বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক(২৭ জানুয়ারী): ১৯৯৪-৯৫ সালের কথা। ইন্দিরা রোডে দি সেইফওয়র্ক্স নামে একটি সফটওয়্যারপ্রতিষ্ঠানে মাঝেমধ্যেই ঢাউস আকারের একটি কম্পিউটার নিয়ে হাজির হতোগভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের এক ছাত্র। কোনো গেম বা মজার কোনো সফটওয়্যারনয়, সে আসত প্রোগ্রাম লেখার সফটওয়্যার কম্পিউটারে ভরে নিতে বা কোনো সমস্যানিয়ে কথা বলতে। কিশোর বয়সেই সে এক বাঘা কম্পিউটার প্রোগ্রামার। সেইস্কুলছাত্র ওমর আল জাবির এখন ব্রিটিশ টেলিকমের (বিটি)সফটওয়্যার-অ্যাজ-আ-সার্ভিসের (স্যাস) চিফ আর্কিটেক্ট। খুব রাশভারী পদ, কিন্তু ওমরের বয়স এখন মাত্র ৩১ বছর।
তিন বছর আগে ব্রিটিশ টেলিকমে যোগদিয়েছেন ওমর আল জাবির। এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিটি রিটেইলের মাধ্যমে বিটিইংল্যান্ডে ইন্টারনেট, টিভি, ফোন, সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা দেয়। এইসেবা দেওয়ার জন্য যত কম্পিউটার সিস্টেম রয়েছে সেগুলোর স্থাপত্যশৈলী তৈরি, দেখাশোনা, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ওমর আল জাবিরের ওপর।
নিজের কাজসম্পর্কে বলেন, ‘সফটওয়্যার আর্কিটেক্টরা সফটওয়্যারের প্রতিটি খুঁটিনাটিডিজাইন করে প্রোগ্রামার বা সফটওয়্যার নির্মাতাকে বলে দেয় কীভাবে সেটিবানিয়ে, পরীক্ষা করে গ্রাহককে দিতে হবে। আমার কাজ হচ্ছে, এই প্রতিষ্ঠানেরসফটওয়্যার আর্কিটেক্টদের প্রধান হিসেবে তাদের দলটাকে চালানো।’
২০০৮ সালেযুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশনা সংস্থা ও’র্যালি বিল্ডিং আ ওয়েব ২.০ পোর্টাল উইথএএসপি ডট নেট ৩.৫ নামে ওমরের লেখা বই প্রকাশ করে। এই বই পড়ে ব্রিটিশটেলিকমের একজন পরিচালক ওমরকে আমন্ত্রণ জানান কিছু সফটওয়্যার সিস্টেম তৈরিকরে দিতে। ওমর বলেন, ‘তিন মাসে একটি সিস্টেম তৈরি করে দিই, যার জন্য বিটিএকটি বিরাট কাজে জিতে যায়। তারপর আমাকে চিফ আর্কিটেক্ট বানানো হয়।’
বেশকয়েক বছর আগে ‘পেইজ ফ্লেক্স’ নামে একটা বিশেষ ওয়েবসাইট (যা স্টার্ট-আপ পেইজনামে পরিচিত) প্রযুক্তি দুনিয়ায় ঝড় তোলে। এর নির্মাতা ওমর আল জাবির।স্টার্ট-আপ পেইজ হচ্ছে একধরনের ওয়েবসাইট, যেখানে ব্যবহারকারী নিজেই ঠিক করেদিতে পারবেন কোন ওয়েবসাইট থেকে কী তথ্য নিয়ে এই সাইটের কোথায়, কখন, কীভাবেদেখাতে হবে। প্রতি ১০ মিনিট পর পর ব্যবহারকারীর ওয়েবসাইটকে হালনাগাদ তথ্যদিয়ে সাজিয়ে দেয় এই পেইজ ফ্লেক্স।
একজন জার্মান বিনিয়োগকারীর সহায়তায়২০০৫ সালে পেইজ ফ্লেক্স চালু করেন ওমর। বললেন, ‘২০০৬ সালে গুগল, ইয়াহুকেহারিয়ে দিয়ে এক নম্বর “স্টার্ট পেইজ” ওয়েবসাইটের পুরস্কার পাই আমরা। দুইবছরের মধ্যে আমরা প্রায় ২০ জন বাংলাদেশি, দুজন জার্মান ও পাঁচজন মার্কিননাগরিকের একটি কোম্পানিতে পরিণত হই। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত বিনিয়োগকারীপ্রতিষ্ঠান বেঞ্চমার্ক ক্যাপিটাল এতে ৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে।’ ২০০৮ সালেই-ইউনিভার্স এই সাইট কিনে নেয়। পরে নিউজ করপের কাছে এটি ৬৪ কোটি ডলারেবিক্রি করে ওই প্রতিষ্ঠান।
ওমর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (এআইইউবি) থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি নেন। এখনঅক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার প্রকৌশলে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ছেন।একই সঙ্গে ডিগ্রি নিচ্ছেন ইসলামি শিক্ষা বিষয়েও। তাঁর স্ত্রী সাকীও একজনতথ্যপ্রযুক্তিবিদ। তিনি সফটওয়্যারের মাননিয়ন্ত্রণ প্রকৌশলী হিসেবে কাজকরেন।
কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের শুরুটা নিয়ে ওমর আল জাবির বললেন, ‘তখনআমার বয়স ছিল নয় বছর। সে সময় মাসিক কম্পিউটার জগৎ পড়ে আমার মাথা ঘুরে যায়।তার পর থেকে কম্পিউটার নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি।’ ১০ বছর বয়সে বাংলাদেশেরপ্রথম প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় ছোটদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগীরপুরস্কার পান। এরপর নটর ডেম কলেজের বার্ষিক সফটওয়্যার মেলায় ওমরের তৈরিসফটওয়্যারগুলো পর পর তিন বছর প্রথম পুরস্কার পায়। সেই সময় সম্পূর্ণ বাংলায়চারটি সফটওয়্যার নিয়ে একটি সিডি বানিয়ে (অবসর সিডি) বিক্রি করেন ওমর, সেটাছিল তাঁর প্রথম ব্যবসা। মাত্র ১৫ বছর বয়সে প্রোগ্রামার হিসেবে ঢাকার একটিপ্রতিষ্ঠানে যোগ দেন।
তাঁর নিজের নয়টি ওপেন সোর্স প্রকল্পও আছে (www.omaralzabir.com)। ওমর বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিভার কোনো অভাব নেই। এতবাধা, এত সমস্যার পরও বাংলাদেশ থেকে যে বড় বড় সব সাফল্যের কথা শোনা যায়, তাঅবাক করার মতো। ব্যক্তিগতভাবে আমি চেষ্টা করি অন্য দেশে কাজ না পাঠিয়েবাংলাদেশে আউটসোর্সিংয়ের কাজ পাঠাতে। বাংলাদেশে কাজ করার নানা সমস্যা। তারপরও মানুষের চেষ্টার কোনো অভাব নেই।’
নিউজরুম