রাজশাহী কারাগারে আটক অনুপ চেটিয়া বন্দি বিনিময় চুক্তির কথা জানেন

0
747
Print Friendly, PDF & Email

ঢাকা (২৯জানুয়ারী) : টেলিভিশন আর পত্রিকা মারফত ভারত-বাংলাদেশ বন্দি বিনিময় চুক্তির কথা জেনেছেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা’র শীর্ষ নেতা অনুপ চেটিয়া‍।

মঙ্গলবার কারাগার পরিদর্শনকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল হান্নানকে ‍অনুপ চেটিয়া নিজেই একথা জানান বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন রাজশাহী কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান ভূঁইয়া। অনুপ চেটিয়ার সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কথোপকথনের সময় তিনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান শাহজাহান ভূঁইয়া।  

শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, “সকালে ডিসি সাহেব জেলখানায় আসেন। পরিদর্শনের এক পর্যায়ে অনুপ চেটিয়ার সেলে যান তিনি। এ সময় নিজের সেলেই ছিলেন অনুপ চেটিয়া। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে বন্দি বিনিময় চুক্তি প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি।”

অনুপ চেটিয়া জেলা প্রশাসককে বলেন, বন্দি বিনিময় চুক্তি হলেও তাকে ভারতে ফেরত পাঠানোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের হাইকোর্টে তার একটি রিট রয়েছে। এর নিষ্পত্তি হলে হয়তো সরকার তাকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে।

তবে এর আগেও তাকে বেশ কয়েকবার দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে অনুপ চেটিয়া জেলা প্রশাসককে বলেন, “দেখা যাক এবারও কি হয়।”

শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, অনুপ চেটিয়া ডিভিশনপ্রাপ্ত কয়েদি। তার রুম আলাদা। রুমে টিভিও রয়েছে। টিভি দেখেই তিনি হয়তো বন্দি বিনিময় চুক্তির কথা জেনেছেন।

অনুপ চেটিয়াকে খুবই ঠাণ্ডা প্রকৃতির মানুষ উল্লেখ করে শাহাজাহান ভূঁইয়া বলেন, “এতদিন ধরে কারাগারে থাকলেও কখনোই উত্তেজিত হয়ে কোনো কথা বলেননি তিনি। এছাড়া ভারতে ফেরত পাঠানো নিয়েও তার মধ্যে কোনো ধরণের অনুভূতি নেই।”

কারাগারে অনুপ চেটিয়া সব সময় সেলের মধ্যেই থাকেন, উল্লেখ করে শাহজাহান ভূঁইয়া জানান তিনি প্রয়োজন ছাড়া কারও সঙ্গে কথা বলেন না কিংবা খুব একটা সেল থেকে বের হন না।

কারাগারে অনুপ চেটিয়ার নিরাপত্তা প্রসঙ্গে শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, “তিনি (অনুপ চেটিয়া) যেহেতু একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের নেতা সেহেতু তাকে ঘিরে আমাদের সব সময় বাড়তি নিরাপত্তা থাকে। তার জন্য আমাদের আলাদা সিকিউরিটিরও ব্যবস্থা আছে।”

তবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে থেকেই অনুপ চেটিয়াকে ভারতে হস্তান্তর করা হবে, না কি হস্তান্তর করার আগে তাকে সরিয়ে অন্যত্র নেওয়া হবে, সেই বিষয়ে তার কাছে কোন তথ্য নেই বলে উল্লেখ করেন শাহজাহান আলী ভূঁইয়া।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সফররত ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে সোমবার একটি দ্বিপক্ষীয় বন্দিবিনিময় চুক্তি হয়েছে। এর ফলে উভয় দেশের কারাগারে বন্দি ভারতীয় ও বাংলাদেশি নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে আনার পথ সুগম হলো।

প্রসঙ্গত, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামকে বিচ্ছিন্ন করে একটি আলাদা রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করছে সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা)।

গোলাপ বড়ুয়া ওরফে অনুপ চেটিয়া এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার আদাবর থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে।

অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ এবং অবৈধ মুদ্রা ও স্যাটেলাইট ফোন রাখার অভিযোগে `ফরেনার্স অ্যাক্ট ও পাসপোর্ট` আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ঢাকা মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তাকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেন।

এছাড়া ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে তৎকালীন মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাকে আরও চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়। এরপর তিনি জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) নিকট রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে চিঠি দেন। ২০০৯ সালের ৪ ডিসেম্বর অনুপ চেটিয়াকে ময়মনসিংহ কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। সেই থেকেই তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন।

নিউজরুম

শেয়ার করুন