ঢাকা (২৬জানুয়ারী): চলতি বছরের শীতকালীন অধিবেশনেও সংসদে যাচ্ছে না প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। রোববার বিকেলে এ অধিবেশন বসছে।
কিন্তু সংসদে না যাওযার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিরোধী দল। বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে নতুন কর্মসূচি নিয়ে ভাবছে তারা। এ প্রসঙ্গে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, “সংসদে যাওয়ার ব্যপারে নতুন করে কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি। আগে থেকে সংসদে না যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত ছিল সেটাই বহাল আছে।”
বস্তুত ২০১২ সালের শেষ দিকে দেশের চলমান নানা সংকট নিয়ে কথা বলতে সংসদে যাওয়ার কথা চিন্তা করলেও ২০১৩ সালের শুরুতে এসে সে চিন্তা থেকে সরে আসে বিএনপি। আপাতত কথা বলার জন্য রাজপথকেই বেচ্ছে নিচ্ছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “সংসদে গিয়ে আমাদের কোনো যৌক্তিক কথা তুলে ধরলেও এ সরকার তা আমলে নেবে না। তাই সংসদ ছেড়ে মাঠকেই বেশি উপযুক্ত মনে করছি।”
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার নামে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আদালতে চার্জ আমলে নেওয়া, দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে মামলা, রাজধানীতে অবরোধের সময় গাড়ি পোড়ানোর মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতার, সংসদে সরকার দলীয় সদস্যদের জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার নামে কুৎসা রটানোর প্রবণতা ইত্যাদি কারণে সংসদ থেকে সরে থাকার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিএনপি।
সূত্র আরও জানায়, বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক কথা বলায় মামলা দিয়ে হয়রানি করা, রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার কারণে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নামে আদালতে ও ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে কথা বলায় এমকে আনোয়ারের নামে সমন জারি ইত্যাদি কারণও বিএনপিকে সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রাখতে সহায়ক হয়েছে। এদিকে রোববার যখন শীতকালীন অধিবেশন বসছে, তখন বিরোধীদলীয় সাংসদরা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানবন্ধন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
এর আগে বছরের শুরুতে গত ২ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা উঠলে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, “এই অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারের চলমান আচরণে আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি। তবে উপযুক্ত সময় উপযুক্ত কর্মসূচি দেওয়া হবে। শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলেই আমরা সব জায়গায় বসতে রাজি।”
তিনি বলেন, “আমরা সংসদে যেতে চাই, কিন্তু সরকারই চায় না আমরা সংসদে যোগ দেই। আর সে কারণে তারা নেত্রীর নামে মামলা দিয়েছে, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলামকে অবৈধভাবে আটক রেখেছে। সরকার স্বেচ্ছায় আমাদের সংসদ থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।”
বিরোধীদলীয় চিফ হুইফ জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, “সরকার যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে না নেয়, তবে সংসদে যোগ দেওয়া নয়, প্রয়োজনে পদত্যাগ করা হবে।” তিনি আরো বলেন, সরকার বিরোধী দলীয় নেত্রীর নামে একের পর এক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দিচ্ছে। এর প্রধান কারণ, তারা চায় না আমরা সংসদ অধিবেশনে যোগ দেই।”
নিউজরুম