ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক(২৭ জানুয়ারী): বাংলাদেশের ওষুধশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের বিরাট বাজারে অবস্থান করেনিতে চায়। এ জন্য কঠোরভাবে গুণগত মান নিশ্চিত করতে এবং শীর্ষপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণেরসুযোগ করে দিতে হবে।
ঢাকায় রূপসী বাংলা হোটেলে গতকাল শনিবার দিনব্যাপীঅনুষ্ঠিত স্যামসন এইচ চৌধুরী স্মারক সম্মেলনের প্রথম কার্য-অধিবেশনে এইঅভিমত প্রকাশ করা হয়। এতে ওষুধশিল্পের বড় বড় উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী বক্তব্যদেন। ‘বাংলাদেশের ওষুধশিল্প ও বর্তমান প্রবণতা’ শীর্ষক দিনব্যাপী এইসম্মেলনে বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করা হয়।
স্কয়ারগ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীস্মরণে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সকালেআনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন অনিতা-স্যামসন ফাউন্ডেশন ও স্কয়ারফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং স্যামসন এইচ চৌধুরীরসহধর্মিণী অনিতা চৌধুরী।
প্রথম কার্য-অধিবেশন সঞ্চালনা করেন ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফরহাত আনোয়ার। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনসেপটা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব আবদুল মুক্তাদির। এতে তিনি বলেন, বর্তমানেবাংলাদেশের ওষুধশিল্প বার্ষিক গড়ে ১৫ শতাংশ হারে বিকশিত হচ্ছে। এই প্রবণতাঅব্যাহত থাকলে পাঁচ বছর পর অর্থাৎ ২০১৭ সালে দেশের ওষুধ খাতের বার্ষিকবিক্রয় ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ২০১২ সালে এটি ১০ হাজার ৬১০ কোটিটাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে।
মুক্তাদির বলেন, ‘বিশ্বে ওষুধের জন্য বার্ষিকব্যয় এখন ৯৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলার, যা ২০১৬ সালে এক লাখ ২০ হাজার কোটিডলারে উন্নীত হবে। অন্যদিকে উচ্চমানের ওষুধ প্রস্তুতকরণ, প্রয়োজনীয়প্রযুক্তি ও মানবসম্পদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প নিজেদের সক্ষমতাইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে। কাজেই বিশ্ববাজারে প্রবেশের যথেষ্ট সম্ভাবনাআমাদের রয়েছে।’
মুক্তাদির আরও বলেন, ‘কঠোরভাবে গুণগত মান বজায় রাখা এখনোএই শিল্পের জন্য একটি বড় বিষয়। স্থানীয় নিয়ন্ত্রকেরা গুণগত মান যাচাই করতেগেলে আমাদের দিক থেকে অনেক সময়ই যেভাবে আপত্তি উত্থাপন করা হয়, তা ঠিক নয়।গুণগত মান নিশ্চিত না হলে বিশ্ববাজারে অবস্থান করা যাবে না।’
মুক্তাদিরেরমতে, বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোকে, বিশেষত বড় কোম্পানিগুলোকে, দেশেরবাইরে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া উচিত, যেন তারা যৌথ উদ্যোগে উৎপাদনে যেতেপারে, অন্য ছোট কোম্পানি কিনে নিতে পারে ও নিজেদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানস্থাপন করতে পারে।
প্যানেল আলোচনায় ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি ওবেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশেরঅর্থনীতি ১০-১২ বছর ধরে গড়ে ৬ শতাংশ হারে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে।তাহলে ওষুধ শিল্প খাত কেন ১৫ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবে না।একদিকে আমাদের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, অন্যদিকে সরকার স্বাস্থ্যসেবাসম্প্রসারণে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ওষুধশিল্পের প্রয়োজনীয়অবকাঠামো দাঁড়িয়ে গেছে। তেমন কোনো তুলনামূলক সুবিধা না থাকার পরওপ্লাস্টিক-শিল্প বছরে ১০০ কোটি ডলার রপ্তানি দেখছে। তাহলে ওষুধশিল্প কেনপারবে না?’
সালমান রহমান আরও বলেন, ‘বিদেশে বিনিয়োগের জন্য এখনকেস-টু-কেস ভিত্তিতে অনুমোদনের নীতি আছে আর ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই সুযোগ আরওউন্মুক্ত করা হবে। তবে কিছুটা সময় লাগবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরগভর্নরের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।’
সালমান রহমান প্রস্তুতকৃত ওষুধের গুণগতমান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘সরকারের উচিত দ্রুতপরীক্ষাগার স্থাপন করা। আমরা চাই গুণগত মান বজায় রাখতে। একটা নেতিবাচক ঘটনাপুরো খাতে প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন হল-মার্কের ঘটনা গোটা আর্থিক খাতের ওপরপ্রভাব ফেলেছে।’
স্কয়ার ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এখন বিদেশে বিনিয়োগ করার সময় এসেছে। দেশের বাইরে আমরা অনেক ছোটকোম্পানি কিনে নিতে পারি, বাইরে কারখানা স্থাপন করতে পারি। এ জন্য সরকারেরদিক থেকে নীতি-সমর্থন প্রয়োজন।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে রেনাটা লিমিটেডেরব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ কায়সার কবির বলেন, ‘বিশ্ববাজারে অবস্থান করে নিতেহলে আমাদের গুণগত মানের দিকে অনেক বেশি জোর দিতে হবে। দেশে এখনো পেটেন্টআইন নেই। এটি দ্রুত করতে হবে।’
মুক্ত আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরনিউ জার্সি থেকে আগত বিশেষজ্ঞ সুগি এ চরাই বলেন, ‘ভারতের ওষুধশিল্পবাংলাদেশের চেয়ে অন্তত ১০ বছর এগিয়ে আছে। তবে তা রাতারাতি হয়নি। বাংলাদেশেরতাই ভারতের দিকে বেশি না তাকিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।কেননা কোরিয়ার ওষুধশিল্প বাংলাদেশের মতো অবস্থায় রয়েছে।’
সুগি আরও বলেন, ভারতে হাজার হাজার ওষুধ কোম্পানি থাকলেও মাত্র ১২-১৪টি বিশ্ববাজারেঅবস্থান করে নিয়েছে। এর পেছনে প্রতিষ্ঠানগুলোর নৈতিক ব্যবসা একটি বড় ভূমিকারেখেছে।
নিউজরুম