মুন্সীগঞ্জ (২৭জানুয়ারী) : অন্য এলাকায় হত্যার পর লাশ নিরাপদে ফেলে রেখে যেতে মুন্সীগঞ্জ জেলাকে ডাম্পিং স্পট হিসেবে বেছে নিয়েছে ঘাতকরা।
গত ২৫ মাসে মুন্সীগঞ্জের সীমানার ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশ এবং পদ্মা, মেঘনা ও ধলেশ্বরী নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এভাবে একের পর এক লাশ উদ্ধার হওয়ায় মুন্সীগঞ্জকে ডাম্পিং স্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলার পুলিশ প্রশাসন।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের রশুনিয়া এলাকা থেকে ২ জন ও শ্রীনগরের বাড়ৈইখালী-শীধরপুর সড়কের পাশ থেকে একজনের গুলিবিদ্ধ উদ্ধার করা হয়। এরা হলেন-ইব্রাহিম (২৫), কুদ্দুস মিয়া (৪০) ও মাসুদ (৩০)।
এদিকে, গত ২১ জানুয়ারি সকাল ৯টার দিকে সিরাজদিখানের তেলিপাড়া গ্রামের জমি থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক কিশোরীর (২২) লাশ উদ্ধার দিয়ে চলতি বছরে লাশ উদ্ধার শুরু হয়।
এর আগে ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী থেকে ৬ লাশ উদ্ধার হওয়ার পর দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠে। সেসময় থেকেই মুন্সীগঞ্জকে ডাম্পিং স্পট হিসেবে ব্যবহার করছে ঘাতকরা-এমন দাবি করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবিহত করেছিলেন জেলার প্রশাসন।
এদিকে, গত ২১ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সভাকে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায়ও অন্য এলাকায় হত্যার পর লাশ ফেলে রেখে যেতে ঘাতকরা মুন্সীগঞ্জকে ডাম্পিং স্পট হিসেবে ব্যবহার করার বিষয় আলোচিত হয়।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, ভৌগলিক কারণে ঢাকার কাছে এ জেলাকে ডাম্পিং স্পট হিসেবে বেছে নিয়েছে ঘাতকরা। একদিকে মুন্সীগঞ্জ জেলার সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ও পদ্মা, মেঘনা ও ধলেশ্বরী নদী থাকায় লাশ ফেলে যেতে নিরাপদ মনে করছে ঘাতকরা।
পুলিশ সূত্র জানায়, অন্য কোথাও হত্যার পর লাশ গাড়িতে করে এ দুটি মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জ সীমানায় ও আশপাশ এলাকায় চলন্ত অবস্থায় ফেলে দিয়ে নিরাপদে চলে যায় ঘাতকরা।
এছাড়া অনেক সময় মহাসড়ক ব্যবহার না করে ঘাতকরা হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়। পরে তা ভাসতে ভাসতে চলে আসে মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীতে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে ২২টি, ২০১২ সালে ৮টি ও চলতি বছরে ৪ লাশ নিয়ে গত ২৫ মাসে মোট ৩৪টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে একাধিক হত্যা মামলা দায়ের করা হলেও কোনো ঘটনারই রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। বেশিরভাগ মামলাই ঝুলে রয়েছে।
এছাড়া উদ্ধার হওয়া কিছু লাশের ঘটনায় হত্যা মামলার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় হতভাগ্য বেশ কয়েকজনের লাশ দাফন করা হয়েছে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে।
এ প্রসঙ্গে শ্রীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, উদ্ধার হওয়া যেসব লাশের শরীরে গুলি বা আঘাতের চিহ্ন থাকে-সেসব ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। আর যেসব লাশের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় না সেসব ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার শ্রীনগর বাড়ৈইখালী-শীধরপুর সড়কের পাশ থেকে মাসুদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হওয়ায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রশুনিয়া এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ ইব্রাহিম ও কুদ্দুসের লাশ উদ্ধার হওয়ায় সিরাজদিখান থানায়ও পৃথক ২টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নিউজরুম