ঢাবি (২৯জানুয়ারী) : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে মঙ্গলবার কমপক্ষে ১৯টি ককটেল বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে ছাত্রদল।
অন্যদিকে পুলিশ ও ছাত্রলীগও এজন্যে ছাত্রদলকে দায়ী করেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটছে।
দুপুর ১২টার মধ্যেই অন্তত ১৯টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। এর আগে সোমবারও এক ডজন ককটেল বিস্ফোরিত হয়।
বাংলানিউজের কাছে ছাত্রদলের ঢাবির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এসব ককটেল বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে বলেছেন, ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের দাবিতে তারা এসব ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছেন। ছাত্রলীগ নেতারা অভিযোগ করেন, ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে ছাত্রদল ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। পুলিশও একই ধরনের দাবি করেছে।
উল্লেখ্য, ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ঢুকতে পারে এমন সংবাদে গত দু’দিন ধরে ঢাবি ক্যাম্পাসে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে সোমবারের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও দফায় দফায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে।
ছাত্রদলকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে এখনও মধুর ক্যান্টিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে রয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রদলও ক্যাম্পাসের আশেপাশে জড়ো হওয়ায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে ক্যাম্পাসজুড়ে। দুই ছাত্র সংগেঠনের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে প্রথমে শাহবাগ এলাকায় বারডেম হাসপাতালের সামনে ২টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এরপর দশটার দিকে পলাশীতে বিস্ফোরিত হয় আরও ৯টি ককটেল। দশটা ২০ মিনিটের দিকে নীলক্ষেতে প্রথমে একটি ও পরে আরো সাতটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৯টি ককটেল বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়েছে ঢাবি ক্যাম্পাস।
ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ঢুকতে পারে এমন সংবাদে সকাল থেকেই ঢাবি ক্যাম্পাসে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। ছাত্রদলকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে মধুর ক্যান্টিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে রয়েছে ছাত্রলীগ।
ছাত্রদলও ক্যাম্পাসের আশেপাশে জড়ো হয়। সকাল সোয়া ১০টার দিকে নীলক্ষেত মোড়ে ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি সহিদুল হাসান হিরুর নেতৃত্বে কয়েক মিনিটের ঝটিকা মিছিল বের করা হয়। এতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
মিছিল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থানের স্লোগান দেওয়া হয়। তবে পুলিশের তৎপরতায় মিছিল গুটিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।
মিছিলে আরো অংশ নেন ঢাবি ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহ নাসিরউদ্দিন রুম্মন, সাংগঠনিক সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন ভূঁইয়া প্রমুখ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যে কোনো ধরনের সংঘর্ষ কিংবা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে সর্ব্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।
উল্লেখ্য, সোমবারও এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে এক ডজনের বেশি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আহত দু’জন হন।
সোমবারের ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনায় ছাত্রদলের ৪৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ছাত্রলীগ। সোমবার দিবাগত গভীর রাতে সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মী কামাল হোসেন এ মামলা করেন। মামলায় উল্লেখিত ৪৩ জন ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরো ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
শাহবাগ থানা সূত্রে জানা গেছে, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে এ মামলায় ছাত্রদল সভাপতি আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েলকে প্রধান আসামি এবং কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রদলের শীর্ষ ৮ নেতাকে আসামি করা হয়েছে।
তারা হলেন- ছাত্রদলের সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, সাধারণ সম্পাদক হাবীবুর রশীদ হাবীব, যুগ্ম সম্পাদক ওবায়েদুল হক নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব আহসান, ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি মহিদুল হাসান হিরু, সহ-সভাপতি সাদিউল কবির নীরব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নাসির উদ্দিন রুম্মন, সাংগঠনিক সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন ভূইয়া।
এ মামলা প্রসঙ্গে ছাত্রদল নেতারা বলেছেন, ‘‘মামলা-হামলা করে ছাত্রদলকে দমিয়ে রাখা যাবে না। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় আমরা ক্যাস্পাসে আসবোই।’’ অন্যদিকে, ছাত্রলীগ নেতারা বলেছেন, অছাত্র ও সন্ত্রাসীদেরকে ছাত্রলীগ প্রতিহত করবে।
নিউজরুম