কৃষি ডেস্ক(২৯ জানুয়ারী): দফায় দফায় তেল, বিদ্যুৎ ও সার-কীটনাশকের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে ফেনীর ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মওসুমে বীজতলা বপন ও ইরি লাগানো আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বোরো চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপে তেমন সাড়া নেই বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ৪০ হাজার হেক্টরে শুষ্ক মওসুমে ইরি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১৫৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম মুহুরি সেচ প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় ফেনী নদী, মুহুরি-কহুয়া নদীর তীরবর্তী ২০ হাজার হেক্টরে বিগত মওসুমে ইরি-বোরো আবাদ কমে গেছে। দফায় দফায় সার ও ওষুধ, তেল, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিসহ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা লোকসান গুনছেন। গত বছর এ সময়ে মোট জমির ৪০ শতাংশ জমিতে ইরি ধানের চারা লাগানো শেষ হয়। অথচ এ বছর এখনো ইরি লাগানো শুরুই হয়নি; বরং ৯০ শতাংশের অধিক কৃষক বীজতলায় বীজ বপন থেকে নিজেরা গুটিয়ে নিয়েছেন। মুহুরি সেচ প্রকল্পের আওতাধীন ৩৫ হাজার হেক্টরে শীতকালে বিগত আশির দশক থেকে এ অঞ্চলে কৃষিবিপ্লব এনে দিয়েছিল।বর্তমান সময়ে ইরি চাষ যেন কৃষকের লোকসান আর অনাগ্রহের কারণ হয়েছে। ফেনী নদী, মুহুরি ও কহুয়া নদীর তীরবর্তী ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কৃষক থেকে যে মনোভাব জানা গেছে, ইরি চাষ না করে শূন্য জমি পড়ে থাকলেই কৃষকের লোকসান কম বলে দাবি কৃষকের।
ছাগলনাইয়া উপজেলায় চলতি মওসুমে সাত হাজার হেক্টরে, ফুলগাজীতে ছয় হাজার ও পরশুরামে সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টরে ইরি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অথচ ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ২ শতাংশ জমিতেও ইরি লাগানো হয়নি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলায় ৪০০ থেকে ৪৫০ ডিজেলচালিত পাম্প রয়েছে। ৫০-৫৫টি বিদ্যুৎচালিত। পুরো উপজেলায় এক বা দুইজন স্কিম ম্যানাজার জমিতে সেচ দেয়া শুরু করেছেন।
ইরি-বোরো চাষ সঙ্কুচিত হওয়ায় মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন উপজেলার সার ডিলারেরা। ইরি-বোরো চাষকে সামনে নিয়ে ইতোমধ্যে শত শত টন সার গুদামে পড়ে আছে কয়েক মাস আগ থেকে। তাদের বেচা-বিক্রি নেই।
চলতি মওসুমে ছাগলনাইয়া উপজেলার জন্য ১১ কোটি টাকার সার বরাদ্দ পাওয়ার জন্য কৃষি অফিস থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
ছাগলনাইয়া পৌরসভার সার ডিলার আবদুল আলিম দুলাল জানান, তার গুদামে ২০ লাখ টাকার সার জমা পড়ে আছে দীর্ঘ দিন। বাধ্য হয়ে আরো আট-নয় লাখ টাকার সার উত্তোলনের জন্য টাকা জমা দিয়েছেন। গত বছর এ সময়ে ৩০-৪০ লাখ টাকার সার বিক্রি হলেও এ বছর এখনো এক লাখ টাকার সারও বিক্রি হয়নি বলে তিনি জানান। এ ছাড়া কৃষকেরা বীজ না কেনায় বি, আর ২৯, ১৬, ২৮, ৪৭ ও ১৪ জাতের পাঁচ লক্ষাধিক টাকার বীজ পড়ে আছে। গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশের কম বীজ বিক্রি হয়েছে বলে তার দাবি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পশ্চিম ছাগলনাইয়া গ্রামের স্কিম ম্যানাজার আবুল বশর জানান, সার, ওষুধ ও তেলের দাম বাড়ায় কৃষকেরা ইরি লাগানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।বীজতলা তৈরি কমার সাথে সাথে ইরি চাষ কমে গেছে।
কৃষক আলম জানান, ধান করে লোকসান গুনার ভয়ে ইরি চাষ এ বছর করছি না।
দক্ষিণ মন্দিয়া গ্রামের স্কিম ম্যানাজার আবুল কালাম জানান, প্রতি বছরই লোকসান গুনে, ইরি চাষ থেকে কৃষকেরা বিমুখী হচ্ছেন। অন্য বছরের চেয়ে কম হলেও কিছু জমিতে ইরি চাষ হবে বলে তিনি জানান।
এ বছর ৩৫ হাজার কৃষকের মধ্যে ১০ হাজার কৃষকও বোরো বীজতলা প্রস্তুত করেননি। অথচ গত বছর এ সময়ে বোরোর চারা বীজতলা থেকে তুলে ক্ষেতে লাগানো শুরু করেছিল। এখন পর্যন্ত কোনো সেচ চাষি পাম্প বসাননি, ফলে অলস পড়ে রয়েছে হাল দেয়ার লাঙল ও পাওয়ার টিলারগুলো। এ ভাবে ইরি-বোরো চাষের জমি অনাবাদি পড়ে থাকলে ফেনীসহ এ অঞ্চলে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: কামারুজ্জামান জানান, ইরি-বোরো লাগাতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার কাজ চলছে।
নিউজরুম