেবীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এসে পৌঁছান। সেখানে আয়োজিত এক জনসভায় তিনি দেবীগঞ্জকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করেন।
দেবীগঞ্জের জনসভায় বাংলাদেশ স্কাউটিং দলের সভাপতি মো. আব্দুল করিমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১০ সালে বাংলাদেশ স্কাউটস-এ ৪র্থ বার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এ পরিকল্পনার আওয়াতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, জেলা ও উপজেলায় স্কাউট সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় পর্যায়ে এই মুট ও কমডেকার আয়োজন করা হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় সমাজ উন্নয়নে ক্যাম্প বা কমডেকার আয়োজনে দেবীগঞ্জের স্থানীয় জনসাধারণ উপকৃত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্কাউটিং উন্নয়নে প্রাথমিক বিদ্যালয় কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্প এবং হিউম্যান রির্সোস ডেভলপমেন্ট থ্রু স্কাউটিং প্রকল্প চালু করেছি। দেশে ২৪তম এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল স্কাউট কনফারেন্স ২০১২ সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আরও দু’টি বিশেষ প্রোগ্রাম- স্কাউটি লিডারদের জন্য কোর্স ফর লিডার ট্রেনার্স ও রোভারদের জন্য ইয়ুথ ফোরাম শেষ হয়েছে। মৌচাজ জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। স্কাউট কার্যক্রমকে আর গতিশীল করার জন্য গোপালগঞ্চ, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, যশোর ও সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও জেলায় জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেবীগঞ্জের ১৫.৩৭ একর জমি আমরা বাংলাদেশ স্কাউটকে বরাদ্দ দিয়েছি। যা স্কাউটের কার্যক্রম সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
ময়নামতির চরে দেশের ৬শ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড ও শ্রীলংকা থেকে আসা ৮ হাজার রোভার স্কাউটস সদস্যের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবারে মুট ও কমডেকায় তোমরা শিক্ষা, খাদ্য, নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য, উন্নত চুলা, বায়োগ্যাসসহ নানা বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে এ এলাকায় কাজ করবে। এ কাজগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে করলে একদিকে যেমন জনসাধারণ উপকৃত হবে তেমনি শিক্ষার্থীদের দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সরকার গঠনের পর দেশের প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। আমরা কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি, আইনশৃঙ্খলা, পররাষ্ট্রসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি খাতে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। ইতোমধ্যে আমরা চলতি শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে ২৭ কোটি বই বিতরণ করেছি। আমরা সুষম উন্নয়নের নীতিতে বিশ্বাসী।’
‘বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আমার উত্থাপিত ‘‘ জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন মডেল’’ জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্র সর্বসম্মতিক্রমে পাশ করেছে। ২০১১ সালে আমাদের উত্থাপিত ‘‘ শান্তির সংস্কৃতি’’ প্রস্তাবটিও পাশ হয়েছে। আমার মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুলের উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী ‘‘অটিজম সচেতনতা’’ সৃষ্টির লক্ষ্যে আরেকটি প্রস্তাব গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করি। সেটিও গত মাসে সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছে। ইতোমধ্যে মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র জয়ের ফলে বঙ্গোপসারের ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের আর্থসামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য বিরল সম্মান।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। দারিদ্র্য দূর করার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে এশিয়ার সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এ লক্ষ্য অর্জনে দেশের স্কাউট সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’
সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় স্কাউট সদস্যদের আরও নিবেদিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
স্কাউটিংয়ের প্রবর্তক ব্যাডেন পাওয়েল বলেছিলেন, ‘পৃথিবীকে যেমন পেয়েছো, তার চেয়ে একটু ভালো রেখে যেতে চেষ্টা কর’-উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘পঞ্চগড় জেলার উন্নয়নে আমরা বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর চালু করেছি এবং পূর্ণাঙ্গ বন্দরের কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সবাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার আবুল কালাম আজাদ ও আবু আলম শহীদ।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন এমপি, রেলমন্ত্রী মজিবুল হক এমপি, ত্রাণ ও দুযোর্গ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী আবুল হাসান এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, পঞ্চগড় জেলা আওযামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, ইকবালুর রহিম এমপি, পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদা আখতার হীরা এমপি।
নিউজরুম