৩১ জানুয়ারি, ২০১৩: ধূমপান নিয়ন্ত্রণ আইন
তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার মানুষের ক্ষতি ছাড়া কোনো উপকার করে না। অধিকন্তু বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন: ক্যানসার, হূদেরাগ, যক্ষ্মা, হাঁপানি, পেটে ঘা, পক্ষাঘাত ইত্যাদি রোগকে ত্বরান্বিত করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, তামাক ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট রোগে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫৭ হাজার মারা যায়। তিন লাখ ৮২ হাজার জন নানাভাবে অক্ষম হয়ে পড়ে। এ অক্ষমতা একধরনের পঙ্গুত্ব। পরোক্ষ ধূমপানের ফলে ধূমপায়ী না হয়েও অনেককে এর কুফল ভোগ করতে হয়। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০০৯ অনুসারে বাংলাদেশে প্রায় চার কোটি ৩০ লাখ লোক ধূমপান অথবা তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে। চার কোটি ২০ লাখ লোক কোনো না কোনোভাবে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে।
দেশের সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য, অর্থ ও পরিবেশের কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।বিগত ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১২ চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করেছে।জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে এটি বিল আকারে উত্থাপিত হবে।
দেশের আপামর জনসাধারণের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের সংশোধনী বিলে আমরা সব সাংসদের সমর্থন কামনা করছি। বিলটি পাসে জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
এ কে এম আনিসুজ্জামান
মাহফিদা দীনা রুবাইয়া
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, ঢাকা।
বাঘ ও হরিণ রক্ষা
ক্যালেন্ডার থেকে একটি বছর বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবনের বাঘ ও হরিণের সংখ্যা কমছে। সত্যি বলতে, বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন, বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত সমীক্ষার ফলাফল এবং জীবিকার জন্য সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মানুষের বর্ণনায় একটাই আভাস পাওয়া যাচ্ছে, আর সেটা হলো, যতই দিন যাচ্ছে. সুন্দরবনে বাঘ ও হরিণের সংখ্যা ততই কমছে। সুন্দরবনের ভারতীয় অংশেও বাঘ ও হরিণের সংখ্যা আশ্চর্যজনকভাবে কমে যাচ্ছে। ২০০১ সালে ভারতীয় অংশে যেখানে বাঘের সংখ্যা ছিল ২৭৪টি, এক দশক পর এসে সেখানে বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে শুধু ৭৪।
বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে হরিণের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ১০ হাজার। লন্ডনভিত্তিক লাইফট্রাস্ট অব বাংলাদেশ (ডব্লিউটিবি) ও জুওলজিক্যাল সোসাইটির যৌথ এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রতিবছর সুন্দরবনে ১০ হাজার হরিণ চোরাই শিকারিদের হাতে মারা পড়ছে। ২০০৪ সালের বাঘশুমারি অনুযায়ী, সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০। সম্প্রতি এক গবেষণায় বর্তমানে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫০-এর নিচে।
বাংলাদেশ সুন্দরবন রিলেটিভ টাইগার অ্যাবনডেন্স সার্ভে ২০১২-এ শীর্ষক জরিপে বাঘ ও হরিণ কমে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে চোরা শিকারিদের দায়ী করা হয়েছে। চীনসহ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ভেষজ ওষুধ হিসেবে বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার বাড়ছে। সুন্দরবনের বাঘের ওপর চোরা শিকারিদের নজর বাড়ছে। এ ছাড়া বাঘ নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, বাঘের প্রধান খাদ্য হরিণের সংখ্যা কমে যাওয়া। বনে হরিণের সংকট হওয়ায় বাঘ নিয়মিতভাবে সুন্দরবনসংলগ্ন গ্রামগুলোতে গরু, ছাগল, কুকুর, মুরগিসহ বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণী ধরে খাচ্ছে। আর এতে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ নানা ধরনের গবাদিপশুবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বাঘ মারা যাচ্ছে।
এ ছাড়া পাঁচ বছরে সিডর ও আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে বাঘ ও হরিণের সংখ্যা কমেছে। এখন বাঘ ও হরিণ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও বন উজাড়। সুন্দরবনের কটকা ও কচিখালী সবচেয়ে বড় হরিণ বিচরণক্ষেত্র। মূলত মানুষের তৎপরতা ও চোরা শিকারি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতায় বাঘ ও হরিণের সংখ্যা কমছে। বাঘের খাবারের ঘাটতি হলে বাঘ হুমকিতে পড়বে। আর বাঘ শেষ হয়ে গেলে সুন্দরবনের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে।
সুন্দরবন বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের সবচেয়ে বড় আধার। এই সুন্দরবন বুক দিয়ে দেশের উপকূলবাসীকে রক্ষা করে। এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এমন অবস্থা চলতে থাকলে অর্থাৎ বাঘ ও হরিণের সংখ্যা দিনের পর দিন কমতে থাকলে ২০১৭ সালের মধ্যে সুন্দরবন থেকে বাঘ বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারের উচিত বাঘ ও হরিণ চোরাচালানকারী চক্রকে সমূলে উৎপাটন করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া। এ ছাড়া বাঘ ও হরিণ শিকারি নির্মূলে দরকার বনে অতিরিক্ত টহল বাড়ানো, বাঘ ও হরিণ প্রতিরোধে একটি টাস্কফোর্স গঠন এবং ভারত সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে বাঘ ও হরিণ রক্ষায় টহল বাড়ানো।
সাধন সরকার
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।