স্পোর্টস ডেস্ক(২৯ জানুয়ারী): হাজার তিরিশেক মানুষ একসঙ্গে দীর্ঘশ্বাস ফেললে সেটি শোনায় গর্জনের মতো।কালকের অভিজ্ঞতায় অন্তত তাই মনে হলো। রুবেল হোসেনের বলে এলটন চিগুম্বুরারছক্কায় এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে যে আর্তনাদ শোনা গেল, আগের ম্যাচগুলোর গর্জনওসেটার কাছে কিছুই না। টইটম্বুর গ্যালারি, হাতে রংবেরঙেরব্যানার-ফেস্টুন-পতাকা, বিচিত্র সব সাজ, উত্সবের আবহ। খুলনা পর্বের শেষদিনে দর্শক হাহাকারের বিপিএলে ছিল প্রাণ ফিরে আসার ইঙ্গিত, কাল যেন সেটিকেপূর্ণ প্রাণেই ফিরিয়ে দিল চট্টগ্রাম। কিন্তু উত্সব পূর্ণতা পেল না ঘরেরদলের হারে। গ্যালারি ভরা দর্শককে হতাশায় ডুবিয়ে সিলেট রয়্যালস ধরে রাখলজয়যাত্রা।
গতবারের তলানিতে থাকা দলের এটি টানা পঞ্চম জয়! দলেরআত্মবিশ্বাস এখন এতটাই উঁচুতে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে শিবনারায়ণ চন্দরপল, সুলিমান বেন ও ডোয়াইন স্মিথকে উড়িয়ে এনেও কাল বসিয়ে রাখা হলো জয়ী দলকে ধরেরাখতে। কালকের পর আত্মবিশ্বাসের পারদ আরেকটু উঁচুতে ওঠারই কথা! চার ম্যাচেরতিনটিতেই হারল চিটাগং কিংস। ম্যাচ শেষে মাহমুদউল্লাহ স্বীকার করলেন, ঘরেরমাঠে উত্সবমুখর দর্শকের সামনে এই হারটা একটু বেশিই পোড়াচ্ছে। এমনিতেস্থিতধী মাহমুদউল্লাহ মানসিক যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে সংবাদ সম্মেলনেখানিকটা মেজাজও হারালেন।
নানা রঙের দর্শকে এমএ আজিজ আসলেই ছিল রঙেরমেলা। বিপিএল সদস্যসচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিকের দাবি, টিকিট বিক্রি হয়েছেপ্রায় তিরিশ হাজার। বাড়তি রং ছড়ানো শুরু করেছিল চিটাগংয়ের পারফরম্যান্স।আগের ম্যাচগুলোয় চিটাগং কিংসের মূল সমস্যা ছিল ব্যাটিং। কিন্তু আগের তিনম্যাচে ৯৭, ১৩২/৫ ও ১২৯/৭ রান করা দলকে কাল ১৭২ রানের মোটামুটি বড় পুঁজিএনে দিয়েছিলেন ব্যাটসম্যানরা। ৫৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বোলিংয়ের শুরুটাও ছিলদারুণ। মনে হচ্ছিল, অনায়াস জয় দিয়েই বুঝি চট্টগ্রাম পর্ব শুরু করবে ঘরেরদল। কিন্তু নবী-চিগুম্বুরা-নাজমুলদের ব্যাটে শেষ হাসি সিলেটেরই। শেষ ওভারেপ্রয়োজন ছিল ৮, রুবেলের প্রথম বলেই লংঅন সীমানায় আছড়ে ফেললেন চিগুম্বুরা।দর্শকের সেই দীর্ঘশ্বাসে যেন ছিল সব হারিয়ে ফেলার ঘোষণা!
রান তাড়ায়প্রথম ওভারেই হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে হারায় সিলেট মিড অনে।মমিনুল-মুশফিকরাও ফেরেন দ্রুত। বিরুদ্ধ স্রোতেও রানের চাকাটা সচল রেখেছিলেনপল স্টার্লিং। তবে ২৫ বলে ৩৮ করে স্টার্লিং রানআউট হলে মনে হচ্ছিল দিনটিবুঝি চিটাগংয়েরই। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝির রানআউটে নবী দমবেন, উল্টো অদম্যআফগান মানসিকতায় জেগে উঠলেন। ওই ওভারেই এনামুল জুনিয়রকে মারলেন ২টি চার।পরের ওভারে রবি বোপারাকে ২টি চার মারলেন নাজমুল মিলন। আরাফাত সানির একওভারে দুটি ছয়ে নবী নিলেন ১৮। ম্যাচের গতিপথ সেই যে বদলে গেল সেটির আরনাগাল পেল না চিটাগং। কেভন কুপার নবী (২৬ বলে ৪৩) ও নাজমুলকে (২৩ বলে ৩২)ফেরালেও ১৭ বলে ৩১ করে বাকি কাজটুকু সেরেছেন চিগুম্বুরা।
ম্যাচসেরা নবীএর আগে অফ স্পিনেও খারাপ করেননি। শুরু ও শেষে বোলিং করেও ৪ ওভারে দিয়েছেনমাত্র ২৪ রান। তবে বোপারা (২৯ বলে ৩৪) ও নাঈম চিটাগংকে এনে দিয়েছিলেন দারুণসূচনা। ৯ ওভারে ৭৮ রানের জুটি গড়েন দুজন। আগের তিন ম্যাচে ৩৪ বলে ২৮ রানকরা নাঈম কাল খেলেছেন ক্যারিয়ার-সেরা ইনিংস (৫২ বলে ৭২)। এরপর রান করেছেনশুধু ডেসকাট (১০ বলে ২১)। তার পরও চিটাগং করেছিল ১৭২, মাহমুদউল্লাহ যেটাকেমনে করেছিলেন যথেষ্ট। কিন্তু সিলেট যে এখন অপ্রতিরোধ্য রথের যাত্রী!
নিউজরুম